![]() |
টীকা লেখো-নানক |
ভারতের ধর্মীয় ইতিহাসে ভক্তি আন্দোলন এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। সপ্তদশ শতাব্দীর পূর্বার্ধে উত্তর ভারতে এই আন্দোলনের সূচনা হয়। এই আন্দোলনের মূল ভাবধারা ছিল ঈশ্বরের প্রতি একান্ত ভক্তি ও নিষ্ঠার মাধ্যমে মুক্তিলাভ। ভক্তি আন্দোলনের প্রসারে গুরু নানকের অবদান ছিল অপরিসীম।
এক ঈশ্বরের উপাসনা
গুরু নানক এক ঈশ্বরের উপাসনার ওপর জোর দিয়েছিলেন। তিনি বলতেন, “ঈশ্বর এক, তিনি সকলের পিতা।” তিনি সকল ধর্মীয় ভেদাভেদ দূর করে সকলকে ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
কর্মের গুরুত্ব
গুরু নানক কর্মের গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছিলেন। তিনি বলতেন, “কর্ম ছাড়া মুক্তি নেই।” তিনি মানুষকে সৎ ও ন্যায়পরায়ণ জীবনযাপন করার উপদেশ দিয়েছিলেন।
সামাজিক সম্প্রীতি
গুরু নানক সমাজে বিদ্যমান সামাজিক বৈষম্য ও অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি সকল মানুষের সমতার উপর জোড় দিয়েছিলেন।
গুরু নানকের অবদান
(i) ভক্তিমূলক গান: গুরু নানক ভক্তিমূলক গান রচনা করেছিলেন যা ‘শব্দ’ নামে পরিচিত। এই গানগুলি ‘গুরু গ্রন্থ সাহেব’-এ সংকলিত হয়েছে।
(ii) উদাসী যাত্রা: গুরু নানক বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করেছিলেন এবং মানুষকে শিক্ষা দিয়েছিলেন। এই ভ্রমণগুলি ‘উদাসী যাত্রা’ নামে পরিচিত।
(iii) শিখ ধর্মের প্রতিষ্ঠা: গুরু নানকের শিক্ষার ভিত্তিতে শিখ ধর্মের প্রতিষ্ঠা হয়।
উপসংহার
ভক্তি আন্দোলনের প্রসারে গুরু নানকের অবদান ছিল অপরিসীম। তিনি এক ঈশ্বরের উপাসনা, কর্মের গুরুত্ব ও সামাজিক সম্প্রীতির বার্তা প্রচার করেছিলেন। তার ভক্তিমূলক গান ও উদাসী যাত্রা ভক্তি আন্দোলনের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ঐতিহাসিক ড. রামচন্দ্র গুহ বলেছেন যে, “গুরু নানক ছিলেন ভক্তি আন্দোলনের একজন মহান নেতা। তাঁর শিক্ষা আজও মানুষের জন্য প্রাসঙ্গিক।” ড. বিপান চন্দ্রের মতে, “গুরু নানকের শিক্ষা সামাজিক সংস্কার ও ন্যায়বিচারের বার্তা বহন করে।”