![]() |
সুলতানি যুগের সুফিবাদের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো। সুফিদের সাধনার স্তর ও পদ্ধতি কীরূপ ছিল? |
খ্রিস্টীয় নবম ও দশম শতাব্দীতে ভক্তিবাদের মাধ্যমে হিন্দুধর্মে যখন উদারনৈতিক সংস্কার চলছিল, তখন ইসলাম ধর্মেও এক উদারনৈতিক মতবাদের প্রচার শুরু হয়। এই মতবাদ সুফিবাদ নামে পরিচিত।
সুফিবাদের বৈশিষ্ট্য
সুফিবাদের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। যেমন-
(i) মানবসত্তা: সুফিবাদে মানবসত্তাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। মানবসত্তা অর্থাৎ (a) মানুষ কীভাবে তার অন্তরে ঈশ্বরকে অনুভব করবে এবং (b) এই সৃষ্টির সঙ্গে ঈশ্বরের কোনো সংযোগ আছে কি না তার চর্চা করা।
(ii) একেশ্বরবাদে বিশ্বাস: সুফিবাদীরা একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। তাঁদের মতে, ঈশ্বর হলেন এক ও অভিন্ন।
(iii) পিরবাদ: সুফি দর্শনে পির বা গুরুর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। গুরু তাঁর শিষ্যকে ঈশ্বরের সঙ্গে আত্মার মিলনের সঠিক পথ দেখান। গুরু ছাড়া এই মিলন অসম্ভব।
সুফিদের ধর্মীয় সাধনার স্তর
একটি মতানুসারে, কোনো ব্যক্তি সুফি সাধনার দশটি স্তর অতিক্রম করলে তবেই ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ করতে পারে। এই স্তরগুলি হল- (ⅰ) তওবা (অনুশোচনা), (ii) ওয়ারা (নিবৃত্তি), (iii) জুহদ (ধার্মিকতা), (iv) ফকর (অনাড়ম্বর জীবনযাপন), (v) সত্র (সহনশীলতা অর্জন), (vi) শুক্র (কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন), (vii) খুফ (অন্যায়ের প্রতি ভীতি), (viii) রজা (ঈশ্বরের করুণা লাভের ইচ্ছা), (ix) তওয়াকুল (আনন্দে-বিষাদে স্থির থাকা), এবং (x) রিজা (ঈশ্বরের কাছে আত্মসমর্পণ)।
সুফিদের সাধন পদ্ধতি
সুফিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি প্রচলিত সাধন পদ্ধতি ছিল- (i) প্রাণায়ামের দ্বারা যোগ সাধনায় রত থাকা অর্থাৎ পাস-ই-আনফাস। (ii) নির্জন স্থানে বা গৃহে চল্লিশ দিন কৃচ্ছসাধনে রত থাকা অর্থাৎ চিল্লি। (iii) চল্লিশ দিন ধরে গৃহের ছাদে বা গাছের ডালে পা বেঁধে ও মাথা জমিতে রেখে যোগসাধনায় রত থাকা অর্থাৎ চিল্লা-ই-মা-কুস।