বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে রামকিঙ্কর বেইজের অবদান সম্পর্কে আলোচনা করো

বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে রামকিঙ্কর বেইজের অবদান সম্পর্কে আলোচনা করো
বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে রামকিঙ্কর বেইজের অবদান সম্পর্কে আলোচনা করো।

আত্মপ্রকাশ

শিল্পাচার্য নন্দলাল বসুর সান্নিধ্যে ও সাহচর্যে প্রশিক্ষিত হয়ে যাঁরা ভারতীয় শিল্পচর্চাকে অসামান্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন, রামকিঙ্কর বেইজ তাঁদের মধ্যে অন্যতম। তাঁর সবচেয়ে বড়ো গুণ আধুনিক পাশ্চাত্য শিল্প অধ্যয়ন করে তিনি সেই শৈলীকে নিজের ভাস্কর্যে প্রয়োগ করেছিলেন। ‘প্রবাসী’ পত্রিকার সম্পাদক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় তাঁকে শান্তিনিকেতনে নিয়ে আসেন। তিনি অনন্য প্রতিভাবলে কলাভবনের ছাত্র হিসেবে শুরু করে সেখানকার ভাস্কর্য বিভাগের প্রধান পদ অলংকৃত করেছিলেন।

দক্ষতা ও স্বকীয়তার আশ্চর্য সংমিশ্রণ

রামকিঙ্করের শিল্পীসত্তার যথার্থ মুক্তি ঘটে শান্তিনিকেতনে। তিনি সিমেন্টের সঙ্গে কাঁকর-মাটি মিশিয়ে শান্তিনিকেতনের উন্মুক্ত প্রকৃতির কোলে অসাধারণ বিভিন্ন ভাস্কর্য নির্মাণ করেন। তাঁর ‘সুজাতা’ মূর্তি দেখে রবীন্দ্রনাথ তাঁকে ডেকে পাঠিয়ে আশ্রমের চারিদিকে আরও বড়ো বড়ো মূর্তি গড়ে বসিয়ে দেওয়ার কথা বলেন। এটি এমন এক স্বীকৃতি ও প্রাপ্তি যে এরপর তিনি আর কখনও পিছন ফিরে তাকাননি।

অবদান ও সিদ্ধি

প্রতিভাবান এই শিল্পী শুধু ভাস্কর্য নয়, একইসঙ্গে চিত্রশিল্পেরও চর্চা করেছেন। তিনি তেল রং ও জল রঙের বহু প্রকৃতিকেন্দ্রিক ছবি এঁকেছেন, যা ভারতীয় চিত্রকলায় অমূল্য সম্পদ হয়ে আছে। তাঁর বিখ্যাত ভাস্কর্যগুলি হল ‘মা ও ছেলে’, ‘মহাত্মা গান্ধি’, ‘সুজাতা’, ‘সাঁওতাল দম্পতি’ ইত্যাদি। দারিদ্র্য সত্ত্বেও ভাস্কর্যের মধ্যে স্বরূপতা ও বিমূর্ততার প্রাণবন্ত ছবিকে সারা বিশ্বের কাছে উপহার দিয়ে গেছেন এই সার্থক শিল্পী।

Leave a Comment