মনোবিজ্ঞান অনুসন্ধানের পদ্ধতিসমূহ প্রশ্ন উত্তর Class 11

 মনোবিজ্ঞান অনুসন্ধানের পদ্ধতিসমূহ প্রশ্ন উত্তর

মনোবিজ্ঞান অনুসন্ধানের পদ্ধতিসমূহ প্রশ্ন উত্তর
মনোবিজ্ঞান অনুসন্ধানের পদ্ধতিসমূহ প্রশ্ন উত্তর

অনুসন্ধান বলতে কী বোঝো? মনোবৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান কী?

কোনো বিষয়বস্তু বা ঘটনা সম্পর্কিত জ্ঞান, তথ্য ইত্যাদি সংগ্রহ করাকে অনুসন্ধান বলা হয়।

মনোবৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান হল একটি দীর্ঘ এবং সুস্পষ্ট প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে একটি সমস্যাকে চিহ্নিত করা, গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা, তথ্যসংগ্রহ করা, অনুমান গঠন করা, পরীক্ষা করা, প্রতিবেদন তৈরি করা এবং মূল্যায়ন করা হয়।

অনুসন্ধান পদ্ধতি কাকে বলে? এর পর্যায়গুলি কী? 

যে পদ্ধতিতে অনুসন্ধান করা হয়, তাকেই অনুসন্ধান পদ্ধতি বলা হয়। এই পদ্ধতির সাহায্যে কোনো বিষয়, বস্তু, ঘটনা ইত্যাদি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্যসংগ্রহ করা হয়।

অনুসন্ধানের জন্য পাঁচটি সাধারণ পর্যায় রয়েছে, সেগুলি হল- বিন্যাস, ধারণা গঠন, সত্যতা নির্ণয়, মন্তব্য প্রদান, আলোচনা।

মনোবৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান পদ্ধতির লক্ষ্য এবং পদ্ধতিগুলি কী কী?

মনোবৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান পদ্ধতির প্রধান লক্ষ্য হল একটি নির্দিষ্ট আচরণ রেকর্ড করে সঠিকভাবে বর্ণনা করা এবং অন্য ধরনের আচরণের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে ব্যাখ্যা করা।

মনোবৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের পদ্ধতিগুলি হল- বর্ণনামূলক অনুসন্ধান পদ্ধতি, পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত অনুসন্ধান পদ্ধতি,পরীক্ষামূলক অনুসন্ধান পদ্ধতি।

বর্ণনামূলক অনুসন্ধান পদ্ধতি ও পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত অনুসন্ধান পদ্ধতি কী?

বর্ণনামূলক অনুসন্ধান পদ্ধতি হল এমন একটি বৈজ্ঞানিক উপায়, যা মানুষের আচরণ পর্যবেক্ষণ ও বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয়। এই পদ্ধতির সাহায্যে একজন শিক্ষার্থীর চিন্তাভাবনা, আবেগ এবং আচরণের একটি বিস্তারিত ধারণা অনুভব করা যায়।

যে অনুসন্ধান পদ্ধতিতে দুটি চলকের (Variable) মধ্যে সম্পর্কের দিক এবং শক্তিকে একটি সংখ্যা দ্বারা প্রতিনিধিত্ব করা হয়, তাকে পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত অনুসন্ধান পদ্ধতি বলা হয়। এর সাহায্যে দুটি চলের মধ্যে পারস্পরিক সহগ সম্পর্ক তৈরি হয়।

পরীক্ষামূলক অনুসন্ধান পদ্ধতি বলতে কী বোঝো? মনোবিজ্ঞানে অনুসন্ধান পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা কী?

যে পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় দুই বা ততোধিক চলকের মধ্যে কারণ এবং প্রভাব সম্পর্ক স্থাপনের জন্য পরীক্ষা করা হয়, তাকে পরীক্ষামূলক অনুসন্ধান পদ্ধতি বলা হয়।

মনোবিজ্ঞানে অনুসন্ধান পদ্ধতির বিশেষ প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এর সাহায্যে ব্যক্তি বা শিক্ষার্থীদের আচরণ, মতামত, চিন্তাভাবনা, আবেগ ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ করা যায় এবং এর সাহায্যে প্যানেল, পর্যবেক্ষণ, কেস বিশ্লেষণের মতো সম্ভাব্য সমস্ত উৎস থেকে তথ্যসংগ্রহ করা যায়।

মনোবিজ্ঞানে অনুসন্ধানের জন্য প্রচলিত পদ্ধতিগুলির নাম লেখো।

মনোবিজ্ঞানে কোনো বিষয়, বস্তু বা ঘটনা অনুসন্ধানের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে, সেগুলি হল- পর্যবেক্ষণ, ক্লিনিক্যাল, পরীক্ষণ, কেস স্টাডি, সহগতি ইত্যাদি। সাক্ষাৎকার, সার্ভে পদ্ধতি,

পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি কী? অক্সফোর্ড ডিকশনারিতে (Oxford dictionary) পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির কীরূপ সংজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে?

৩০০ পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি হল এমন একটি পদ্ধতি, যার সাহায্যে কোনো শিক্ষার্থীকে প্রত্যক্ষভাবে পর্যবেক্ষণ করে তার আচরণ লিপিবদ্ধ করা হয়।

অর্থাৎ শিক্ষার্থীর বাহ্যিক আচরণ সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়ার জন্য শিক্ষার্থীকে প্রত্যক্ষভাবে অধ্যয়ন করাকেই পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি বলে।

Oxford dictionary অনুসারে বলা যায়, পারস্পরিক সম্পর্ক ও কার্যকারণ সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা বিষয়গুলিকে সঠিকভাবে লক্ষ করা এবং তালিকাভুক্ত করাকেই পর্যবেক্ষণ বলে।

KD Bailey -কোন্ গ্রন্থে পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে আলোচনা করেছেন? তাঁর মতে, পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি কী?

GKD Bailey তার The Social Research গ্রন্থে পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।

তাঁর মতে পর্যবেক্ষণ এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে অন্য ব্যক্তির আচরণ একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে উদ্দেশ্যমূলকভাবে নিয়ন্ত্রণ না করে সতর্কভাবে লক্ষ করা এবং প্রাপ্ত ফলাফলকে বিশ্লেষণমূলক ব্যাখ্যার উপযোগী করে রেকর্ড করা।

পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির 4টি ব্যবহার লেখো।

পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির ব্যবহারগুলি হল- এটি মনস্তাত্ত্বিক অনুসন্ধানের একটি অত্যন্ত শক্তিশালী পদ্ধতি। এর মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট আচরণের নির্বাচন, প্রতীক, ফটোগ্রাফ ও রেকর্ড করা আচরণের বিশ্লেষণ ব্যবহার করে, নির্বাচিত আচরণ রেকর্ড করা হয়। নিরক্ষর মানুষ, মানসিক প্রতিবন্ধীদের আচরণ জানতে এই পদ্ধতির ব্যবহার রয়েছে। পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি পরীক্ষণমূলক পদ্ধতিতে কার্যকরী।

পর্যবেক্ষক কাকে বলে? পর্যবেক্ষণের তথ্যসংগ্রহকারী দুটি উপাদানের নাম লেখো।

যে ব্যক্তি বা দল পর্যবেক্ষণ করে, তাঁকে বা তাদেরকে পর্যবেক্ষক বলা হয়।

পর্যবেক্ষণে তথ্য সংগ্রহকারী দুটি উপাদানের নাম হল- স্কোর বোর্ড ও রেটিং স্কেল।

পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্যগুলি (Objectives) লেখো।

পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্যগুলি হল- সমস্যার কার্যকারণ উপলব্ধি করা, প্রকৃত তথ্যসংগ্রহ, প্রাক্কল্প গঠন, মৌলিকতা প্রদর্শন, নির্ভরযোগ্য ও যথার্থ গবেষণা।

উত্তম পর্যবেক্ষণের দুটি বৈশিষ্ট্য বা গুণ লেখো।

উত্তম পর্যবেক্ষণের দুটি বৈশিষ্ট্য বা গুণ হল-

  • পর্যবেক্ষককে নিরপেক্ষ হতে হবে। ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দকে গুরুত্ব দিয়ে পর্যবেক্ষণ না করে নিরপেক্ষ থেকে যা দেখবেন তাই লিপিবদ্ধ করবেন।
  • পর্যবেক্ষণ এমন পদ্ধতি ও উপায়ে করতে হবে যাতে তা যথার্থ ও নির্ভরযোগ্য হয়।

প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণ কাকে বলে?

যে পর্যবেক্ষণে পর্যবেক্ষক সরাসরি কার্যক্ষেত্রে উপস্থিত থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন ও সুচিন্তিত মতামত দিয়ে থাকেন, তাকে প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণ বলে। এক্ষেত্রে পর্যবেক্ষক ব্যক্তিদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন। এইধরনের প্রাথমিক তথ্য খুবই মূল্যবান। কিন্তু ব্যাপক অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে এটি প্রয়োগযোগ্য নয়। কারণ, এখানে ব্যক্তিগত পক্ষপাতিত্বের সম্ভাবনা থেকে যায়।

পরোক্ষ পর্যবেক্ষণ কী?

