![]() |
বাঙালির কুস্তিচর্চার ইতিহাসের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। |
ঊনবিংশ ও বিংশ শতকের কুস্তিচর্চা এবং দেশাত্মবোধ
আমাদের মহাকাব্যে ‘কুস্তি’ মল্লযুদ্ধ নামে পরিচিত ছিল। কুস্তি বাংলার এক সুপ্রাচীন খেলা। বাঙালি সমাজে এর বিস্তার ইংরেজ শাসনের শেষলগ্ন থেকেই। বিপ্লবীদের শরীরচর্চার অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছিল কুস্তি। দেশাত্মবোধকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ‘অনুশীলন সমিতি’-তে বাঙালি বিপ্লবীরা শরীরচর্চা ও আত্মরক্ষার প্রয়োজনে নিয়মিত কুস্তিচর্চা করত। রবি ঠাকুরের জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতেও নিয়মিত কুস্তিচর্চার আখড়া বসত। পুরোনো কলকাতায় পাথুরিয়াঘাটার দেওয়ান নন্দলাল ঠাকুরের বাড়ির সামনের দালানেও চলত বালিকাদের মল্লযুদ্ধ। হেদুয়ার কাছে সিমলেপাড়ায় সিমলে ব্যায়াম সমিতিসহ বেশ কয়েকটি কুস্তির আখড়া গড়ে উঠেছিল। এ ছাড়া রাজা বৈদ্যনাথ রায় আর জমিদার শ্রীনাথবাবুর আখড়াতেও চলত অবিরাম কুস্তির কসরত।
আখড়া সংস্কৃতি: গোবর গুহ এবং বাঙালির কুস্তিচর্চার ঐতিহ্য
কুস্তির প্রচলনে বড়ো ভূমিকা নিয়েছিলেন। ঊনবিংশ বাংলায় কোচবিহারের মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণ ও মুর্শিদাবাদের নবাব শতাব্দীর মধ্যভাগে অম্বিকাচরণ বাংলায় প্রথম আখড়া চালু করেন এবং সেখানে নিয়মিত কুস্তিশিক্ষা দেওয়া হত। অম্বিকাচরণের ঠাকুরদা শিবচরণ ও পিতা অভয়াচরণও কুস্তির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। অম্বুবাবুর আখড়ার সুখ্যাতিতে বহু যুবক তাঁর কাছে শিক্ষা নিতে ভিড় করতেন। স্বামী বিবেকানন্দও মল্লবিদ্যায় তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর নাতি গোবর গুহ তথা যতীন্দ্রনাথ গুহ বহু দেশে কুস্তি প্রদর্শন করে বিজয়ী হন। তিনি ভারতীয় কুস্তির রীতিতে অনেক নতুন প্যাঁচের উদ্ভাবন করেন। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হল ধোঁকা, টিব্বি, গাধানেট, ঢাক, টাং, পাট, বোবাপাট, কুল্ল প্রভৃতি। ১৯১২-তে ইউরোপে অনুষ্ঠিত কুস্তিগিরদের লড়াইয়ে গোবর গুহ হেভিওয়েট বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের সঙ্গে লড়েন এবং প্রথম এশীয় হিসেবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের খেতাব পান। ১৯২১-এ প্রথম এশীয় ব্যক্তি হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত বিশ্ব লাইট হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়নশিপও তিনি জিতেছিলেন। বিশ্বের কুস্তি মানচিত্রে ভারতের জনপ্রিয়তা তাঁরই অবদান। তাঁর বিখ্যাত ছাত্ররা হলেন-ক্ষেত্রচরণ গুহ, স্বামী ব্রহ্মানন্দ, ফণীন্দ্রকৃয় গুপ্ত, যতীন্দ্রচরণ মুখার্জি (বাঘাযতীন) প্রমুখ।