![]() |
নীতি-কর্তব্যবাদের সমালোচনাগুলি কী |
নীতি-কর্তব্যবাদের সমালোচনা
নীতি-কর্তব্যবাদের ক্ষেত্রে নৈতিক নিয়ম প্রসঙ্গে নীতি-কর্তব্যবাদীরা যে অভিমত পোষণ করেন, তা কিন্তু নির্দ্বিধায় গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, নীতি- কর্তব্যবাদের বিরুদ্ধে এই সমস্ত অভিযোগ উত্থাপিত হয়ে থাকে।
[1] নৈতিক নিয়মের অবিরোধহীনতা
নৈতিক নিয়মের ক্ষেত্রে নীতিবিজ্ঞানী রস (Ross) যে অভিমত পোষণ করেছেন, নীতিবিজ্ঞানী ফ্রাঁকেনা (Frankena) কিন্তু তা গ্রহণ করতে পারেননি। রস আপাত কর্তব্যগুলিকে ব্যতিক্রমহীনরূপে উল্লেখ করলেও, সেগুলি কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ব্যতিক্রমহীন নয়। কারণ, অনেক সময় আপাত কর্তব্যের সঙ্গে বাস্তব কর্তব্যের বিরোধ দেখা যেতে পারে। আর রূপ বিরোধই প্রমাণ করে যে নৈতিক নিয়মগুলি বিরোধহীন নয়। সুতরাং বলা যায় যে, রসের আপাত কর্তব্য এবং বাস্তব কর্তব্যের পার্থক্য ফ্রাঁকেনার মতে গ্রহণযোগ্য নয়। অর্থাৎ নৈতিক নিয়মগুলির অবিরোধহীনতার বিষয়টিই এখানে প্রমাণিত হয়।
[2] অর্থহীনরূপে রসের স্বতঃসিদ্ধতা
নীতিবিজ্ঞানী রস যে আপাত কর্তব্যের কথা বলেছেন, তার প্রকৃত কোনো মানদণ্ডের উল্লেখ তিনি করতে পারেননি। এক্ষেত্রে তিনি যা বলতে চান, তা হল কর্তব্য বলতে বোঝায়- কৃতজ্ঞতা, ন্যায়পরায়ণতা এবং বিশ্বস্ততা প্রভৃতি বিষয়কে এবং সেগুলির ভিত্তিতেই মানুষ কর্তব্যকর্ম সম্পাদন করে। রস এগুলিকেই স্বতঃসিদ্ধরূপে উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন যে, এগুলির বিচারের জন্য আর অন্য কোনো মানদণ্ডের প্রয়োজন নেই। কিন্তু নীতিবিজ্ঞানী ফ্রাঁকেনা এরূপ অভিমতটিকে গ্রহণ করতে পারেননি। কারণ, অনেক নীতিবিজ্ঞানীই রসের অভিমত সম্পর্কে সংশয় প্রকাশ করেছেন এবং এটাই প্রমাণ করে যে, কর্তব্যের নৈতিক নিয়মগুলি স্বতঃসিদ্ধ নির্বিরোধ এবং যুক্তিযুক্ত কোনোটিই নয়। নৈতিক নিয়মগুলির স্বতঃসিদ্ধতা, নির্বিরোধিতা এবং যুক্তিযুক্ততা প্রভৃতি মানদণ্ড তাই অর্থহীনরূপে গণ্য।
[3] নৈতিক নিয়মের ব্যতিক্রমহীনতা
ফ্রাঁকেনা উল্লেখ করেছেন যে, নৈতিক নিয়মগুলিকে বিরোধহীন ও ব্যতিক্রমহীনরূপে একমাত্র তখনই উল্লেখ করা যায়, যখন নিয়মগুলির মধ্যে একপ্রকার ক্রমিক স্তরভেদ রচনা করা যায়। অর্থাৎ নিয়মগুলির স্তরভেদে কোন্টি আগে থাকে এবং কোন্টি পরে আসে- তা নির্ণয় করা যায়। নৈতিক নিয়মগুলির ক্ষেত্রে এরূপ স্তর রচনা করতে পারলে, একটির সঙ্গে আর-একটির বিরোধের বিষয়টি সমাপ্ত হতে পারে। কিন্তু রস এমন কেনো স্তরভেদ রচনা করতে পারেননি অথবা এমন কোনো স্তরভেদের নির্দেশও দিতে পারেননি। সুতরাং বলা যায় যে, নৈতিক নিয়মগুলির ব্যতিক্রমহীনতার বিষয়টিই প্রমাণিত হয়।
[4] মৌলনীতির অভাবে নিয়মগুলির পারস্পরিক বিরোধিতা
নীতিবিজ্ঞানী রস যে আপাত কর্তব্যের উল্লেখ করেছেন, তার পশ্চাতে যে-সমস্ত নিয়মকে উল্লেখ করা হয়, সেগুলি কিন্তু কোনো বিশেষ নিয়ম নয়, সেগুলি হল বহু নিয়মের এক সম্মিলিত রূপ। এক্ষেত্রে তাই একটিমাত্র কর্তব্য নিয়মের পরিবর্তে একাধিক নিয়ম থাকায়, সেগুলির মধ্যে বিরোধের সম্ভাবনাকে অস্বীকার করা যায় না। রসের অভিমতের ক্ষেত্রে এরূপ সম্ভাবনা থেকে যায়। সে কারণেই ফ্রাঁকেনা (Frankena) তাঁর ‘Ethics’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেনে যে, এই ধরনের নীতি-কর্তব্যবাদের পরিবর্তে আমাদের এমনই একটি মতবাদ খুঁজে বার করা উচিত, যেখানে একটি মাত্র মৌল নীতিকেই স্বীকার করা যায় এবং সমস্তরকম বিরোধের অবসান হতে পারে। সুতরাং বলা যায় যে, মৌলনীতির অভাবে নিয়মগুলির মধ্যে পারস্পরিক বিরোধিতা পরিলক্ষিত হয়।