মোক্ষ সম্পর্কে চার্বাকদের অভিমত ব্যক্ত করো

মোক্ষ সম্পর্কে চার্বাকদের অভিমত ব্যক্ত করো
মোক্ষ সম্পর্কে চার্বাকদের অভিমত ব্যক্ত করো
মোক্ষ হল ভারতীয় দর্শনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মৌল ধারণা। পুরুষ তথা আত্মার কাম্যবস্তুকে বলা হয় পুরুষার্থ। ভারতীয় দর্শনে প্রথমদিকে ধর্ম, অর্থ এবং কাম-এই তিনটি পুরুষার্থকে স্বীকার করা হয়েছে। এই তিনটি পুরুষার্থকে এক সঙ্গে বলা হয় ত্রিবর্গ। কিন্তু এরপর ওই তিনটি পুরুষার্থের সঙ্গে মোক্ষকে যুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে মোট চারটি পুরুষার্থ স্বীকৃত হয়েছে। এই চারটি পুরুষার্থকে একসঙ্গে বলা হয় চতুর্বর্গ। ভারতীয় চিন্তাধারায় মোক্ষই হল সর্বশ্রেষ্ঠ পুরুষার্থ। কিন্তু চার্বাকগণ মোক্ষকে স্বীকার করেন না।

মোক্ষের স্বরূপ

মোক্ষের অর্থ হল দুঃখের আত্যন্তিক নিবৃত্তি। আসক্তিজনিত কর্মের জন্যই মানুষ সংসারবন্ধনে আবদ্ধ হয় এবং দুঃখের আবর্তে আবর্তিত হয়। অবিদ্যাই হল দুঃখের মূল কারণ। অবিদ্যা দূর হলে মানুষের তত্ত্বজ্ঞান হয় এবং তার ফলেই মানুষ দুঃখ থেকে মুক্তি লাভ করে। মোক্ষকে ভারতীয় দর্শনের বিভিন্ন সম্প্রদায়ে মুক্তি, নিঃশ্রেয়স, নির্বাণ, অপবর্গ প্রভৃতি নামে উল্লেখ করা হয়েছে। এই মোক্ষলাভই হল জীবের পরম ও চরম কাম্য বস্তু।

চরম পুরুষার্থরূপ মোক্ষের অস্বীকৃতি

চার্বাকগণ মোক্ষের ধারণাকে মানেন না। তাঁদের মতে, যেহেতু দেহাতিরিক্ত চিরন্তন আত্মার কোনো অস্তিত্বই নেই, সে কারণে মোক্ষের ধারণাটি একেবারেই নিরর্থক। মোক্ষের মতো তাঁরা ধর্মকেও পুরুষার্থরূপ স্বীকার করেন না। তাঁদের মতে, কামই চরম পুরুষার্থ এবং অর্থ হল তার সহযোগীমাত্র। এ কারণেই মুখ্য বা চরম পুরুষার্থ হল কাম এবং গৌণ পুরুষার্থ হল অর্থ। চার্বাকদের কাছে তাই মোক্ষ এক গুরুত্বহীন অসার কল্পনামাত্র।

মোক্ষ হল ধূর্ত ব্রাহ্মণদের উদ্দেশ্যমূলক কল্পনা

চার্বাকরা আরও বলেন যে, মোক্ষের ধারণাটি ধূর্ত ব্রাহ্মণদের উদ্দেশ্যমূলক কল্পনার সৃষ্টি। এটি হল সরলমতি সাধারণ মানুষকে ঠকানোর জন্য ব্রাহ্মণদের এক কার্যকরি পদ্ধতি। মোক্ষ প্রত্যক্ষযোগ্য নয় এবং সেকারণেই তা অবাস্তব। মৃত্যুই প্রত্যক্ষযোগ্য এবং সে কারণেই তা বাস্তব। সুতরাং, চার্বাক মতে, মোক্ষের ধারণাটি এক অলীক কল্পনা মাত্র।

Leave a Comment