পর্যবেক্ষণের একটি অন্যতম প্রকারভেদ হল পরোক্ষ পর্যবেক্ষণ। অর্থাৎ যে পর্যবেক্ষণে জটিল তথ্যাবলি একটি প্রশ্নমালার মাধ্যমে ঘটনা বা বিষয় সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাতের মাধ্যমে তথ্যসংগ্রহ করা হয়, তাকে পরোক্ষ পর্যবেক্ষণ বলা হয়। এক্ষেত্রে, ঘটনা সম্পর্কে পূর্ণজ্ঞাত ও পক্ষপাতহীন ব্যক্তিদের নিকট থেকেই সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।

পরিবেশের ভিত্তিতে এবং প্রকৃতি অনুযায়ী পর্যবেক্ষণ পদ্ধতিকে কয়টি ভাগে ভাগ করা যায় ও কী কী?

পরিবেশের ভিত্তিতে পর্যবেক্ষণ মূলত দুই প্রকারের হয়-

প্রাকৃতিক পর্যবেক্ষণ নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষাগার পরিস্থিতিতে পর্যবেক্ষণ। প্রকৃতি অনুযায়ী পর্যবেক্ষণ পদ্ধতিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়।

যথা- স্বাভাবিক ও কৃত্রিম পর্যবেক্ষণ সংগঠিত ও অসংগঠিত পর্যবেক্ষণ অংশগ্রহণকারী ও অংশগ্রহণকারী নয় এমন পর্যবেক্ষণ।

স্বাভাবিক পর্যবেক্ষণ বলতে কী বোঝায়? উদাহরণ দাও।

যখন কোনো ব্যক্তিকে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে পর্যবেক্ষণ করা হয়, কিন্তু যাকে পর্যবেক্ষণ করা হয় সে পর্যবেক্ষণের বিষয় সম্পর্কে একেবারেই সচেতন থাকে না, তাকে স্বাভাবিক পর্যবেক্ষণ বলা হয়। যেমন- একজন শিক্ষার্থীকে পাঠরত অবস্থায় শিক্ষক পর্যবেক্ষণ করলে, শিক্ষার্থীটি শিক্ষকের পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে অবগত থাকে না, এটি হল স্বাভাবিক পর্যবেক্ষণ। এর মাধ্যমে শিক্ষক শিক্ষার্থী সম্পর্কে বেশকিছু তথ্য জানতে পারেন।

স্বাভাবিক পর্যবেক্ষণের সুবিধা ও অসুবিধা লেখো।

স্বাভাবিক পর্যবেক্ষণের সুবিধা :

ব্যক্তি স্বাভাবিকভাবেই পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নেয়, ফলে এতে ভুলের সম্ভাবনা কম থাকে।

অসুবিধা:

ব্যক্তির পর্যবেক্ষণে যদি কোনো ত্রুটি থেকে যায়, তবে সিদ্ধান্তে ত্রুটি আসতে পারে। পর্যবেক্ষণে নিরপেক্ষতার অভাব থাকতে পারে।

কৃত্রিম পর্যবেক্ষণ কাকে বলে? উদাহরণ-সহ ব্যাখ্যা করো।

যখন কোনো ব্যক্তিকে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে পর্যবেক্ষণ করা হয়, তাকে বলা হয় কৃত্রিম পর্যবেক্ষণ। যেমন- একজন শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করে দেখলেন কোনো কোনো শিক্ষার্থী তখনও কথা বলছে, কেউ কেউ মাথা নীচু করে শুয়ে আছে ইত্যাদি। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা যেহেতু শিক্ষক সম্পর্কে সচেতন, তাই এটি কৃত্রিম পর্যবেক্ষণ।

কৃত্রিম পর্যবেক্ষণের সুবিধা ও অসুবিধা লেখো।

কৃত্রিম পর্যবেক্ষণের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি হল-

সুবিধা: পরিবেশ নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় পর্যবেক্ষণজাত সিদ্ধান্তে ত্রুটির সম্ভাবনা কম থাকে।

অসুবিধা: পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পর্যবেক্ষণজাত সিদ্ধান্তে ত্রুটি থেকে যেতে পারে। পর্যবেক্ষকের নিরপেক্ষতার অভাব হতে পারে।

