রবীন্দ্রসংগীতের ধর্ম
প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলীর মতে, রবীন্দ্রসংগীতের ধর্ম হল গীতিরস দ্বারা শ্রোতাকে সম্পূর্ণভাবে পরিতৃপ্ত করার পর, ব্যঞ্জনার মধ্যে অতৃপ্তি রেখে যাওয়া-যাতে শ্রোতা বারংবার সেই সংগীতের প্রতি আকৃষ্ট হন। এটি যে-কোনো উচ্চাঙ্গ এবং ধ্বনিপ্রধান সংগীতেরই লক্ষণ, যে ব্যঞ্জনার অতৃপ্তিতে হৃদয় মন ভরে যায়।
মন্তব্যের যথার্থতা
মহৎ সৃষ্টির যিনি মহান স্রষ্টা তাঁর নিকট থেকে আমাদের প্রত্যাশা সম্পূর্ণতাপ্রাপ্তির। শিক্ষা, সংস্কৃতি, শিল্প, দর্শন, সাহিত্য, বিজ্ঞান প্রভৃতি ক্ষেত্রের বৈচিত্র্যময় সৃষ্টির অন্তরে অখণ্ডতা ও সম্পূর্ণতা যদি বিরাজ করে, তবে সেই সৃষ্টি অনন্তকালের স্থায়ী সম্পদ হিসেবে পরিগণিত হয়। আমাদের আলোচ্য ‘পঁচিশে বৈশাখ’ প্রবন্ধের প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলী তাঁর আচার্য গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিল্পসুষমামণ্ডিত গানের ভুবনে সেই সম্পূর্ণতার স্বাদ আস্বাদন করতে গিয়ে আলোচ্য বক্তব্যের অবতারণা করেছেন।
তাঁর মতে, রবীন্দ্রনাথের শব্দচয়ন, শব্দের যথাযথ স্থলে সংস্থাপন বোধ ছিল অনন্য। শব্দ-সম্মান বোধসম্পন্ন রবীন্দ্রনাথের গান ভাবে, অর্থে, মাধুর্যে যে হৃদয়স্পর্শী গীতিময়তা সৃজন করেছে তাতে নটরাজের সম্পূর্ণ রূপ প্রতিভাত হয়েছে। যে গান জগৎজুড়ে উদার সুরে সম্পূর্ণতার আনন্দধ্বনি তোলে এবং সীমার মাঝে অসীমের আনন্দস্রোত প্রবাহিত করে সেই গান প্রাবন্ধিকের মতে অসম্পূর্ণরূপে দাঁড়ায় না।