![]() |
বাংলার চিকিৎসাবিজ্ঞানে মহেন্দ্রলাল সরকারের অবদান আলোচনা করো। |
মহেন্দ্রলাল সরকারের মূল্যায়ন
মহেন্দ্রলাল সরকারের মূল্যায়ন করতে গেলে শিবনাথ শাস্ত্রী মশায়ের মন্তব্যটি স্মরণ না-করে পারা যায় না। তাঁর কথায়, বাংলা দেশকে যত লোক মানুষের সামনে উঁচু করে তুলে ধরেছেন এবং শিক্ষিত বাঙালিদের মনে মনুষ্যত্ব জাগিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অগ্রগণ্য ছিলেন মহেন্দ্রলাল সরকার। মহেন্দ্রলাল সরকারের মতো সত্যানুরাগ-সাহস-দৃঢ়তা এবং জ্ঞানানুরাগ সমগ্র বাংলা দেশেই অত্যন্ত বিরল।
অ্যালোপ্যাথি ও হোমিয়োপ্যাথি উভয় ক্ষেত্রেই পারদর্শী ও প্রবাদপ্রতিম চিকিৎসক
কলিকাতা মেডিকেল কলেজ থেকে ১৮৬১ ও ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে যথাক্রমে আই এম এস ও এম ডি ডিগ্রি লাভ করেন। হেয়ারের আদর্শে আদর্শায়িত মহেন্দ্রলাল এম ডি পাস করার পর শুধু অসাধারণ রোগনির্ণয়ের ক্ষমতাবলে খ্যাতির শিখরে উঠেছিলেন। সেসময়ে বিদ্যাসাগর মহাশয় তাঁর অত্যন্ত গুণগ্রাহী ছিলেন। রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের চিকিৎসার জন্য তাঁর শিষ্যরা মহেন্দ্রলাল সরকারের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। প্রথম জীবনে এই মানুষটি ‘অ্যানাটমি’ ও ‘ফিজিয়োলজি’-র সঙ্গে হোমিয়োপ্যাথির যোগসূত্র না-থাকার কথা তুলে এই চিকিৎসাপদ্ধতি সম্পর্কে অবিশ্বাস প্রকাশ করেছিলেন। তবে পরবর্তীতে বিদ্যাসাগর, লোকনাথ মৈত্র, রাজেন্দ্রলাল দত্ত ও বন্ধু কিশোরীচাঁদ মিত্রের অনুপ্রেরণায় নিজের চিকিৎসার ধারা পালটে নিজেকে বিশেষজ্ঞ হোমিয়োপ্যাথি চিকিৎসক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।
বিজ্ঞানচর্চায় অগ্রণী এবং ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অফ সায়েন্স’-এর প্রতিষ্ঠাতা
এহেন প্রথিতযশা ডাক্তারের অনন্য কীর্তি হল যাদবপুরে অবস্থিত ‘কালটিভেশন অফ সায়েন্স’। স্বয়ং আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় লিখে গেছেন যে, সেই সময়কার মেধাবী ছাত্রদের মনে বিজ্ঞানচর্চার স্পৃহা জাগিয়ে তোলার ক্ষেত্রে এঁর গুরুত্ব ছিল অপরিসীম।