নৈতিক বিচারের বিষয়বস্তু সম্পর্কে ম্যাকেঞ্জির অভিমত ব্যক্ত করো
![]() |
নৈতিক বিচারের বিষয়বস্তু সম্পর্কে ম্যাকেঞ্জির অভিমত ব্যক্ত করো। |
নৈতিক বিচারের বিষয়বস্তু সম্পর্কে ম্যাকেঞ্জির অভিমত
অধ্যাপক ম্যাকেঞ্জি (Mackenzie) তাঁর ‘A Manual of Ethics’ নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, নৈতিক বিচারের ক্ষেত্রে অভিপ্রায়-এর যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে, তা অস্বীকার করা যায় না। তা সত্ত্বেও তিনি মনে করেন যে, নৈতিক বিচারের প্রকৃত বিষয় হল ব্যক্তির চরিত্র (Individual Character)। কারণ বলা যায় যে, অভিপ্রায়ের মধ্য দিয়েই প্রকাশিত হয় ব্যক্তির চরিত্র। এ সম্পর্কে তাঁর যুক্তি এই যে, আমরা যখন কোনো ব্যক্তির কর্মের নৈতিক চরিত্র বিচার করি, তখন সেই কর্মটি ব্যক্তির চরিত্রের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে। কোনো কর্মকে তাই ব্যক্তির চরিত্রের সঙ্গে সম্পর্কহীনরূপে গণ্য করা যায় না। অধ্যাপক ম্যাকেঞ্জি তাই অত্যন্ত জোরের সঙ্গে দাবি করেন যে, নৈতিক বিচারের গতিপ্রকৃতি লক্ষ করেই বলা যায় যে, নৈতিক বিচারের প্রকৃত বিষয় হল ব্যক্তির অখণ্ড চরিত্র। কারণ, কোনো ব্যক্তি যখন কোনো কাজ সম্পাদন করে, তখন সেই ব্যক্তি মানুষ হিসেবে ঠিক কেমন, এরূপ বিষয়টিকে নির্ণয় করাই হল নৈতিক বিচারের আদর্শ। তিনি তাই তাঁর ‘A Manual of Ethics’-এ বলেছেন, যা করা হয় তার ওপর আমরা নৈতিক বিচার করি না, কিন্তু যে ব্যক্তি করে তার ওপরই আমরা নৈতিক বিচার করি (It is never simply on a thing done, but always on a person doing, that we pass moral judgement)। ম্যাকেঞ্জিকে অনুসরণ করে তাই বলা যায় যে, নৈতিক বিচারের প্রকৃত বিষয় হল ব্যক্তির চরিত্র।
সিদ্ধান্ত
ম্যাকেঞ্জি অভিমতকে স্বীকার করে নিলে, এটা স্বীকার করে নিতে হয় যে, ব্যক্তির চরিত্র অনুযায়ী তার অভিপ্রায় প্রতিফলিত হয়। অর্থাৎ, সৎ চরিত্রের ব্যক্তির অভিপ্রায় সবসময়েই সরূপে এবং অসৎ চরিত্রের ব্যক্তির অভিপ্রায় সবসময়ই অসৎরূপে গণ্য হওয়া উচিত। কিন্তু, বাস্তবে এরূপ বিষয়টি পরিদৃশ্য নাও হতে পারে। কারণ, আমাদের দৈনন্দিন বাস্তব জীবনের কঠোর পরিস্থিতিতে দেখা যায় যে সৎ চরিত্রের ব্যক্তির অভিপ্রায় কখনো- কখনো মন্দও হতে পারে। আবার ঠিক বিপরীতভাবেও বলা যায় যে, অসৎ চরিত্রের ব্যক্তির অভিপ্রায় কখনো-কখনো সৎ হতে পারে। অর্থাৎ, কখনো- কখনো সৎ চরিত্রের ব্যক্তি মন্দ অভিপ্রায় দ্বারা এবং অসৎ চরিত্রের ব্যক্তি ভালো অভিপ্রায় দ্বারাও পরিচালিত হয়ে থাকেন। এটাই যদি বাস্তবসম্মতভাবে সত্য হয়, তাহলে সিদ্ধান্তগতভাবে এরূপ বিষয়টিকে স্বীকার করে নেওয়া উচিত যে, নৈতিক বিচারের বিষয়বস্তুরূপে ব্যক্তির চরিত্রকে স্বীকার না করে তার অভিপ্রায়কেই স্বীকার করা সংগত। সুতরাং সামগ্রিক আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত করা যায় যে, আমাদের কৃতকর্মের ফলাফল নয়, কৃতকর্মের উদ্দেশ্য নয়, ব্যক্তির চরিত্র নয়, একমাত্র অভিপ্রায়ই হল নৈতিক বিচারের প্রকৃত বিষয়।