মহামন্দার সূচনা কীভাবে হয়েছিল ৷৷ এর প্রভাব সংক্ষেপে উল্লেখ করো

মহামন্দার সূচনা কীভাবে হয়েছিল? এর প্রভাব সংক্ষেপে উল্লেখ করো।
মহামন্দার সূচনা কীভাবে হয়েছিল? এর প্রভাব সংক্ষেপে উল্লেখ করো।

প্রথম অংশ

১৯২০-এর দশকে বিশ্ব অর্থনীতির একটি বিপর্যয় ছিল ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের মহামন্দা। ঐতিহাসিক ডেভিড টমসনের মতে, মহামন্দার মূল কারণ ছিল আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সংকোচন, অস্বাভাবিক ফাটকাবাজি ক্ষতিপূরণ সমস্যা, মার্কিন পুঁজি বিনিয়োগের অভাব, উৎপাদন ক্ষমতা ও ভোগ প্রবণতার পার্থক্য এবং রুপোর অতিরিক্ত আমদানি।

মহামন্দার সূচনা

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যোগদানের ঘটনা ইউরোপের ইতিহাসে ছিল খুব তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। কারণ যুদ্ধের সময় ও যুদ্ধ পরবর্তীকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপের অর্থনীতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে পড়েছিল। তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে মহামন্দার সূচনা হলে তা ইউরোপেও ছড়িয়ে পড়ে।

{১] মার্কিন বাণিজ্যের সংকোচন: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ভোগ্যপণ্য ও শিল্পজাত দ্রব্য আমেরিকা রপ্তানি করত। কিন্তু যুদ্ধ শেষে ইউরোপীয় দেশগুলির চাহিদা ক্রমশ হ্রাস পায় এবং এর ফলে আমেরিকার রপ্তানি বাণিজ্যে ঘাটতি দেখা দেয়।

[২] ইউরোপীয় দেশগুলির স্বর্ণভান্ডারে সংকট: প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও তার পরবর্তীকালে ইউরোপীয় দেশগুলিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঋণ-প্রদান করেছিল এবং বিভিন্ন দেশে পুঁজি বিনিয়োগের স্থান ছিল সর্বাগ্রে। তাই যুদ্ধ-ঋণ পরিশোধ ও পণ্য ক্রয়ের জন্য ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সোনা পাঠাতে হত। এর ফলে সোনা সরবরাহকারী দেশগুলিতে মজুত সোনার ভান্ডার ক্রমশ নিঃশেষ হয়ে যায়। তারা মার্কিন পণ্য ক্রয় বা ঋণ পরিশোধে অসমর্থ হয়ে পড়ে।

[৩] সঞ্চয় প্রবণতা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সচ্ছল আর্থিক অবস্থা সে দেশের সচ্ছল মানুষের মধ্যে সঞ্চয়ের প্রবণতা বৃদ্ধি করেছিল। ফলে পণ্য উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পণ্য ক্রয় ইচ্ছা হ্রাস পেয়েছিল, তেমনি এদের অনেকেই আবার অধিক লাভের আশায় শেয়ার বাজারে অর্থ লগ্নি করেছিল।

[৪] শেয়ার বাজারে ধস: ১৯২০ দশকের শেষদিকে শেয়ার বাজারে যৌথ শিল্প-সংস্থাগুলির শেয়ারের দাম বৃদ্ধি পেতে থাকে। এক সময় শেয়ার বাজারের ঝানু দালালগণ যখন একের পর এক শেয়ার বিক্রি করতে থাকে এবং এর ফলে শেয়ার বাজারের উপর সাধারণ মানুষের আস্থা চলে যায়। ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের ২৪ অক্টোবর প্রায় ৩০ মিলিয়ন শেয়ার ক্রয়বিক্রয় হয়। এই দিনটি “কালো বৃহস্পতিবার” (Black Thursday) নামে পরিচিত এবং ওই দিনই ওয়াল স্ট্রিট-এর শেয়ার বাজারে ধস নামে ও ক্রমশ এই বিপর্যয় প্রথমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পরে বিশ্বকে গ্রাস করে।

দ্বিতীয় অংশ

মহামন্দার প্রভাব

[১] ব্যাংকিং ব্যবস্থায় বিপর্যয়: ১৯২৯ থেকে ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে প্রায় ৫৭০টি ব্যাংক ফেল করে এবং আরও ৩৫০০টি ব্যাংক তাদের নিজেদের কাজকর্ম স্থগিত রাখে। এ ছাড়া ইউরোপের অস্ট্রিয়া, জার্মানি, চেকোশ্লাভাকিয়া প্রভৃতি দেশের ব্যাংকও ফেল করে।

[২] আমানতকারীগণের ক্ষতি: ব্যাংকের আমানত- কারীগণের অনেকেই ব্যাংক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় ব্যাংক থেকে তাদের টাকা ফেরত পায়নি। ফলে সাধারণ মানুষের অনেকেই নিজেদের সঞ্চিত টাকা থেকে বঞ্চিত হয়, আবার কেউ সর্বস্বান্ত হয়।

[৩] শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলিতে বিপর্যয়: মহামন্দার ফলে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিল্প-উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত শিল্পমালিক ও শ্রমিক। শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলির উৎপাদিত পণ্য সম্ভারের বেচা-কেনা থমকে যায়। এর ফলে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলি একে একে বন্ধ হয়ে যায় ও শুরু হয় শ্রমিক ছাঁটাই।

[৪] বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীদের ক্ষতি: মন্দার ফলে বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীগণ প্রচন্ড ক্ষতির সম্মুখীন হয় এবং শেয়ার বাজারে লোকসানের দরুন প্রচুর সংখ্যক বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। 

[৫] হুভার স্থগিতকরণ: হুভার স্থগিতকরণ-এর ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র লাভবান হয়নি। তাই ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনে হুভারের ‘রিপাবলিকান দল’ ক্ষমতাচ্যুত হয় এবং ডেমোক্রেটিক দলের ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।

Leave a Comment