সংগঠিত পর্যবেক্ষণ কী? উদাহরণ-সহ লেখো।

সংগঠিত পর্যবেক্ষণ হল পূর্ব নির্ধারিত পরিকল্পনা অনুযায়ী সুশৃঙ্খলভাবে কোনো শিক্ষার্থী বা শিক্ষার্থীদলের আচরণের পর্যবেক্ষণ করা। এখানে পর্যবেক্ষক পরিকল্পনা অনুযায়ী শুধুমাত্র পর্যবেক্ষণ করবেন এবং লিপিবদ্ধ করবেন। যেমন-একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একজন পরিদর্শক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে পর্যবেক্ষণের সময়, পর্যবেক্ষণের বিষয়বস্তু ইত্যাদি জানিয়ে পরিদর্শন করতে আসেন, তবে এই ধরনের পর্যবেক্ষণ হবে সংগঠিত পর্যবেক্ষণ।

সংগঠিত পর্যবেক্ষণের দুটি সুবিধা এবং অসুবিধা লেখো।

সংগঠিত পর্যবেক্ষণের সুবিধা:

পর্যবেক্ষণ সংগঠিত হওয়ায় কী কী পর্যবেক্ষণ করা হবে, কীভাবে করা হবে, কখন পর্যবেক্ষণ করা হবে তা জানা যায়। তাই এক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণজাত ফল ত্রুটিমুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মাধ্যমে প্রাপ্ত ফলাফলের ভুলত্রুটি অপেক্ষাকৃত কম।

পর্যবেক্ষণের অসুবিধা: 

পর্যবেক্ষণের সংগঠনগত ত্রুটি হলে পর্যবেক্ষণজাত ফলাফল ত্রুটিপূর্ণ হবে। পর্যবেক্ষকের নিরপেক্ষতার অভাব হতে পারে।

অসংগঠিত পর্যবেক্ষণ কী? এর দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।

অসংগঠিত পর্যবেক্ষণ হল পর্যবেক্ষক এখানে দল বা শ্রেণিতে সরাসরি অংশগ্রহণ করে, তাদের সঙ্গে কিছুদিন অবস্থান করে, তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা করে উক্ত দল বা শ্রেণির সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান অর্জন করে।

বৈশিষ্ট্য: অসংগঠিত পর্যবেক্ষণে ভ্রান্ত তথ্যের ভিত্তিতে পর্যবেক্ষক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ভুলত্রুটি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সেগুলিকে সংশোধনের পরামর্শ দেয়। সাধারণত বৃহত্তর পরিধির পর্যবেক্ষণ অসংগঠিত প্রকৃতির হতে পারে।

অসংগঠিত পর্যবেক্ষণের সুবিধা ও অসুবিধা লেখো।

অসংগঠিত পর্যবেক্ষণের সুবিধা: পর্যবেক্ষক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সরলতা বা দুর্বলতার দিকসমূহ চিহ্নিত করতে পারেন।

অসুবিধা: অসংগঠিত পর্যবেক্ষণে পর্যবেক্ষণজাত ফলাফল ত্রুটিপূর্ণ হতে পারে। সকল ব্যক্তিকে একইভাবে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব নয়। পর্যবেক্ষকের নিরপেক্ষতার অভাব থাকতে পারে।

অংশগ্রহণকারী পর্যবেক্ষণ বলতে কী বোঝো? উদাহরণ দাও।

যে পর্যবেক্ষণে কোনো দলে পর্যবেক্ষক নিজে উপস্থিত থাকে অর্থাৎ, দলের মধ্যে থেকে যখন পর্যবেক্ষক পর্যবেক্ষণে অংশগ্রহণ করে, তাকে পর্যবেক্ষকের উপস্থিতিতে পর্যবেক্ষণ বা অংশগ্রহণকারী পর্যবেক্ষণ বলা হয়। এক্ষেত্রে পর্যবেক্ষকের উপস্থিতি যাদের পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে তাদেরকে সচেতন করে। যেমন-কোনো শ্রেণির মনিটর দলের অংশ হয়ে শিক্ষার্থীদের পর্যবেক্ষণ করে।

অংশগ্রহণকারী নয় পর্যবেক্ষণ বলতে কী বোঝো?

