তাওবাদ অথবা তাও জীবনচর্চার ধারণা ও বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী

তাওবাদ হল চিনের প্রাচীন একটি দর্শন। আজ থেকে প্রায় ২৫০০ বছর আগে লাওৎসি এই দর্শনের প্রবর্তন করেন। এই আধ্যাত্মিক ধারায় প্রকৃতি, স্বতঃস্ফূর্ততা এবং সহজ-সরল জীবনযাপনকে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
তাও জীবনচর্চার ধারণা
তাও জীবনচর্চার ধারণাটি নিম্নরূপ-
(1) উ-ওয়েই: ‘উ-ওয়েই’ হল তাওবাদের নৈতিক শক্তি। উ-ওয়েই-এর অর্থ হল, নিষ্কর্ম থাকা বা কাজ না করা। প্রাচীন তাওবাদী তত্ত্বানুযায়ী এটি জলের সঙ্গে সম্পর্কিত, যার প্রকৃতি হল বিনা চেষ্টায় প্রবাহিত হওয়া বা জোর করে কিছু পরিবর্তনের চেষ্টা না করা।
(2) জ্যো: তাওবাদে নমনীয়তার ধারণাটি ‘জ্যো’ নামে পরিচিত। জ্যো ধারণাটি শক্তির পরিবর্তে নমনীয়তা প্রদর্শনের উপর গুরুত্ব আরোপ করে।
(3) জ : তাও দর্শন অনুযায়ী ‘জ’ ধারণাটি হল, প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রেখে জীবনযাপনের নীতি।
(4) পু : তাও আদর্শে ‘পু’ অর্থাৎ, সরলতার ধারণা। ব্যক্তিজীবনের সরল বিষয়গুলির প্রতি মনোযোগ দেওয়ার নীতিকে পু বলা হয়।
বৈশিষ্ট্য
তাওবাদী জীবনচর্চার কয়েকটি বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ-
(1) প্রকৃতির সঙ্গে মিলিত জীবনযাপন: তাওবাদী জীবনচর্চায় প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রেখে জীবনযাপন করার কথা বলা হয়। কারণ প্রকৃতি নিজেই যেহেতু পরিপূর্ণ, কাজেই প্রকৃতির সঙ্গে মিলিত জীবনযাপন করলে প্রকৃত সুখলাভ সম্ভব।
(2) সরলতা ও বিনয়: তাওবাদী জীবনধারায় সরলতা ও বিনয়ের উপর গুরুত্ব আরোপিত হয়েছে। এই সারল্যই পারে ব্যক্তির আত্মগরিমাকে নিয়ন্ত্রণ এবং প্রকৃত অন্তর্দৃষ্টি উন্মীলিত করতে।
(3) ধ্যান ও শারীরিক অনুশীলন: তাওবাদে মানসিক এবং শারীরিক সুস্থতার জন্য ধ্যান ও শারীরিক অনুশীলনের কথা বলা হয়েছে। এর মাধ্যমে মানুষ তার জীবনীশক্তি এবং মানসিক শান্তির খোঁজ পায়।
(4) মৃত্যু সম্পর্কিত ধারণা: তাওবাদে জীবন ও মৃত্যু হল একটি প্রাকৃতিক চক্র। মৃত্যু হল জীবনেরই অংশ। এটি স্বাভাবিক ও অবশ্যম্ভাবী, তাই এ নিয়ে উদ্বেগের প্রয়োজন নেই।
(5) দেবতার আরাধনা: তাওবাদীরা প্রাচীন চিনা সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত দেবদেবীর আরাধনা করেন এবং আধ্যাত্মিক রীতিনীতিও মান্য করে থাকেন।
উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলি তাওবাদী জীবনধারার মূলনীতি হিসেবে পরিগণিত হয়। জোর করে কিছু পরিবর্তন না করে সরল স্বাভাবিক পথে জীবনযাপনের মধ্যেই তাওবাদের সার্থকতা পরিলক্ষিত হয়েছে।
আরও পড়ুন – নুন কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর