![]() |
সুখবাদ কাকে বলে? |
সুখবাদ
নীতিতত্ত্বে ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায় প্রভৃতির মাপকাঠিতে যেমন নৈতিক আদর্শ ঠিক করা হয়, তেমনি আবার অনেক সময় সুখ (Pleasure)-এর মাপকাঠিতেও নৈতিক আদর্শকে উল্লেখ করা হয়। অর্থাৎ, সুখ হল একটি নৈতিক মানদণ্ড। সে কারণেই বলা যায়, যে মতবাদে সুখকে একমাত্র মাপকাঠি রূপে গণ্য করা হয়, তাকেই বলে সুখবাদ। নীতিতত্ত্বে সুখবাদ একটি অন্যতম নৈতিক মতবাদ রূপে স্বীকৃতি লাভ করেছে। এরূপ মতবাদ অত্যন্ত প্রাচীনকাল থেকেই ভারতীয় চিন্তাধারায় এবং পাশ্চাত্যের ভাবনাচিন্তায় একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান করে নিয়েছে। যাঁরা সুখবাদের সমর্থক তাঁদের বলা হয় সুখবাদী (Hedonists)।
শব্দগত বিশ্লেষণে সুখবাদ
সুখবাদ-এর ইংরেজি প্রতিশব্দ হল Hedonism। এই শব্দগুলি গ্রিক Hedone শব্দটি থেকে উদ্ভূত হয়েছে। গ্রিক Hedone শব্দের অর্থ হল আনন্দ বা সুখ (pleasure)। সুতরাং শব্দতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের ফলে উল্লেখ করা যায়, যে মতবাদ অনুসারে সুখ বা আনন্দকেই মানব জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য তথা কাম্যবস্তু রূপে গণ্য করা হয়, সেই মতবাদকেই বলা হয় সুখবাদ। এরূপ মতবাদে দাবি করা হয় যে, মানুষের উচিত হল সুখ অন্বেষণ করা এবং তাকে লাভ করে আনন্দ পাওয়া। এই মতবাদ অনুযায়ী তাই বলা হয় যে, একমাত্র সুখপ্রদানকারী ক্রিয়াসমূহই হল নৈতিক ক্রিয়া (Moral actions)। অপরদিকে বলা যায়, যে সমস্ত ক্রিয়া সুখ প্রদানে ব্যর্থ, সেই সমস্ত ক্রিয়াকেই বলা হয় অনৈতিক ক্রিয়া (Non-moral actions)। প্রাচীন গ্রিসের লিরেনাইক এবং এপিকির্ডরীয় চিন্তাবিদদের চিন্তাধারায় এর প্রভাব যেমন লক্ষ করা যায়, তেমনি আবার ভারতীয় চার্বাক দার্শনিকদের চিন্তাধারায় এর প্রভাব দেখা যায়। ভারতীয় নীতিতত্ত্বের ক্ষেত্রে একমাত্র চার্বাক সম্প্রদায়ই সুখবাদী সম্প্রদায় রূপে গণ্য। সে কারণেই তাঁরা সুখকে নৈতিক মাপকাঠি হিসেবে গ্রহণ করেছেন এবং তার প্রচার করেছেন।