শিক্ষার সংকীর্ণ অর্থ বলতে কী বোঝো

শিক্ষার সংকীর্ণ অর্থ বলতে কী বোঝো

যে শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীর জীবনবিকাশের অন্যান্য কোনো বিষয়ের উপর গুরুত্ব না দিয়ে নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে শিক্ষাকে সীমাবদ্ধ রেখে, নির্দিষ্ট পাঠক্রমের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে শিশুকে কোনো বিশেষ আর্থসামাজিক উদ্দেশ্যসাধনের জন্য তৈরি করা, তাকে সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষা বলা হয়।

অধ্যাপক ম্যাকেঞ্জি-র মতে ব্যক্তির ক্ষমতাকে বিকশিত ও অনুশীলন করার জন্য সচেতনভাবে পরিচালিত প্রচেষ্টাকে, ‘সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষা’ বলা হয়।

ড্রেভার (Drever) -এর মতে, শিক্ষা হল এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে শিশুর জ্ঞান, চরিত্র ও আচরণের পরিবর্তন ঘটে।

থম্পসন (Thompson)-এর মতে, ব্যক্তির উপর পরিবেশের প্রভাব তার আচরণ, চিন্তাভাবনা ও মনোভাবের স্থায়ী পরিবর্তনই হল শিক্ষা।

সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষার বৈশিষ্ট্য

ব্যক্তি ও সমাজজীবন যখন সংকীর্ণ চাহিদাভিত্তিক তখন যে শিক্ষার কথা বলা হয়, তাই-ই হল সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষা। এই শিক্ষার ধারণা বিশ্লেষণ করে যে বৈশিষ্ট্যগুলি পাওয়া যায়, সেগুলি হল

জ্ঞানভান্ডার বৃদ্ধি: সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল শিশুর জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করা। শিক্ষক তাঁর অর্জিত জ্ঞানভাণ্ডার থেকে শিক্ষার্থীর শূন্য ভান্ডারে সেই জ্ঞান সঞ্চালিত করেন। অনেকে এই মতবাদের নাম দিয়েছেন আহরণ বা সঞ্চয়ন মতবাদ। এই মতবাদের আর-এক নাম সুবর্ণ কণিকা বা শূন্য ভাণ্ডার তত্ত্ব (Gold sack theory) জ্ঞানকে সুবর্ণ কণিকার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।

ভবিষ্যৎ জীবনের প্রস্তুতি: সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষা হল ভবিষ্যৎ বৃত্তিগ্রহণের জন্য শিশুকে প্রস্তুত করা।

শিক্ষক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত : এই শিক্ষার লক্ষ্য হল শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় বা কোনো প্রথাগত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের নিয়ন্ত্রণে পাঠ আয়ত্ত করানো।

সামাজিক স্বীকৃতি:
এই শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য হল পরীক্ষার মাধ্যমে কিছু ডিগ্রি, ডিপ্লোমা বা সার্টিফিকেট অর্জন করা; যা সামাজিক স্বীকৃতি প্রদান করে।

নির্দিষ্ট সময়সীমা: এই শিক্ষায় প্রবেশের ও শিক্ষা শেষ করার নির্দিষ্ট বয়সসীমা রয়েছে। 

প্রয়োজনমাফিক: প্রয়োজনের তাগিদে কোনো বিশেষ বিষয়ে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অর্জন করাই হল এই শিক্ষার উদ্দেশ্য। 
দাতা গ্রহীতার সম্পর্ক: সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষায় শিক্ষক দাতা হিসেবে জ্ঞান দান করেন আর শিক্ষার্থী গ্রহীতা হয়ে সেই জ্ঞান গ্রহণ করে। 
শিল্পার্থীর চাহিদা অবহেলিত : এই শিক্ষায় শিক্ষার্থীর চাহিদাকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। শিক্ষক তাঁর নিজের মতো করে শিক্ষার্থীকে গড়ে তোলার চেষ্টা করেন।

অপরিবর্তনীয় ও গতিহীন : সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষা অপরিবর্তনীয় ও গতিহীন। সমাজ পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এটি পরিবর্তনশীল নয়। 

একমুখী প্রক্রিয়া:
শিক্ষার্থী এখানে নিষ্ক্রিয় শ্রোতা। শিক্ষক যা বলেন, শিক্ষার্থীদের তাই-ই গ্রহণ করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না।

মূল্যায়ন পদ্ধতি: এক্ষেত্রে মূল্যায়ন পদ্ধতি সক্রিয়তাভিত্তিক নয়। এখানে মৌখিক নির্দেশনা, হাতেকলমে বা মৌখিক পরীক্ষাকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়। পরীক্ষায় সফল হওয়াই এই শিক্ষার একমাত্র লক্ষ্য।

পুঁথিকেন্দ্রিক ও বিদ্যালয়ভিত্তিক : সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষার লক্ষ্য হল ডিগ্রি, সার্টিফিকেট অর্জন করা। তাই এই শিক্ষা অবশ্যই বিদ্যালয়ের চার দেয়ালের মধ্যে নির্দিষ্ট পাঠক্রমেই সীমাবদ্ধ।

স্মৃতিভিত্তিক প্রক্রিয়া: যেহেতু সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষাব্যবস্থা পরীক্ষাকেন্দ্রিক, তাই এটি স্মৃতিভিত্তিক প্রক্রিয়া।

সুতরাং যে শিক্ষাপ্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীর চাহিদা, আগ্রহ গুরুত্ব পায় না, পুঁথিকেন্দ্রিক, পরীক্ষাকেন্দ্রিক এবং একমুখী সেই অপরিবর্তনীয় ও গতিশীল শিক্ষাই হল সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষা।

Leave a Comment