পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার প্রবন্ধ রচনা

পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার প্রবন্ধ রচনা

পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার প্রবন্ধ রচনা
পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার প্রবন্ধ রচনা

“যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসছ ভালো?”

-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

আমাদের চারপাশে বিদ্যমান সকল জৈব ও অজৈব উপাদানের সমষ্টি যেমন বায়ু, জল, মাটি, উদ্ভিদ, প্রাণী মানুষ এবং তাদের মধ্যে পারস্পরিক ক্রিয়ার সমষ্টি হচ্ছে পরিবেশ। পরিবেশ হল প্রাণের ধারক। আমাদের অস্তিত্ব পরিবেশের উপর নির্ভরশীল। পরিবেশের উপর নির্ভর করে মানুষ বা অন্য প্রাণী বা উদ্ভিদের বিকাশ ঘটে। এই পরিবেশ যদি জীবনের বসবাসের অযোগ্য হয়ে ওঠে তবে তাকে পরিবেশ দূষণ বলে। সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে স্বার্থান্বেষী কিছু মানুষ লোভে পরিবেশকে নানাভাবে দূষিত করছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, প্রাকৃতিক সম্পদের অপব্যবহার, বনভূমি ধ্বংস, নগরায়ণ, কলকারখানার বর্জ্য পদার্থ, গাড়ির বিষাক্ত ধোঁয়া, প্লাস্টিক, কৃষিক্ষেত্রে বিষাক্ত ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার পরিবেশকে দূষিত করছে।

জলের অপর নাম জীবন। জল ছাড়া আমরা বাঁচতে পারি না। এই জল দূষণের ফলে মানুষ নানান রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। জল বিভিন্ন কারণে দূষিত হয়। কলকারখানার বর্জ্য পদার্থ কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত রাসায়নিক সার, কীটনাশক বিষ জলে মিশে জলকে দূষিত করছে। ঘর-গৃহস্থালির দৈনন্দিন আবর্জনা, পুকুর নদীতে গবাদি পশুর স্নান, মল-মূত্র ত্যাগ করা ইত্যাদি জলকে দূষিত করে। অনেক সময় সমুদ্রজলে ভাসমান তৈল সমুদ্র জলকে দূষিত করছে। এর ফলে মানুষের পানীয় জল ও জলচর প্রাণীদের জীবন আজ বিপন্ন।

মানুষের মৌলিক চাহিদা খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানের জন্য যেসব বস্তুর প্রয়োজন হয় তার সবগুলির উৎস হল মাটি। আমরা মাটিকে আমাদের জীবনের একটি মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ হিসাবে মনে করি। তবে মানুষের দ্বারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাবে মাটির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে তথা দূষিত হচ্ছে। মাটি দূষণের প্রধান কারণগুলি ভূমিক্ষয়, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, বনভূমি ধ্বংস, কৃষিকাজে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার প্রভৃতি। পৃথিবীকে সুস্থ ও স্বাভাবিক বসবাস উপযোগী করার জন্য মাটিদূষণ রোেধ জরুরি।

বেঁচে থাকার প্রধান উপাদান বায়ু। বায়ু বা বাতাস ছাড়া জীবজগৎ একমুহূর্ত বাঁচতে পারে না। বিভিন্ন উপায়ে ক্ষতিকারক পদার্থ বাতাসে মিশে গিয়ে বায়ুদূষণ ঘটায়। বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ হল নিউক্লিয় আবর্জনা, কলকারখানার দূষিত গ্যাস, যানবাহনের ধোঁয়া, কয়লা পুড়িয়ে কার্বন ডাইঅক্সাইড বাতাসে ছড়িয়ে দেওয়া। ইটভাটার চিমনির ধোঁয়া, পলিথিনের পর্যাপ্ত ব্যবহার বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তরে প্রভাব পড়ছে, যার ফলে জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে। মানুষ শ্বাসকষ্ট, ক্যানসারের মতো দুরারোগ্য ব্যাধির শিকার হচ্ছে।

মানবসৃষ্ট উচ্চ শব্দ যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তাই শব্দদূষণ। কলকারখানার আওয়াজ, বাজি, বোমা, রাস্তাঘাটে মোটরগাড়ির হর্ন, উৎসব অনুষ্ঠানে, রাজনৈতিক মিটিং মিছিলে উচ্চস্বরে মাইকের আওয়াজ শব্দদূষণের অন্যতম কারণ। উচ্চমাত্রায় শব্দ থেকে মানসিক অবসাদ, শ্রবণ ক্ষমতা কমে যাওয়া, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগের মতো সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।

জল, বায়ু, মাটি, শব্দ শুধু পরিবেশকে দূষিত করছে না, সেই সঙ্গে বর্তমানে দৃশ্যদূষণ ও মনস্তাত্ত্বিক দূষণ যুবসমাজকে খুবই ক্ষতিগ্রস্ত করছে। রাস্তায় টাঙানো বিভিন্ন হোর্ডিং, ফেস্টুন, বিজ্ঞাপনের ব্যানার, কুরুচিকর ছবি ইত্যাদি দৃশ্যদূষণ ঘটায়।

পরিবেশ দূষণ আজ সারা পৃথিবীর একটি বিরাট সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে। রাষ্ট্রসংঘ ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে ৫ জুন পরিবেশ দিবস ঘোষণার মধ্য দিয়ে বিভিন্ন দেশ দূষিত পরিবেশ মুক্ত হয় যাতে বসবাস করতে পারে সে বিষয়ে সচেতন হয়েছে। পরিবেশ দূষণের মরণ ছোবল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য গাছ লাগানো প্রতিটি নাগরিকের কর্তব্য। কলকারখানা থেকে বর্জ্য পদার্থ যাতে নদীতে না মেশে তার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

শব্দদূষণ কমানোর জন্য শব্দ নিরোধক যন্ত্রের ব্যবহারের উপর জোর দিতে হবে। কৃষিকাজে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। সর্বোপরি পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে জনসাধারণকে শিক্ষিত করে তুলতে হবে। মানুষের সভ্যতা মানুষের হাতে যদি বিনাশ হয় তাহলে লাভ কী? এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের সবাইকে হাতে হাত মিলিয়ে কোমর বেঁধে নেমে পড়তে হবে। তবেই পৃথিবী বাঁচবে, আমরা বাঁচব।

আরও পড়ুন – প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রবন্ধ রচনা

Leave a Comment