দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য ভার্সাই সন্ধি কতটা দায়ী ছিল

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য ভার্সাই সন্ধি কতটা দায়ী ছিল
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য ভার্সাই সন্ধি কতটা দায়ী ছিল?

প্রথম বিশ্বযুদ্ধাবসানে মিত্রশক্তি প্যারিসের শান্তি সম্মেলনে (১৯১৯ খ্রি.) জার্মানির সঙ্গে ‘ভার্সাই সন্ধি’ স্বাক্ষর করে। এই সন্ধির কঠোরতা দেখে অনেকেই মনে করেন, ভার্সাই সন্ধির মধ্যেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বীজ নিহিত ছিল। এক্ষেত্রে জার্মানির প্রতিশোধস্পৃহাই যুদ্ধের ক্ষেত্র তৈরি করেছিল।

ভার্সাই চুক্তি ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমি

মিত্রশক্তির প্রতিশোধস্পৃহা : ভার্সাই চুক্তিতে মিত্রশক্তিবর্গের প্রতিশোধ স্পৃহা প্রতিফলিত হয়েছে। তাই জার্মান প্রতিনিধিদের মতামতের কোনো গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। জোরপূর্বক সন্ধি স্বাক্ষরে বাধ্য করা হয়েছিল।

চাপিয়ে দেওয়া চুক্তি: মিত্রশক্তি জার্মানিকে যুদ্ধাপরাধী সাব্যস্ত করে জার্মান প্রতিনিধিদের মতামতের গুরুত্ব না দিয়ে বিমান হানার ভয় দেখিয়ে তাদেরকে ভার্সাই চুক্তি স্বাক্ষরে বাধ্য করা হয়েছিল। এই চাপিয়ে দেওয়া চুক্তি জার্মানির কাছে জাতীয় অপমান হিসেবে বিবেচিত হয়।

অর্থনৈতিক শোষণ : এই চুক্তির দ্বারা জার্মানির ওপর বিরাট ক্ষতিপূরণের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। জার্মানির কয়লা অঞ্চল, বাণিজ্যপোত, উপনিবেশ সব কেড়ে নেওয়া হয়েছিল।

সামরিক শক্তি হ্রাস : সামরিক দিক দিয়ে জার্মানিকে পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছিল। জার্মানির সৈন্য সংখ্যা হ্রাস করা হয়, বাধ্যতামূলক সামরিক শিক্ষা নিষিদ্ধ হয়, ট্যাংক, বোমারু বিমান, কামান নির্মাণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।

জার্মানির প্রতিশোধস্পৃহা: এই একতরফা ও পক্ষপাতমূলক সন্ধিকে জার্মানি কোনোদিনই মেনে নিতে পারেনি। তাদের মধ্যে প্রতিশোধস্পৃহা জাগরিত হয় এবং জার্মানিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়।

হিটলারের আবির্ভাব : হিটলারের ক্ষমতালাভের (১৯৩৩ খ্রি.) পর তিনি ভার্সাই সন্ধিকে নাকচ করার দাবি তুলে ধরেন এবং জার্মান জাতির মনে বিস্তারধর্মী মনোভাব সৃষ্টি করেন। এই বিস্তারধর্মী অভিলাষে হিটলার পোল্যান্ড আক্রমণ করলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়।

তাই ভার্সাই সন্ধি স্বাক্ষর, জার্মান জাতির সার্বভৌমত্বে আঘাত এবং ভার্সাই চুক্তি নাকচ এর প্রতিশ্রুতি দিয়ে হিটলারের ক্ষমতা লাভ ও তাঁর কার্যনীতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে অনিবার্য করে তুলেছিল। তাই ভার্সাই সন্ধির মধ্যেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঘনীভূত হয়েছিল-এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

Leave a Comment