![]() |
জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপট কী ছিল? জালিয়ানওয়ালাবাগের ঘটনার গুরুত্ব আলোচনা করো। |
জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপট
যুদ্ধোত্তর পরিস্থিতি: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে ভারতীয় সৈনিকদের বেকারত্ব, মুদ্রাস্ফীতি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ভারতীয়দের মনে অসন্তোষের জন্ম দেয়।
মন্টেগু-চেনসাফার্ড শাসনসংস্কার ও হতাশা: ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে প্রবর্তিত মন্টেগু-চেমসফোর্ড শাসনসংস্কার আইন কংগ্রেস নেতাদের হতাশা বৃদ্ধি করে, কারণ এই আইনে কেন্দ্রে কোনো প্রকার দায়িত্বশীল সরকার প্রবর্তনের কথা বলা হয়নি। এ ছাড়া এই আইনে মুসলিমদের স্বতন্ত্র নির্বাচনের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় তা জাতীয় ঐক্যে ফাটল ধরায়।
রাওলাট আইন প্রবর্তন: ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে প্রবর্তিত রাওলাট আইনের প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় আইনসভার সদস্য মহম্মদ আলি জিন্নাহ, মদনমোহন মালব্য প্রমুখ নেতৃবৃন্দ পদত্যাগ করেন। কারণ, এই আইন সন্ত্রাস দমনের নামে ভারতে এক নতুন সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছিল। এর প্রতিবাদে বোম্বাইয়ে গান্ধিজি সত্যাগ্রহ সভা প্রতিষ্ঠা করেন।
ড. সৈফুদ্দিন কিচলু ও ড. সত্যপালের গ্রেফতার: ব্রিটিশ সরকার ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ১০ এপ্রিল অমৃতসরের দুই নেতা ড. সৈফুদ্দিন কিচলু ও ড. সত্যপালকে গ্রেফতার করলে জনতা উত্তেজিত হয়ে পড়ে। এর প্রতিবাদে ১৩ এপ্রিল জালিয়ানওয়ালাবাগে এক বাগানঘেরা অঞ্চলে নিরস্ত্র জনসমাবেশে বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ডায়ারের নির্দেশে ১৬০০ রাউন্ড গুলি চলে, যাতে বহু মানুষের মৃত্যু হয় -এটি প্রত্যক্ষভাবে জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের পটভূমি রচনায় সাহায্য করেছিল।
জালিয়ানওয়ালাবাগের ঘটনার গুরুত্ব
ব্রিটিশ সরকারের প্রকৃত স্বরূপ উন্মোচন: এই হত্যাকাণ্ড ভারতে ব্রিটিশ শাসনের পশুসুলভ চরিত্রটি সমগ্র ভারতবাসীর কাছে স্পষ্ট করে দিয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঘৃণাভরে ব্রিটিশ সরকারের দেওয়া নাইট উপাধি ত্যাগ করেন। গান্ধিজি লেখেন, ‘এই শয়তান সরকারের সংশোধন অসম্ভব, একে ধ্বংস করতেই হবে।’
ভীতি: জালিয়ানওয়ালাবাগের নৃশংস হত্যাকাণ্ড ভারতীয় রাজনীতিবিদদের মনে গভীর ভয়ভীতির সৃষ্টি করে। এর ফলে ভারতব্যাপী ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের গতি হ্রাস পায়।
ব্রিটিশ সরকারের বোধোদয়: ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রসচিব চার্চিল জালিয়ানওয়ালাবাগের ঘটনাকে ‘দানবীয়’ বলে অভিহিত করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে হান্টার তদন্ত কমিশন গঠিত হয়।
রাওলাট সত্যাগ্রহ প্রত্যাহার: রাওলাট আইনের প্রতিবাদে গান্ধিজি যে সত্যাগ্রহের কর্মসূচি নিয়েছিলেন তাতে হিংসার প্রবেশ হচ্ছে দেখে তিনি মর্মাহত হন। এই কারণে রাওলাট সত্যাগ্রহের কর্মসূচিকে তিনি হিমালয় সদৃশ প্রমাদ (Himalayan blunder) বলে অভিহিত করেন এবং ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন।
অসহযোগ আন্দোলনের প্রেক্ষাপট নির্মাণ: এই নারকীয় ঘটনার কিছুদিনের মধ্যে গান্ধিজির নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়- যে আন্দোলনের প্রধান দাবি ছিল এই নৃশংস ঘটনার অন্যায়ের সুবিচার করা।