![]() |
ভক্তিবাদী আন্দোলনের প্রচারক হিসেবে চৈতন্যদেবের অবদান উল্লেখ করো |
ভক্তিবাদ হিন্দুধর্মের একটি প্রধান ধারা, যা ঈশ্বরের প্রতি নিষ্ঠা ও ভালোবাসার উপর জোর দেয়। ষোড়শ শতাব্দীতে ভারতের পূর্ব উপকূলে ভক্তিবাদের এক নবজাগরণের সূচনা হয়, যা ‘গৌড়ীয় ভক্তি আন্দোলন’ নামে পরিচিত। এই আন্দোলনের মূল কেন্দ্র ছিল নবদ্বীপ এবং এর প্রধান প্রচারক ছিলেন শ্রীচৈতন্যদেব। গুরু চৈতন্যদেব ভক্তিবাদের প্রসারে অসামান্য অবদান রেখেছেন। তাঁর অবদানগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-
কীর্তন আন্দোলন
শ্রীচৈতন্যদেব কীর্তনকে ভক্তি আন্দোলনের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে প্রচার করেন। কীর্তন হল ঈশ্বরের নাম গান ও নৃত্য। গুরু চৈতন্যদেব নিজে একজন দক্ষ কীর্তনশিল্পী ছিলেন এবং তিনি সারা বাংলায় কীর্তন আন্দোলন ছড়িয়ে দেন।
সর্বোচ্চ ঈশ্বর হিসেবে কৃষ্ণ
শ্রীচৈতন্যদেব শ্রীকৃষ্ণকে সর্বোচ্চ ঈশ্বর হিসেবে প্রচার করেন। তিনি ‘কৃষ্ণ-প্রেম’ ধারণার উপর জোর দেন এবং শ্রীকৃষ্ণের লীলা ও কীর্তন গানের মাধ্যমে ঈশ্বর-প্রাপ্তির পথ দেখান।
সামাজিক সংস্কার
শ্রীচৈতন্যদেব সমাজে বিদ্যমান জাতিভেদ প্রথার বিরুদ্ধে লড়াই করেন। তিনি সকলের সমতার উপর জোর দেন এবং ‘নাম-ধর্ম’ প্রচার করেন, যার অর্থ হল ঈশ্বরের নাম গাইলে সকলেই ঈশ্বরের প্রাপ্তি লাভ করতে পারে।
সাহিত্য
শ্রীচৈতন্যদেবের ভক্তি আন্দোলনের প্রভাবে বাংলা সাহিত্য যথেষ্ট প্রভাবিত হয়। তাঁর ভাবধারার প্রভাবে ‘চৈতন্য- চরিতামৃত’, ‘চৈতন্য-ভাগবত’ ইত্যাদি বিভিন্ন গ্রন্থ রচিত হয়। এই গ্রন্থগুলি ভক্তিবাদের দর্শন ও নীতিবোধের প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
উপসংহার
শ্রীচৈতন্যদেব ভক্তিবাদের প্রসারে একজন মুখ্য ভূমিকা পালনকারী ব্যক্তিত্ব। তাঁর অবদানগুলি ভারতীয় ধর্ম ও সংস্কৃতিতে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলেছে। রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের মতে, “চৈতন্যদেব ছিলেন একজন অবতার। তিনি ভারতে ভক্তি আন্দোলনের নবজাগরণ ঘটিয়েছিলেন।” স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন যে, “চৈতন্যদেব ছিলেন একজন মহান ধর্মগুরু। তিনি ভারতীয় জনগণের কাছে ঈশ্বরের বার্তা পৌঁছে দিয়েছিলেন।”