নৈতিক বিচারের প্রকৃত বিষয় কী তা আলোচনা করো

নৈতিক বিচারের প্রকৃত বিষয় কী তা আলোচনা করো – আজকের পর্বে নৈতিক বিচারের প্রকৃত বিষয় কী তা আলোচনা করা হল।

নৈতিক বিচারের প্রকৃত বিষয় কী তা আলোচনা করো

নৈতিক বিচারের প্রকৃত বিষয় কী তা আলোচনা করো
নৈতিক বিচারের প্রকৃত বিষয় কী তা আলোচনা করো।

নৈতিক বিচারের প্রকৃত বিষয়

নৈতিক বিচারের ক্ষেত্রে যে প্রশ্নটি সংগতভাবেই উঠে আসে, সেটি হল- নৈতিক বিচারের প্রকৃত বিষয় কোন্টি? অর্থাৎ উদ্দেশ্য কি নৈতিক বিচারের বিষয় হতে পারে? অথবা, অভিপ্রায় কি নৈতিক বিচারের বিষয়রূপে গণ্য? অথবা এগুলির সঙ্গে ফলাফল কি নৈতিক বিচারের বিষয়রূপে গ্রাহ্য হতে পারে? এই তিনটি সম্ভাব্য বিষয়কে সামনে রেখেই আমাদের স্থির করা উচিত যে, নৈতিক বিচারের প্রকৃত বিষয় কোন্টি?

নৈতিক বিচারের বিষয়বস্তুতে ‘উদ্দেশ্য’

বুদ্ধিবাদী ও সংজ্ঞাবাদী দার্শনিকগণ কিন্তু ফলাফলের ওপর গুরুত্ব না দিয়ে উদ্দেশ্যকেই নৈতিক বিচারের বিষয়বস্তুরূপে উল্লেখ করেছেন। বাটলার (Butler) এবং মার্টিনিউ (Martineu) প্রমুখ দার্শনিকগণ নৈতিক বিচারের ক্ষেত্রে ফলাফলের পরিবর্তে উদ্দেশ্য (Motive)-কেই নৈতিক বিচারের বিষয়বস্তু বলেছেন। অর্থাৎ, তাঁরা যা বলতে চান তা হল, কোনো কর্মের উদ্দেশ্য যদি ভালো বা কল্যাণকর হয়, তবে সেই কর্মটি নৈতিকরূপে গণ্য হয়। অপরদিকে, উদ্দেশ্য যদি মন্দ বা অকল্যাণকর হয়, তবে তা মন্দ তথা অনৈতিকরূপে গ্রাহ্য হয়। সুতরাং, বলা যায় যে একমাত্র উদ্দেশ্যই হল আমাদের সমস্ত প্রকার নৈতিক কর্মের নিয়ামক।

নৈতিক বিচারের বিষয়বস্তুতে উদ্দেশ্যর স্বীকৃতিতে অসুবিধা

নৈতিক বিচারের ক্ষেত্রে উদ্দেশ্যর স্বীকৃতিতে কিছু অসুবিধা দেখা যায়। সেই কারণেই অনেক নীতিতাত্ত্বিকই উদ্দেশ্যকে নৈতিক বিচারের বিষয়বস্তুরূপে স্বীকার করেন না। তাঁরা বলেন, কোনো ব্যক্তির পক্ষে তার পরিবারকে প্রতিপালন করা অবশ্যই এক নৈতিক কর্তব্য। এরূপ কর্তব্যের ক্ষেত্রে উদ্দেশ্যটি অবশ্যই সরূপে গণ্য। কিন্তু সেই উদ্দেশ্যকে পূর্ণতা দেওয়ার জন্য যদি ব্যক্তিটি কোনো অসৎ উপায়ে অর্থ উপার্জন করে পরিবার প্রতিপালন করে, তবে তাকে কখনোই উচিত বা নৈতিক কর্ম বলা যায় না। কারণ, এক্ষেত্রে সৎ উদ্দেশ্য অসৎ উপায়কে পরিশুদ্ধি করে (The end justifies the means)। এরূপ বিষয়টি কিন্তু কখনোই নৈতিকভাবে সমর্থনযোগ্য নয়।

নৈতিক বিচারের বিষয়বস্তুতে ‘অভিপ্রায়’

দেখা যায় যে, কেবলমাত্র উদ্দেশ্যকেই নৈতিক বিচারের বিষয়বস্তুরূপে গণ্য করা ঠিক নয়। আবার শুধুমাত্র ফলাফলকেও নৈতিক বিচারের বিষয়বস্তুর মর্যাদা দেওয়া যায় না। উদ্দেশ্যর সঙ্গে তাই উপায় (Means)-কেও অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। আর উদ্দেশ্যের সঙ্গে যখন উপায় যুক্ত হয়, তখন তা পরিগণিত হয় অভিপ্রায় (Intention) রূপে। কারণ, অভিপ্রায়ের মধ্যে থাকে কাম্য বা লক্ষ্যবস্তুর ধারণা, যাকে বলা হয় উদ্দেশ্য (Motive)। আর থাকে লক্ষ্য লাভের উপায় (Means) এবং তার ফলাফল (end)।

সিদ্ধান্ত

সুতরাং, বলা যায় যে শুধুমাত্র উদ্দেশ্য নয়, অথবা শুধুমাত্র ফলাফল নয়, নৈতিক বিচারের প্রকৃত বিষয় হয় অভিপ্রায় (Intention)। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তাই বলা যায় যে, কোনো কর্মের উদ্দেশ্য এবং সেই উদ্দেশ্য সাধনের উপায় ও তার ফলাফল যদি সরূপে গণ্য হয়, তবে কর্মটি নৈতিকরূপে গণ্য হয়। বিপরীতভাবে বলা যায় যে, উদ্দেশ্য, উপায় এবং ফলাফল সবই যদি অসৎ বা মন্দ হয়, তবে কর্মটি অনৈতিকরূপে স্বীকৃত হয়। আর এগুলির সমস্ত কিছুই অভিপ্রায়ের অন্তর্ভুক্ত বলে, একমাত্র অভিপ্রায়কেই নৈতিক বিচারের প্রকৃত বিষয়রূপে গণ্য করা উচিত।

Leave a Comment