তোমার চোখে তোমার দেশ রচনা

তোমার চোখে তোমার দেশ রচনা
তোমার চোখে তোমার দেশ রচনা

ভূমিকা

‘ধনধান্যে পুষ্পে ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা/তাহার মাঝে আছে দেশ এক সকল দেশের সেরা/….সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি’। এই জন্মভূমি, আমার দেশ, আমার স্বপ্ন, আমার বাস্তব। স্বপ্ন ও বাস্তবের মিলনে আমার দেশ আমার চোখে মহৎ-অন্য দেশের সঙ্গে তার তুলনাই চলে না। কেননা অন্য দেশে হয়ত অনেক উপাদান আছে, আছে প্রাচুর্য কিন্তু আমার দেশ আমার কাছে এতটাই প্রিয় যে তাকে স্বর্গ বলেই মনে হয়। এক স্বর্গীয় শান্তিসুধা আমাকে দেয় বলেই আমার দেশ আমার কাছে প্রিয়।

দেখার স্বরূপ

আমার চোখে দেশ মানে কোনো মূর্তি বা অ্যাবস্ট্রাক্ট পদার্থ নয়। দেশ মানেই দেশের মানুষ ও প্রকৃতি। তাই দেশের প্রকৃতি ও মানুষ এবং উভয়ের ঐকতান আমাকে আকৃষ্ট করে, মোহিত করে। দ্বিতীয়ত, স্বামী বিবেকানন্দ লিখেছিলেন, ‘আমরা জন্ম থেকে দেশের জন্য বলিপ্রদত্ত।’ কারণ মানুষ যখন জননীর কোলে জন্ম- গ্রহণ করে তখন সে বাবা মা-র সন্তান। কিন্তু ভেবে দেখলে দেখা যায়, মানুষ কিন্তু ভূমিষ্ঠ হয় মাটিতে আর সে কারণেই একজন মানুষ যেমন বাবা ও মার সন্তান তেমনি সে মৃত্তিকা মায়ের সন্তান তথা দেশের সন্তান। তাই আমি আমার দেশকে মাতৃস্বরূপা মনে করি। মা যেমন সন্তানকে পালন করেন, বেড়ে উঠতে সাহায্য করেন, মাটির মা-ও তার আলো-বাতাস ও বাঁচার প্রয়োজনীয় উপাদান সরবরাহ করে আমাদের বেড়ে উঠতে সাহায্য করে। তৃতীয়ত, দেশ আমার কাছে এক প্রেরণাস্থল বা আদর্শস্থানীয়। সেজন্যই রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ‘ও আমার দেশের মাটি তোমার ‘পরে ঠেকাই মাথা।’ চতুর্থত, আমার দেশকে ভালবাসি বলেই স্বদেশ ও স্বজাতির প্রতি রয়েছে ঐকান্তিক আগ্রহ, রয়েছে স্বদেশের গৌরবে গৌরববোধ ও স্বদেশের অধঃপতনে লজ্জা ও গ্লানিবোধ। দেশের গৌরবের পক্ষে কিম্বা দেশের সম্মানের প্রশ্নে ক্ষতিকর কোনো কাজকেই আমি সমর্থন না করে তার প্রতিবাদে মুখর হই। পঞ্চমত, দেশের ইতিহাস যেদিন থেকে আমি জেনেছি তখন থেকেই আমাদের চোখে স্বদেশ হয়ে রয়েছে গর্বের। কেননা, প্রাচীন যুগে সভ্যতার ঊষালগ্নে যাযাবর আর্যগোষ্ঠী যখন নদী-সভ্যতার জোয়ার-ভাটায় নোঙর ফেলল তখন থেকেই এই দেশের অস্তিত্ব প্রমাণিত। যাযাবর আর্যগোষ্ঠীর দেশ ছিল না, ছিল শুধু জাতি পরিচয়। যে পরিচয় থেকে তারা স্থায়ী বাসভূমির স্বপ্ন দেখে। তারপর আর্য ও অনার্যের মিলন ঘটল, স্থায়ী বসবাস শুরু হল। সেই থেকে দেশকে ভালোবাসা, দেশের প্রতি মমত্ববোধ জাগ্রত হল। ষষ্ঠত, দেশকে ভালোবেসে দেশবাসীর মধ্যে প্রকৃত স্বদেশপ্রেমের উন্মেষ ও বিকাশ ঘটিয়ে এক উন্নত দেশকে আমি ভবিষ্যতে দেখতে চাই। কারণ স্বদেশপ্রীতির অর্থ হচ্ছে দেশকে ভালোবাসা, দেশের কল্যাণসাধন করা, সমস্যা ও সংকট থেকে দেশকে রক্ষা করা। তাছাড়া দেশপ্রেমের উদ্ভব আত্মসম্ভ্রমবোধ থেকে। ক্ষুদ্র স্বার্থের গন্ডী অতিক্রম করে বৃহত্তর স্বার্থের দিকে যখন মন পরিচালিত হয়, যখন নিজের স্বার্থের চেয়ে বৃহত্তর কল্যাণবোধে মানুষ উদ্দীপ্ত হয় তখনই জ্বলে ওঠে দেশপ্রেমের প্রদীপ্ত শিখা। সেই শিখা আমি দেখতে চাই।

উপসংহার

দেশ আমার চোখে তাই উজ্জ্বল সম্ভাবনার ক্ষেত্র-যেখানে থাকবে না দারিদ্র্য, অশিক্ষা, অস্বাস্থ্য। কিন্তু বিশ্বায়নের পর বাইরের পৃথিবী যেভাবে আঙিনায় এসে উপস্থিত হয়েছে, তাতে দেশের সার্বভৌমত্ব ও দেশের প্রতি দেশবাসীর ভালোবাসা যেন অনেকটাই কৃত্রিমতা ও যান্ত্রিকতায় পর্যবসিত হচ্ছে। তবে দেশবাসীর মিলিত প্রচেষ্টায় রবীন্দ্রনাথের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলতে পারি ‘সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে,/সার্থক জনম মাগো তোমায় ভালোবেসে।’

Leave a Comment