রচয়িতা ও মূলগ্রন্থ
আধুনিক বাংলা সাহিত্যের সুপ্রতিষ্ঠিত লেখক সৈয়দ মুজতবা আলীর অন্যতম সেরা রম্যরচনা ‘পঞ্চতন্ত্র’ গ্রন্থের প্রথম পর্ব থেকে ‘পঁচিশে বৈশাখ’ প্রবন্ধটি গৃহীত। এ ছাড়াও রচনাটি ‘সৈয়দ মুজতবা আলী রচনাবলী’-র প্রথম খণ্ডে স্থান পেয়েছে।
রম্যরচনার গুণ
প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলী হলেন বাংলা সাহিত্যে, কথা বলার সহজ, সরস, মজলিশি ভঙ্গিতে রম্যরচনার অন্যতম একজন রূপকার। ‘পঞ্চতন্ত্র’ প্রাবন্ধিকের রম্যরচনার গ্রন্থ। সুতরাং, সেই গ্রন্থে স্থান করে নেওয়া ‘পঁচিশে বৈশাখ’ রচনাটিতেও রম্যরচনার গুণগুলি প্রকাশ পেয়েছে। প্রবন্ধটি পড়ে আপাতভাবে হাস্যরসের উদ্রেক হয় না ঠিকই কিন্তু প্রবন্ধটিতে সাজানো রয়েছে রম্যরচনার বহুল রসদ।
প্রবন্ধ সাহিত্যের অন্যতম একটি শাখা হল- রম্যরচনা। এই ধরনের রচনাগুলিকে বাহ্যিকভাবে ভারী চালের বা সংবেদনশীল ভাবোদ্রেককারী বলে মনে না হলেও, এর ধার অতি তীক্ষ্ণ। সর্বোপরি, পাঠক রম্যরচনা পড়ার সময় অধিক গুরুতর কোনো বার্তা প্রত্যাশা করে না বলেই তা, তাকে আরও তীব্রভাবে প্রভাবিত করে যায়। ‘পঁচিশে বৈশাখ’ প্রবন্ধটিও সেইরূপ। প্রবন্ধটি, প্রাবন্ধিকের পাঠক-পাঠিকাদের উদ্দেশে, তাদেরকে অপরাধ না নেওয়ার অনুরোধ করে অত্যন্ত লঘুচালে শুরু হয়। এই প্রবন্ধ যে শেষাবধি রবীন্দ্রসংগীতের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণের মধ্যে উপনীত হবে তা বোঝার উপায় থাকে না। কিন্তু, প্রবন্ধটি যখন শেষ হয় তখন আমরা বুঝতে পারি যে রবীন্দ্রসংগীত বিষয়ক বহু গবেষণামূলক, গুরুগম্ভীর বিশ্লেষণ প্রাবন্ধিক আমাদের সামনে তুলে ধরলেন এবং আমরা অত্যন্ত স্বতঃস্ফূর্তভাবে তা পড়ে ফেললাম অথচ, সেই বিষয়ের ভার টের পেলাম না এতটুকুও, মুজতবা আলীর রম্যরচনার এই গুণ। তা সাবলীলভাবে আমাদের বৌদ্ধিক চেতনার উদ্রেক ঘটিয়ে আবার অতি সাধারণভাবেই শেষ হয়ে যায় আর পাঠকের মনে স্ফুরিত হয় জ্ঞানের ভাণ্ডার। এই সকল বৈশিষ্ট্য সমৃদ্ধ হয়েই ‘পঁচিশে বৈশাখ’ রম্যরচনায় উত্তীর্ণ হয়েছে।