বাংলার সংস্কৃতি প্রবন্ধ রচনা

বাংলার সংস্কৃতি প্রবন্ধ রচনা – 
 
তো চলুন আজকের মূল বিষয় বাংলার সংস্কৃতি প্রবন্ধ রচনা পড়ে নেওয়া যাক।

বাংলার সংস্কৃতি প্রবন্ধ রচনা

বাংলার সংস্কৃতি প্রবন্ধ রচনা
বাংলার সংস্কৃতি প্রবন্ধ রচনা
[ রচনা-সংকেত: ভূমিকা-সংস্কৃতি কী-বাংলা সংস্কৃতির উদ্ভব-বাংলার সংস্কৃতির বিকাশ-উপসংহার]

বাংলার সংস্কৃতি প্রবন্ধ রচনা

ভূমিকা

সমাজ, সাহিত্য, ভাষা, শিল্প, সংগীত, ঐতিহ্যের প্রতি অনুরাগ মানুষের আচার-আচরণ, রীতিনীতি, শিক্ষা সংস্কার, ধর্মাচরণ ইত্যাদির সামগ্রিক মেলবন্ধনে গড়ে ওঠা সংস্কৃতির বিকাশের ওপরে নির্ভর করেই গড়ে ওঠে যে-কোনো জাতির মেরুদণ্ড। বাংলার অধিবাসী বাঙালি জাতির মেরুদণ্ড, তার চারিত্রিক গঠন সেভাবেই দীর্ঘকালের অনুশীলনে সুদৃঢ় হয়েছে। এখনও হয়ে চলেছে। বাঙালি এবং বাংলার সংস্কৃতি তাই স্থবির নয়, তা বরং গতিশীল।

সংস্কৃতি কী

কালচার বা সংস্কৃতিকে বলা চলে যে-কোনো জাতির আচার-আচরণ, শিল্প-সাহিত্য-সংগীত-নৃত্য, সমাজ, ঐতিহ্যের প্রতি অনুরাগ, শিক্ষাদীক্ষা, মানসিকতা, সংস্কার, ধর্মাচরণ ইত্যাদির দীপ্তি তথা ওইসব জাতির মানুষদের জীবনের দীপ্ত প্রকাশ। এ সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘শেষের কবিতা’ উপন্যাসের চরিত্র অমিতের মুখে শোনা গিয়েছে- 
‘কমল হিরের পাথরটাকে বলে শিক্ষা; তার যে আলো ঠিকরে পড়ে,
তাকে বলে কালচার।’
 

বাংলার সংস্কৃতির উদ্ভব

আর্য জাতির মানুষরা ভারতে আসার আগে পূর্ব ভারতের সমভূমি ও অরণ্য অঞ্চলে বাস করত আদি-অস্ত্রাল গোষ্ঠীর মানুষরা। আর্যরা আসার পর দুই সংস্কৃতির মিলনে গড়ে ওঠে অন্য এক মিশ্রসংস্কৃতি। যেহেতু আদি-অস্ত্রালরা ছিল বাঙালিদের পূর্বপুরুষ, সেহেতু বলা চলে বাংলার সংস্কৃতির উদ্ভব হয়েছিল অনার্য, আদি-অস্ত্রাল এবং আর্য জাতির সংস্কৃতির মিশ্রণের ফলে।

বাংলার সংস্কৃতির বিকাশ

অনার্য (আদি-অস্ত্রাল) জাতি এবং আর্য জাতির মিশ্রণ থেকে শুরু করে বর্তমানকাল পর্যন্ত বাংলার সংস্কৃতির নানান পর্বে বিকাশ লাভ করেছে। যেমন-

(ক) আদি যুগে বাংলার সংস্কৃতি: বাঙালি জাতির উদ্ভবকালে অনার্য ও আর্যজাতির মেলবন্ধনের ফলে বাঙালির সামাজিক, আধ্যাত্মিক এবং চিন্তাজগতে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। পৌরাণিক ব্রাহ্মণ্য সংস্কারবাদ, বৌদ্ধ, জৈন সংস্কৃতি তাদের জীবনকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। এই ধারা দীর্ঘকাল চলার পর দ্বাদশ শতাব্দীতে তুর্কি আক্রমণ বাংলায় সংস্কৃতির আদি যুগের অবসান ঘটায়।

