চার্বাক স্বভাববাদ কী

চার্বাক স্বভাববাদ কী
চার্বাক স্বভাববাদ কী?
চার্বাক স্বভাববাদ হল এমনই এক মতবাদ যা জড়বাদের স্বাভাবিক পরিণতিরূপে গণ্য। জড়বাদ অনুসারে দাবি করা হয় যে, ক্ষিতি, অপ্, তেজ এবং মরুৎ-এই চারটি জড়ভূতের সমন্বয়ে জগৎ সৃষ্ট হয়েছে। এর পিছনে কোনো অতীন্দ্রিয় ও অলৌকিক পরিকল্পনাকারী তথা ঈশ্বরের পরিকল্পনা নেই। এই চতুর্ভূতগুলি তাদের নিজ নিজ স্বভাব অনুযায়ী মিলিত হয়েই জগতের সৃষ্টি করেছে। চতুর্ভূতগুলির মিলন অবশ্যই আকস্মিক এবং এটাই হল এই চতুর্ভূতের স্বভাব। সেজন্যই চার্বাক জড়বাদের স্বাভাবিক পরিণতিই হল স্বভাববাদ বা প্রকৃতিবাদ।

চতুর্ভূতগুলির নিজস্ব স্বভাব

চার্বাক মতে, চতুর্ভূতগুলির প্রত্যেকটিরই এক- একটা নিজ নিজ স্বভাব আছে। যেমন-ক্ষিতির স্বভাব হল গন্ধ, জলের স্বভাব হল শীতলতা, অগ্নির স্বভাব হল উয়তা এবং বায়ুর স্বভাব হল সমতাপীয়তা বা সমস্পর্শ। চতুর্ভূতগুলি তাদের স্বভাব অনুযায়ী পারস্পরিকভাবে মিলিত হয়ে জগৎ সৃষ্টি করেছে। এই সমস্ত স্বভাবগুলির পিছনে কোনো নিয়ন্ত্রক নেই। এদের স্বভাবসিদ্ধ ক্রিয়াই এগুলিকে প্রকাশ করে। চিনির মিষ্টতা, নিমের তিক্ততা যেমন স্বাভাবিক নিয়ম, তেমনি জড় উপাদানগুলির স্বভাবও স্বাভাবিক নিয়ম। পান, চুন, সুপারি ও খয়ের-এগুলির মিশ্রণের ফলে স্বাভাবিকভাবে যেমন লাল রঙের আবির্ভাব হয়, তেমনি জড়কণাগুলির মিলনের ফলে স্বাভাবিকভাবে জগতের সৃষ্টি হয়। এর পিছনে কোনো ঐশ্বরিক ভূমিকা নেই।

সমালোচনা

চার্বাকগণ যে চতুর্ভূতের স্বভাব অনুযায়ী জগতের সৃষ্টির কথা বলেছেন, সেই স্বভাবের প্রত্যক্ষগ্রাহ্যতা কিন্তু প্রমাণ করা যায় না। এগুলি হল মহাভূতগুলির অভ্যন্তরীণ গুণ। সেকারণেই এগুলি প্রত্যক্ষযোগ্য নয়। আরও উল্লেখ করা যায় যে, চার্বাক মতে চতুর্ভূতের স্বভাব হল খামখেয়ালিপূর্ণ। আর স্বভাবের খামখেয়ালি আচরণ যুক্তিহীনতাকেই সূচিত করে। সুতরাং চার্বাক স্বভাববাদ কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়।

Leave a Comment