![]() |
চিত্রকলাচর্চায় শিল্পাচার্য নন্দলাল বসুর স্থান নিরূপণ করো। |
শিল্পী ও আচার্য হিসেবে স্বাতন্ত্র্য
চিত্রশিল্পী অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সুযোগ্য শিষ্য ছিলেন ‘সহজ পাঠ’ বইটির অসামান্য অলংকরণের স্রষ্টা আচার্য নন্দলাল বসু। গুরুর চিত্রচর্চায় যেখানে ভারতের ধ্রুপদি ও পৌরাণিক অতীত সম্পর্কে ঝোঁক দেখা গিয়েছিল, ছাত্র সেখান থেকে বেরিয়ে এসে চারপাশের বহমান জীবনকে ছবির বিষয় হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে শান্তিনিকেতনের কলাভবনে যোগদানের পর মৌলিক রচনা, প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ ও পরম্পরার মিলনে তিনি নিজস্ব চিত্রশিক্ষার নীতিকে এক নতুন পথে পরিচালিত করতে চেয়েছিলেন।
অবদান ও কৃতিত্ব
শিল্পশিক্ষায় আউটডোর স্টাডির প্রচলন নন্দলালই প্রথম শুরু করেন। গুরু অবনীন্দ্রনাথের জলরঙের ওয়াশ পদ্ধতির ছবির পাশাপাশি তিনি শুরু করলেন প্রকৃতি পর্যবেক্ষণমূলক ছবি। বিশেষ করে শান্তিনিকেতনের দিগন্ত বিস্তৃত প্রান্তর, খোয়াই, মাঠে বিচরণরত মোষ, নারী-পুরুষ-শিশু, হাটযাত্রী পথিক ইত্যাদি একে একে তাঁর ছবির বিষয় হয়ে উঠল। নন্দলাল বসুর মধ্যে স্বদেশি ভাবনার যে স্ফুরণ ঘটেছিল তা বোঝা যায় ডান্ডি অভিযানে গান্ধি গ্রেপ্তারের পর তাঁর লাঠি হাতে চলমান ছবিটি আঁকার মধ্য দিয়ে। এ ছাড়া তিনি নেহরুর আবেদনে সংবিধানের অলংকরণ এবং ভারতরত্ন ও পদ্মশ্রীর মতো পুরস্কারের নকশাও এঁকেছিলেন। ১৯৩৭-এ কংগ্রেসের হরিপুরা সমাবেশের সব পোস্টার তিনি গান্ধিজির অনুরোধে এঁকে দিয়েছিলেন।
শিক্ষা ও উত্তরাধিকার
তাঁর বিখ্যাত ছবিগুলি হল সত্য, পার্থসারথি, হলকর্ষণ, রাঙামাটির পথ প্রভৃতি। তিনি কলাভবনের শিল্পচর্চায় এক নবদিগন্ত উন্মোচন করেন। শিক্ষক নন্দলাল বসু তাঁর ছাত্রদের সাধারণ মানুষের সঙ্গে সংযোগস্থাপন করে, জীবন সন্নিহিত চিত্রচর্চায় উদ্বুদ্ধ করেছিলেন।