বাংলা চলচ্চিত্র ধারায় পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের অবদান আলোচনা করো

 

বাংলা চলচ্চিত্র ধারায় পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের অবদান আলোচনা করো
বাংলা চলচ্চিত্র ধারায় পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের অবদান আলোচনা করো।

ঋত্বিক ঘটকের আত্মপ্রকাশ

বাংলা চলচ্চিত্রে ঋত্বিক ঘটকের তৈরি করা ছবির সংখ্যা সীমিত। কিন্তু যে কয়েকটি ছবি তিনি সেলুলয়েডে ধরেছেন, তা বাংলা তথা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র জগতে চিরস্মরণীয় হয়ে আছে। পারিবারিক সাহিত্য পরিমন্ডলে বেড়ে ওঠা ঋত্বিক ১৯৪৩-এর দুর্ভিক্ষ ও ১৯৪৭-এর দেশভাগকে খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন। তাঁর মতে এই দেশভাগ ছিল বাঙালির চিরস্থায়ী ট্র্যাজেডি। এই যন্ত্রণায় তিনি নিজে যেমন আহত হয়েছিলেন, তেমনি তাঁর শিল্পকর্মের মধ্য দিয়ে দর্শককেও আলোড়িত করেছিলেন। চলচ্চিত্র জগতে বিমল রায়ের সহকারী হিসেবে তাঁর প্রবেশ।

তবে পরে তিনি এককভাবে চলচ্চিত্র পরিচালনায় হাত দেন। প্রচণ্ড আর্থিক দৈন্যকে অতিক্রম করে তাঁর কালজয়ী সমস্ত সৃষ্টি আজও বাঙালির রসাস্বাদনে পরিতৃপ্তি ঘটিয়ে চলেছে। সমকালে সেই স্বীকৃতি না-পেলেও বর্তমানে ঋত্বিকের সিনেমাগুলিকে নিয়ে চলচ্চিত্র বোদ্ধারা এখন নতুন করে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছেন।

ঋত্বিকের কালজয়ী চলচ্চিত্রসম্ভার

১৯৫২-তে নির্মিত ‘নাগরিক’ তাঁর তৈরি প্রথম ছবি হলেও সেসময় মুক্তি পায়নি। এরপর তাঁর তিনটি ছবি ‘মেঘে ঢাকা তারা’, ‘কোমল গান্ধার’ ও ‘সুবর্ণরেখা’ একে একে মুক্তি পায়। এদের একসঙ্গে ‘দেশভাগত্রয়ী’ বলা হয়। কারণ দেশভাগের জীবন ও যন্ত্রণাই এই ছবিগুলির মূল বিষয়। এ ছাড়া তিনি ১৯৫৮-তে ‘অযান্ত্রিক’ ও ‘বাড়ি থেকে পালিয়ে’, ১৯৭৩-এ ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ এবং ১৯৭৭-তে ‘যুক্তি তক্কো আর গপ্পো’-র মতো কালজয়ী সিনেমাগুলি বানান। সমালোচকদের মতে ‘অযান্ত্রিক’ তাঁর শ্রেষ্ঠ ছবি হলেও ‘যুক্তি তক্কো আর গপ্পো’-র মতো শিল্পিত রাজনৈতিক সিনেমা সারা পৃথিবীতে খুব বেশি তৈরি হয়নি। 

অবদান ও কৃতিত্ব

মনেপ্রাণে বামপন্থায় বিশ্বাসী ছিলেন বলেই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে শিল্পসৃষ্টি করতে চাইলেও, বামপন্থা এবং মানবতাকে কখনোই ঋত্বিক ত্যাগ করতে পারেননি। সেকালের সমালোচকেরা তাঁর সিনেমায় অতিনাটকীয়তা ও ভারসাম্যহীনতার প্রসঙ্গ তুললেও আজকের দর্শকের মতে তিনি সময়ের চেয়ে এগিয়ে। রবীন্দ্র অনুরাগী এই ব্যক্তিত্ব সিনেমায় দৃশ্যের সাহায্যে এমন কিছু কাব্যমুহূর্ত তৈরি করে গেছেন যা দর্শকদের আজও ভাবায়, নাড়িয়ে দেয়। এ ছাড়া তিনি একাধিক সম্পূর্ণ ও অসম্পূর্ণ তথ্যচিত্রও নির্মাণ করেছিলেন। সেইসঙ্গে পুণে ফিল্ম ইন্সটিটিউটে তাঁর স্বল্পকালীন অধ্যাপনা জীবনের এক আশ্চর্য কীর্তি হল কুমার শাহানি, মণি কাউল কিংবা জন আব্রাহামের মতো দিকপাল চলচ্চিত্র পরিচালকদের দীক্ষিত করে তোলা, যাঁরা পরবর্তীতে ভারতীয় সিনেমাকে নানাভাবে সমৃদ্ধ করেছেন।

Leave a Comment