(খ) মধ্যযুগে বাংলার সংস্কৃতি: কবি জীবনানন্দ দাশ একদা বলেছিলেন- ‘সময় মুছিয়া ফেলে সব এসে।’ মধ্যযুগে বাঙালি জীবনে তেমনটাই ঘটেছিল। তুর্কি আক্রমণ যেমন বিপর্যয় এনে দিয়েছিল, তেমনি নতুন সংস্কৃতি গঠনেরও সহায়ক হয়েছিল। এই সময়ে সামাজিক ও ধর্মীয় ক্ষেত্রে বাংলায় উদারতা দেখা দেয়। অনার্য জাতির দেবদেবী উচ্চবর্ণের বাঙালিদের পূজনীয় হয়ে ওঠেন। ১৪৯৩ খ্রিস্টাব্দে হুসেনশাহি বংশ প্রতিষ্ঠিত হলে মঙ্গলকাব্য, বৈয়ব অনুবাদ সাহিত্য, শাক্তপদাবলি প্রভৃতি ক্ষেত্রে জোয়ার আসে। মুসলমান ও হিন্দু সংস্কৃতির মিশ্রণও ঘটে। চৈতন্যদেবের সম্প্রীতির জোয়ারে ভেসে যায় বাংলা। 

(গ) আধুনিক যুগে বাংলার সংস্কৃতি: অষ্টাদশ শতাব্দীতে ভারতবর্ষে ইউরোপীয় সংস্কৃতির আগমনকালকে আধুনিক যুগ ধরা যেতে পারে। বঙ্গসংস্কৃতিও আমূল বদলে যায়। মধ্যযুগীয় ধর্মভাবনার বদলে আমদানি ঘটে যুক্তিবাদী চিন্তাভাবনার। এই পর্বের প্রথম দিকে কলকাতাকে কেন্দ্র করে ‘বাবু’ সংস্কৃতিও গড়ে ওঠে। শিক্ষা, শিল্প, বিজ্ঞান, সাহিত্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে রামমোহন, বিদ্যাসাগর, মধুসূদন, রবীন্দ্রনাথ, প্রফুল্লচন্দ্র, জগদীশচন্দ্র প্রমুখ ব্যক্তিত্ব বাঙালি সংস্কৃতিতে নবজাগরণ আনেন। ধর্মের ক্ষেত্রে রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব ও বিবেকানন্দ প্রচার করেন সহিষ্কৃতার বাণী। বাঙালি সাদরে গ্রহণ করে সেই বাণী-

The only God, Whom I believe, is the sum total of all souls…

My God the miserable, my God the poor of all races.”

-Vivekananda

বাঙালিরা অবশ্য সেখানেই থেমে থাকেনি। ক্রমশ তারা পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ইংরেজদের কাছ থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে লড়াইয়ে নামে। এর পাশাপাশি লোকসংগীত, চলচ্চিত্র, লোকশিল্প, কুটিরশিল্প, চিত্রশিল্প প্রভৃতি ক্ষেত্রে বাংলায় সাংস্কৃতিক বান আসে।

(ঘ) সাম্প্রতিককালে বাংলার সংস্কৃতি: সাম্প্রতিককালে বাংলার সংস্কৃতি শহর ও গ্রামীণ এই দুই ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছে। বাংলা সংস্কৃতির জগতে কিছুটা অবক্ষয়ও দেখা দিয়েছে। পরিবর্তন এসেছে সংগীত, চলচ্চিত্র, সাহিত্য, নৃত্য, নাট্যাভিনয়, সংস্কার, রীতিনীতি সর্বত্রই।

উপসংহার

বাংলার সংস্কৃতি প্রথম থেকে ছিল মিশ্র প্রকৃতির। বর্তমানেও তাই। তবে দুঃখের কথা এই যে, বাংলার সংস্কৃতির পাশাপাশি অপসংস্কৃতি এখন বিশেষভাবে মাথাচাড়া দিয়েছে। মূলত যুবক শ্রেণির বাঙালিরা অনেকাংশে এই অপসংস্কৃতিতে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। তবে আশা করা যায় একদিন সুস্থ সংস্কৃতিই জয়লাভ করবে।

“যাহারা তোমায় বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো 
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছো ভালো?”
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
আপনি আমাদের একজন মূল্যবান পাঠক। বাংলার সংস্কৃতি প্রবন্ধ রচনা -এই বিষয়ে আমাদের লেখনী সম্পূর্ণ পড়ার জন্যে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না।

Leave a Comment