“কিন্তু চাল, চালের কী হবে”-নাট্যাংশে উক্তিটির বক্তা কে? কোন্ প্রসঙ্গে তিনি এ কথা বলেছেন? বক্তার উক্ত উক্তির আলোকে তৎকালীন জীবনাবস্থার যে চিত্র ফুটে উঠেছে, তা বর্ণনা করো।

বক্তা
প্রবাদপ্রতিম নট-নাট্যকার বিজন ভট্টাচার্যের অনন্য সৃষ্টি ‘আগুন’ নাটকের চতুর্থ দৃশ্যে, মধ্যবিত্ত পরিবারের প্রতিনিধি হরেকৃষ্ণবাবু – উক্তিটির বক্তা।
প্রসঙ্গ
‘আগুন’ নাটকে মনোরমা সেদিনকার মতো সিভিক গার্ডকে বলে কিছু চিনি জোগাড় করার কথা বলেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে হরেকৃষ্ণবাবু বিস্মিত হয়ে তার স্ত্রীকে এই কথা বলেছেন।
তৎকালীন জীবনাবস্থার চিত্র
দুর্ভিক্ষের করাল বিভীষিকায় বাংলার আর্থসামাজিক জীবনে নেমে এসেছিল ঘোর সংকটময় অমানিশা। চারিদিকে বুভুক্ষু মানুষের কাতর আর্তনাদ। এই সময় সমাজসচেতন নাট্যকার বিজন ভট্টাচার্য দেখেছিলেন বাংলার বুকে লুকিয়ে থাকা আর এক বাংলাকে- যেখানে শুধুমাত্র রাজশক্তি নয়, অন্যান্য সমাজ-শত্রু, যারা বিদেশি শাসনের সুযোগে সাধারণ মানুষকে শোষিত, বঞ্চিত, নিপীড়িত করছিল। আর অসহায়, নিরুপায় মানুষগুলি জীবনযন্ত্রণায় ক্ষতবিক্ষত হয়ে, নিয়তির নিষ্ঠুর পরিহাস মনে করে তৎকালীন পরিস্থিতির সাথে নিজেদের মানিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছিল। ‘দেখি, দাও টাকাটা ঘুরে আসি।’
একদিকে ছিল দুর্ভিক্ষ, মন্বন্তরের ভয়ংকর আগ্রাসন। অন্যদিকে কালোবাজারি, মুনাফাবাজ, মজুতদারের আকাশচুম্বী অর্থলিপ্সা। সেই সংকটময়তাকে আরও বর্বরোচিত ও নারকীয় করে তুলেছিল কতিপয় মানুষের সীমাহীন লোভ। এই দুরবস্থার জাঁতাকলে নিষ্পেষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রতিনিধি হরেকৃষ্ণ-মনোরমার জীবনযন্ত্রণার ক্ষতবিক্ষত রূপটি অভিব্যক্ত হয়েছে, যা সত্যিই মর্মান্তিক ও বেদনাবহ। তৎকালীন জীবনাবস্থার নগ্ন ফোটোগ্রাফি তুলে ধরতে নাট্যকারের মুনশিয়ানা অপরিসীম।
আরও পড়ুন – নদীতীরে বালকদের খেলার দৃশ্যটি বর্ণনা করো