সুয়েজ সংকটের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো। সুয়েজ সংকটে ভারতের ভূমিকা কী ছিল

সুয়েজ সংকটের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো। সুয়েজ সংকটে ভারতের ভূমিকা কী ছিল
সুয়েজ সংকটের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো। সুয়েজ সংকটে ভারতের ভূমিকা কী ছিল?

সুয়েজ সংকটের তাৎপর্য

নাসের-এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি: সুয়েজ সংকটের মধ্য দিয়ে মিশরের রাষ্ট্রপতি নাসের ব্যক্তিগত মর্যাদা ও জনপ্রিয়তার শীর্ষে আরোহণ করেছিলেন। আরব জাতীয়তাবাদীদের কাছে তিনি আধুনিক সালাদিনরূপে আখ্যায়িত হন।

সুয়েজের উপর মিশরের কর্তৃত্ব স্থাপন: নাসের-এর সুয়েজ খাল জাতীয়করণের সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিলাভ করে। ফলে সুয়েজ খালের উপর মিশরের কর্তৃত্ব আরও দৃঢ় হয়।

আরব জাতীয়তাবাদের উন্মেষ: সুয়েজ সংকটের কারণে আরব ঐক্যের বন্ধন সুদৃঢ় ও সুসংহত হয়। মিশর ও সিরিয়া ঐক্যবদ্ধ হয়ে ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে গঠিত হয় সংযুক্ত আরব প্রজাতন্ত্র বা United Arab Republic (UAR)। নতুন আরব প্রজাতন্ত্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি হন নাসের।

রাশিয়ার প্রভাব বৃদ্ধি: সুয়েজ সংকটের ঘটনায় সবচেয়ে বেশি লাভবান হয় সোভিয়েত রাশিয়া। এই সংকটে রাশিয়া মিশরকে সমর্থন করায় আরবে রাশিয়ার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। সোভিয়েত রাশিয়া পূর্ব ইউরোপে তার রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণকে সুদৃঢ় করে।

মার্কিন প্রতিক্রিয়া: আরব দেশগুলির সঙ্গে সোভিয়েত রাশিয়ার সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে সক্রিয় নীতি অনুসরণের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে মার্কিন কংগ্রেস সভাপতি আইজেনহাওয়ার এক ঘোষণায় বলেন যে, সাম্যবাদী রাষ্ট্রের আক্রমণের বিরুদ্ধে কোনো দেশ সাহায্য চাইলে আমেরিকা তাকে সাহায্য করবে।

সুয়েজ সংকটে ভারতের ভূমিকা:
সুয়েজ সংকটে ভারতের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, ভারতের তরফ থেকে ঘোষণা করা হয়- সুয়েজ খালের নিয়ন্ত্রক বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলির মর্যাদা রক্ষা করতে হবে এবং পশ্চিমি রাষ্ট্রগুলির স্বার্থ যাতে ক্ষুণ্ণ না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।

দ্বিতীয়ত, মিশরের মর্যাদা ও অধিকার অক্ষুণ্ণ রাখার উদ্দেশ্যে ভারত জানিয়ে দেয় যে, ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দের কনস্ট্যান্টিনোপল কনভেনশন অনুযায়ী সুয়েজ খাল মিশরের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কৃম্নমেনন সুয়েজের উপর মিশরের সার্বভৌম কর্তৃত্ব অব্যাহত রেখে জাতিপুঞ্জের সনদ অনুসারে সুয়েজ সংক্রান্ত সমস্যার সমাধানের প্রস্তাব দেন।

তৃতীয়ত,
১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে সুয়েজ সমস্যার সমাধানের জন্য লন্ডনে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে ভারতের বিদেশমন্ত্রী কৃষ্ণমেনন মিশরীয় প্রতিনিধির অনুপস্থিতির সুযোগে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক যোগসূত্রের ভূমিকা গ্রহণ করেন।

চতুর্থত,
ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের সৈন্যবাহিনীর মিশর আক্রমণকে ভারত তীব্র নিন্দা করে। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু একে নগ্ন আক্রমণ (Naked Aggression) বলে সমালোচনা করেন। পঞ্চমত, মিশরে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা, বিদেশি সৈন্য অপসারণ ও যুদ্ধবন্দি প্রত্যর্পণের বিষয়ে আলোচনায় ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ষষ্ঠত,
সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের শান্তিরক্ষা বাহিনীতে ভারত যথেষ্ট পরিমাণে সেনা পাঠায়। এতে ভারত-মিশর সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা বাড়ে এবং জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন আরও জোরদার হয়।

Leave a Comment