![]() |
ভারতীয় নীতিতত্ত্বে নিষ্কাম কর্মের ভূমিকা আলোচনা করো |
ভারতীয় নীতিতত্ত্বে নিষ্কাম কর্মের ভূমিকা
ব্যুৎপত্তিগত অর্থে এ কথা স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে যে, যে-কর্মে কোনোপ্রকার কামনা-বাসনা নেই, সেই কর্মই হল নিষ্কাম কর্ম। অর্থাৎ, আসক্তিশূন্য কর্মকেই বলা হয় নিষ্কাম কর্ম। আসক্তিশূন্য কর্ম বলতে কিন্তু কর্মের প্রতি কোনোপ্রকার অনাসক্তিকে বোঝানো হয়নি। এখানে যা বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে, তা হল-কর্মের প্রতি নয়, কর্মফলের প্রতি অনাসক্তি। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় এরূপ কর্মফলে অনাসক্তিকেই নিষ্কাম কর্ম বলা হয়েছে। কর্মফলের প্রতি আসক্তি থাকলে কখনোই নিষ্কামভাবে কর্ম করা যায় না। সুতরাং বলা যায় যে, ফলাকাঙ্ক্ষারহিত কর্মই হল নিষ্কাম কর্ম। ফলাকাঙ্ক্ষারহিত হয়ে কর্ম করা একমাত্র তখনই সম্ভব হয় যখন তা ঈশ্বরে সমর্পিত। ভারতীয় মতে, ঈশ্বরই হলেন আমাদের সমস্ত প্রকার কর্মের নিয়ামক। আমরা আমাদের অজ্ঞতাবশতই নিজেদেরকে কর্মকর্তারূপে মনে করি এবং কৃতকর্মের জন্য ফললাভের আশা পোষণ করি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বিষয়টি তা নয়। ঈশ্বরই হলেন আমাদের সমস্ত প্রকার কর্মের সর্বোচ্চ নিয়ামক। একমাত্র তাঁরই পরিচালনায় আমরা আমাদের সমস্তরকম কর্মসম্পাদন করি। সুতরাং কর্মফলের অধিকার একমাত্র তাঁরই আছে, আমাদের নয়। এরূপ বিষয়টিকেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গীতায় তৃতীয় পাণ্ডব অর্জুনকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন:
অর্থাৎ, শুধুমাত্র কর্ম সম্পাদনেই আমাদের অধিকার আছে, কর্মফলে নয়। কারণ, আমরা আমাদের কর্মের প্রকৃত কর্তা নই, এবং সেকারণেই কর্মফলের প্রতিও আমাদের কোনো অধিকার নেই।
মোক্ষলাভের আকাঙ্ক্ষায় নিষ্কাম কর্ম
ভারতীয় চিন্তাধারায় কর্মের সঙ্গে কর্মফলের বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সেকারণেই বলা যায় যে, কর্মের সঙ্গে কর্মফল আবশ্যিকভাবে সম্পৃক্ত। কর্ম আমাদের কামনা-বাসনার দ্বারা সিক্ত হতেও পারে, আবার নাও হতে পারে। এক্ষেত্রে কামনার অর্থ হল-ফললাভের কামনা। কামনার দ্বারা সিক্ত কর্মকে বলা হয় সকাম কর্ম। অপরদিকে, কামনার দ্বারা সিক্ত নয় যে-কর্ম-তাকে বলা হয় নিষ্কাম কর্ম। সকাম কর্ম যেহেতু সংসারবন্ধনের হেতু, সেহেতু একমাত্র নিষ্কাম কর্ম করাই একান্তভাবে কাম্য। এরূপ নিষ্কাম কর্মই আমাদের সমস্ত প্রকার বন্ধন থেকে মুক্ত করে এবং আত্মজ্ঞান তথা ব্রহ্মজ্ঞানলাভে সহায়তা প্রদান করে। গীতার মৌল আদর্শ ও উদ্দেশ্য হল-আত্মজ্ঞানলাভ করা এবং মুক্তি পাওয়া। সেকারণেই মোক্ষ তথা মুক্তিলাভের উদ্দেশ্যেই গীতায় নিষ্কামভাবে কর্ম করার উপদেশ দেওয়া হয়েছে।