![]() |
ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতে ইউরোপীয় উদ্যোগে শিল্পের বিকাশের বিবরণ দাও। |
ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতে ইউরোপীয় উদ্যোগে শিল্পের বিকাশ
পাটশিল্প: ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে জর্জ অকল্যান্ড নামে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একজন প্রাক্তন নৌ-কর্মচারী হুগলির রিষড়ায় সর্বপ্রথম পাটকল স্থাপন করেন। ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে গঙ্গানদীর দুই তীরবর্তী পাট শিল্পকেন্দ্রগুলি এতই প্রসিদ্ধি লাভ করে যে এই অঞ্চলটি বাংলার ডান্ডি নামে পরিচিত হয়। ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় ইন্ডিয়ান জুট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে পর্যন্ত পাটকলগুলিতে প্রায় ২ লক্ষেরও অধিক শ্রমিক নিযুক্ত ছিল। রেলপথ: রেলপথ ছিল বাণিজ্যিক পুঁজিলগ্নির সর্বাধিক লাভজনক ক্ষেত্র। ঊনবিংশ শতকের মধ্যভাগ থেকে বিংশ শতকের সূচনা পর্যন্ত ভারতে প্রায় ২৫ হাজার মাইল রেলপথ তৈরি হয়।
বাগিচা শিল্প:
- চা : ১৮২৩ খ্রিস্টাব্দে ভারতে চা-গাছের আবিষ্কার করেন রবার্ট ব্রুস নামে জনৈক ইংরেজ। বাংলা, আসাম, তরাই, নীলগিরি হয়ে ওঠে চা উৎপাদনের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র।
- কফি: ১৮২৩ খ্রিস্টাব্দে ইউরোপীয় উদ্যোগে বাংলায় প্রথম কফি চাষ করা হয়, যা পরবর্তীতে দক্ষিণ ভারতের নীলগিরি ও মহীশূরে স্থানান্তরিত হয়।
- আখ বা চিনি: ভারতে প্রথম চিনিকল স্থাপিত হয় ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে। ১৯৩০-এর দশকে সংরক্ষণ নীতির ফলে এই শিল্প আরও প্রসিদ্ধি লাভ করেছিল।
- নীল: বাংলা ও বিহার ছিল নীলচাষে সর্বাধিক অগ্রগণ্য। তবে ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দে কৃত্রিম নীল বাজারে আসায় নীলচাষের গতি হ্রাস পায়।
অন্যান্য শিল্প:
- কয়লা: রাণিগঞ্জে প্রথম কয়লাখনি আবিষ্কৃত হয় ১৮২০ খ্রিস্টাব্দে। কেবল বাংলাদেশেই ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ প্রায় ১১৯টি কয়লা উত্তোলক সংস্থায় সওয়া লক্ষ শ্রমিক কর্মরত ছিল।
- লৌহ-ইস্পাত: ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে কোম্পানির জনৈক কর্মচারীর উদ্যোগে
মাদ্রাজের পোর্টোনোভোতে সর্বপ্রথম লৌহ-ইস্পাত কারখানা স্থাপিত হয়। ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে স্থাপিত হয় বেঙ্গল আয়রন অ্যান্ড স্টিল কোম্পানি।
এ ছাড়াও ইঞ্জিনিয়ারিং, সিমেন্ট, কাগজ, বস্ত্র ইত্যাদি শিল্পগুলির সবকটিই ভারতে মূলত ইউরোপীয় উদ্যোগেই উন্নতির মুখ দেখেছিল।