ডাইনিবিদ্যা বা ‘witchcraft’ কী

ভূমিকা
মধ্যযুগে ইউরোপে ডাইনিবিদ্যা বা ডাকিনীবিদ্যা বা witchcraft বহুল প্রচলিত ছিল। অতিপ্রাকৃত শক্তির চর্চা ও কিছুটা জাদুবিদ্যা চর্চা ছিল এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। অতিপ্রাকৃতি বা অলৌকিক শক্তিকে আয়ত্তে আনার ভাবনা থেকেই ডাইনি বিদ্যার চর্চার শুরু।
(1) উৎপত্তি: ইংরেজি witch শব্দটি উদ্ভূত হয়েছে wieca শব্দ থেকে, যার অর্থ যে জ্ঞানী অথবা যে নিগূঢ় জ্ঞান অর্জন করেছে। উইকা বা ‘wieca’ শব্দটির অন্য অর্থ হল-প্রাচীন পেগান ধর্মের উপাসক নারী ও পুরুষ। এই পেগান ধর্মের একটি উপাসনার পদ্ধতি হল ‘witchcraft’ যা আসলে উপাসক নারীদের নৃত্য। পরবর্তীতে খ্রিস্টান ধর্ম ইউরোপে প্রধান ধর্মে পরিণত হলে এই পদ্ধতিকে ডাইনিবিদ্যা বলে চিহ্নিত করা হয়।
(2) মূল বৈশিষ্ট্যসমূহ: প্রকৃতির নানা শক্তির ব্যবহার, অতিপ্রাকৃত বা অবাস্তব বা অতিপ্রাকৃত শক্তি নিয়ে চর্চা ডাইনিবিদ্যা চর্চার মূল বৈশিষ্ট্য। অতিপ্রাকৃত শক্তি নিয়ে মানুষের চিরন্তন আগ্রহ, ভয়। এই অবাস্তব বা অতিপ্রাকৃত বিদ্যাচর্চাকারীদের ডাইনি বা witch বলে অভিহিত করা হয়। উইচ (witch) মানেই নারী, এমনটা প্রথমদিকে ছিল না, কিন্তু ক্রমশ নারীরাই এই চর্চায় অগ্রণী হন।
(3) ব্যাবহারিক দিক: উইকান নারীরা তন্ত্রমন্ত্র ও লতাপাতা, শিকড় ইত্যাদি দ্বারা নানান রোগ সারাতেন। এক্ষেত্রে তন্ত্রমন্ত্র বলতে আসলে সম্মোহন, টেলিপ্যাথি প্রভৃতি। তাঁরা ব্যবহার করতেন রোগী বা সমস্যাগ্রস্ত মানুষকে সারিয়ে তোলার স্বার্থে। বর্তমানে টেলিপ্যাথি, সম্মোহন, ফেইথহিলিং ইত্যাদি চিকিৎসাবিজ্ঞানে সাদরে গৃহীত হয়েছে যা মধ্যযুগীয় ইউরোপে ‘witch’-রা করে দেখিয়েছেন। ভেষজ, রাসায়নিক উপাদান দিয়ে ওষধি তৈরি করে তার দ্বারা জাদুর মতো মানুষের কষ্ট লাঘব করতেন। এটি আসলে প্রাক্-বিজ্ঞানের পর্যায়েই পড়ে।
মূল্যায়ন
খ্রিস্টান চার্চের কাছে পেগান ধর্মবিশ্বাসী উইকানদের যাবতীয় অভ্যাস ও চর্চা দোষনীয় গুপ্তবিদ্যা বলে গণ্য হয়। পঞ্চদশ শতক থেকে চার্চের নির্দেশে উইকানদের ডাইনি আখ্যা দিয়ে পুড়িয়ে মারা শুরু হয়। এটি witch hunt বা ডাইনি নিধন নামে ইতিহাসে কুখ্যাত। মধ্যযুগে ইউরোপে হাজার হাজার ডাইনি নিধন হয়েছে।
আরও পড়ুন – নুন কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর