সফিস্ট রাষ্ট্রদর্শনের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য এবং এর গুরুত্ব প্রসঙ্গে আলোচনা করো
সফিস্ট রাষ্ট্রদর্শনের বৈশিষ্ট্যসমূহ
স্যার আর্নেস্ট বার্কার (Ernest Barker) বলেছেন যে, সফিস্টদের কাছে যাওয়ার অর্থ ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার সমতুল্য। মানুষকে রাজনৈতিক জীব হিসেবে সংগঠিত হতে অনুপ্রাণিত করা-এই ছিল সফিস্ট দর্শনের লক্ষ্য। সফিস্টদের রাষ্ট্রচিন্তার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যগুলি হল-
- প্রাক্-সফিস্ট দর্শনচর্চার কেন্দ্রে ছিল প্রকৃতি। কিন্তু সফিস্টগণ মানুষ ও মানবসভ্যতাকে তাঁদের আলোচনায় গুরুত্ব দেন। এঁদের মতে, ‘ঈশ্বর সকল মানুষকে মুক্ত বা স্বাধীনভাবে সৃষ্টি করেছেন, প্রকৃতি কোনও মানুষকেই দাস শ্রেণিভুক্ত করেনি।’
- সফিস্টরা সচেতনভাবে কোনও দল বা সংঘ (School) গঠন করেননি। তাঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন স্বতন্ত্র ও ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী শিক্ষক।
- সফিস্ট দর্শন কোনও একমুখী বা তাত্ত্বিক অনুজ্ঞা ছিল না। তাঁদের বক্তব্যে রাষ্ট্রচিন্তা গুরুত্ব পেত এবং সফিস্টদের বক্তব্য ছিল বৈচিত্র্যে ভরপুর। কেউ রাষ্ট্রের উৎপত্তি ব্যাখ্যা করেছেন, কেউ নৈতিকতা নিয়ে আলোচনা করেছেন। আবার কারও শিক্ষাদানের মূল বিষয়ই হল ন্যায়নীতি ও মনুষ্যত্বের বিকাশ।
সফিস্ট রাষ্ট্রদর্শনের গুরুত্ব
(i) রাজনৈতিক চেতনার বিকাশ
সফিস্ট দার্শনিকদের চিন্তাভাবনা গ্রিসের জনসাধারণের মধ্যে রাজনৈতিক চিন্তার বিকাশ ঘটায়। তাদের শিক্ষা একজন ব্যক্তিমানুষকে রাজনৈতিক জীব হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করে।
(ii) ব্যক্তির উপর গুরুত্ব প্রদান
সর্বপ্রথম সফিস্টগণই প্রকৃতির রাজ্য থেকে মানুষের দিকে দৃষ্টি দিতে শেখান। এঁরাই ছিলেন ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী দর্শনের জনক। জ্ঞানের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে মানুষের উপস্থাপন ও মানবতাবাদী ধারণাকে একটি দৃষ্টিভঙ্গিরূপে প্রচার করা-এসব কিছুই ছিল সফিস্টদের বিশেষ অবদান।
(iii) যুক্তিবাদী ধ্যানধারণার বিস্তার
বিউরির মতে, সফিস্টরা ছিলেন জাতীয়তাবাদী, বাস্তববাদী ও যুক্তিবাদী। যুক্তি দিয়ে বিচার করে যে-কোনো বিষয়কে গ্রহণ করার রীতি প্রবর্তন করেন সফিস্ট দার্শনিকগণ। এই # অর্থে সফিস্টদের মূল্যবোধ নিরপেক্ষ দর্শনভাবনার প্রথম প্রবক্তা হিসেবে গণ্য করা হয়।
(iv) সামাজিক চুক্তিতন্ত্রের উদ্গাতা
গেটেলের মতে, সফিস্টরাই প্রথম ঘোষণা করেন যে- রাষ্ট্র সামাজিক চুক্তি দ্বারাই সৃষ্ট। অর্থাৎ তাদের চিন্তাধারার মধ্যে প্রথম সামাজিক চুক্তিতত্ত্বের সন্ধান মেলে।
পরিশেষে বলা যায় যে, শিক্ষার ক্ষেত্রেও সফিস্ট দার্শনিকদের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। তৎকালীন যুবসমাজকে একমুখী ভাবনাচিন্তায় আবদ্ধ না রেখে বিভিন্ন বিতর্কে অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ করতেন তারা। এ ছাড়াও রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ও কর্তৃপক্ষের আপেক্ষিকতার ধারণা প্রচারের ক্ষেত্রেও সফিস্টরা চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন।