![]() |
মধ্যযুগে ভারতের সমাজ ও জীবনযাত্রায় ভক্তিবাদের অবদান আলোচনা করো |
খ্রিস্টীয় সপ্তম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে হিন্দুধর্মের রক্ষণশীলতা ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে কিছু হিন্দু সাধক যে নতুন ধর্মীয় আন্দোলনের সূচনা করেন, তা ভক্তিবাদী আন্দোলন বা ভক্তিবাদ নামে পরিচিত। শৈব নায়নার এবং বৈষ্ণব আলবার সম্প্রদায় এই আন্দোলনের সূচনা করেন। এরপর সমগ্র ভারতবর্ষে ভক্তিবাদী আন্দোলনের প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে। ভারতীয় সমাজ, রাজনীতি ও ধর্মীয় জীবনে ভক্তিবাদের প্রভাব লক্ষণীয়। এই প্রভাবগুলি হল-
সাম্প্রদায়িক বিভেদ হ্রাস
ভক্তি আন্দোলনের প্রভাবে হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ ও বিরোধ অনেকাংশে হ্রাস পায়। ফলে দুই সম্প্রদায়ের মানুষ সমাজে একত্রে বসবাস ও ধর্ম পালন শুরু করে।
আঞ্চলিক ভাষা-সাহিত্যের সমৃদ্ধি
সাধারণ মানুষের বোঝার সুবিধার্থে ভক্তিবাদী সাধকরা আঞ্চলিক ভাষায় নিজ নিজ মতাদর্শ প্রচার করেন। যেমন-কবির রচিত ‘দোহা’ হিন্দি ভাষা ও সাহিত্যকে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ করেছে। এ ছাড়া গুরু নানকের বাণী গুরুমুখী ভাষাকে ও শ্রীচৈতন্যদেবের পদাবলী, কীর্তন বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করেছে।
জাতিভেদের তীব্রতা হ্রাস
ভক্তিবাদী আন্দোলনের প্রভাবে সমাজে জাতিভেদ প্রথার তীব্রতা হ্রাস পায়। সমাজে উঁচু-নীচু, ধনী-দরিদ্র ভেদাভেদ মুছে যায়। আর এটাই ছিল ভক্তিবাদের মূলমন্ত্র। ভক্তিবাদী সাধকরা সমাজে হিন্দু-মুসলমান সম্প্রদায়ের বিভেদের বেড়াজাল ছিন্ন করে বেরিয়ে আসার পথ দেখায়।
নারীর মর্যাদা বৃদ্ধি
ভক্তিবাদী আন্দোলনের ফলে সমাজে নারীর মর্যাদা স্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়। তারা ধর্মসভায় যোগদানের অধিকার লাভ করে।
হিন্দু ধর্ম ও সংস্কৃতির অধ্যয়ন
এই যুগে বেশ কয়েকজন মুসলিম সাধক হিন্দু ধর্ম ও সংস্কৃতি সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে ওঠেন এবং যোগ, বেদান্ত, জ্যোতিষ ও হিন্দু দর্শন সম্পর্কে গভীর অধ্যয়ন শুরু করেন। অন্যদিকে হিন্দু পন্ডিতেরাও ইসলামের সুফিবাদের আদর্শের প্রতি আকৃষ্ট হন।
স্বতন্ত্র ধর্মীয় সম্প্রদায় গঠন
গুরু নানকের ভক্তিবাদী আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে পরবর্তী সময়ে শিখ সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটে। শ্রীচৈতন্যদেবের গণমুখী প্রচারের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে উচ্চ বৈষ্ণব সম্প্রদায়।