পর্যবেক্ষক যখন দলের বাইরে থেকে কোনো দলকে পর্যবেক্ষণ করেন, তখন সেই ধরনের পর্যবেক্ষণকে অংশগ্রহণকারী নয় পর্যবেক্ষণ বলা হয়। যেমন-একজন পরিদর্শক যখন বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন তখন তিনি বিদ্যালয়ের সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত নন। আবার একজন রেফারি যিনি ফুটবল ম্যাচ পর্যবেক্ষণ করেন, তিনি কোনো দলের অন্তর্ভুক্ত হন না।

অংশগ্রহণকারী পর্যবেক্ষণের দুটি সুবিধা এবং অসুবিধা লেখো।

সুবিধা: অংশগ্রহণকারী পর্যবেক্ষণের দুটি সুবিধা হল-

  • পর্যবেক্ষক দলের মধ্যে উপস্থিত থাকার ফলে যাদের পর্যবেক্ষণ করা হয়, তাদের সম্বন্ধে অনেক বেশি তথ্য জানা সম্ভব হয়। 
  • পর্যবেক্ষক যেহেতু দলেরই সদস্য তাই দলের অন্যান্য সদস্যরা নিজেদের আড়াল করে না।

অসুবিধা: অংশগ্রহণকারী পর্যবেক্ষণের দুটি অসুবিধা হল-

  • পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক হওয়ার ফলে পর্যবেক্ষণে নিরপেক্ষতার অভাব ঘটে।
  • পর্যবেক্ষকের দলগত আবেগের ফলে পর্যবেক্ষণজাত ফলের নৈর্ব্যক্তিকতা কম।

অংশগ্রহণকারী নয় পর্যবেক্ষণের দুটি সুবিধা এবং অসুবিধা লেখো।

সুবিধা: অংশগ্রহণকারী নয় পর্যবেক্ষণের দুটি সুবিধা হল-

  • এই পর্যবেক্ষণে দলগত আবেগ এবং অনুভূতি দ্বারা পর্যবেক্ষক সঞ্চালিত হন না, ফলে পর্যবেক্ষণের নৈর্ব্যক্তিকতা বাড়ে। 
  • পর্যবেক্ষক দলের সদস্য না হওয়ায় পর্যবেক্ষণে নিরপেক্ষতা থাকে।

অসুবিধা : অংশগ্রহণকারী নয় পর্যবেক্ষণের দুটি অসুবিধা হল-

  • যাদের বাইরে থেকে পর্যবেক্ষণ করা হয়, তাদের আচরণের অভ্যন্তরীণ গতিশীলতা পর্যবেক্ষকের পক্ষে পর্যবেক্ষণ করা কঠিন।
  • অনেকে পর্যবেক্ষকের সামনে সঠিক আচরণ করে না, ফলে পর্যবেক্ষণ অনেকসময় নিখুঁত হয় না।

ব্যক্তিনির্ভর পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি বা অন্তর্দর্শন কাকে বলে? নৈর্ব্যক্তিক পর্যবেক্ষণ কী?

ব্যক্তি নিজে যখন নিজের পরিবর্তন লক্ষ করে, তখন তাকে বলা হয় অন্তর্দর্শন (Introspection) অর্থাৎ যে পদ্ধতিতে মনকে নিজের মধ্যে অভিক্ষেপ করা হয় এবং তার দ্বারা কী ঘটছে তা জানার চেষ্টা করা হয়, তাই হল অন্তর্দর্শন।

নৈর্ব্যক্তিক পর্যবেক্ষণ হল অন্যের পরিবর্তন বাইরে থেকে লক্ষ করা। এই পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির দ্বারা আচরণের অনুশীলন করা যায়। সাধারণভাবে শ্রেণিকক্ষের পাঠদান করতে গিয়ে শিক্ষকগণ ছাত্রদের নানারকম আচরণ পর্যবেক্ষণ করেন। এই ধরনের পর্যবেক্ষণকে বলা হয় নৈর্ব্যক্তিক পর্যবেক্ষণ।

পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির মানোন্নয়নের তিনটি উপায় লেখো।

পর্যবেক্ষণ পদ্ধতিকে উন্নত করতে হলে যে যে বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন, সেগুলি হল-

উপযুক্ত নমুনা: পর্যবেক্ষণের জন্য নমুনা উপযুক্ত হওয়া প্রয়োজন।

প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক: যে ব্যক্তি কোনো দলকে পর্যবেক্ষণ করবেন, তিনি অবশ্যই যথাযথ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হবেন।

প্রাপ্ত তথ্য: পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে যেসব তথ্যসংগ্রহ করা হবে সেগুলি যথেষ্ট সংখ্যক হওয়া প্রয়োজন নতুবা পর্যবেক্ষণজাত সিদ্ধান্ত ত্রুটিপূর্ণ হতে পারে।

পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির চারটি গুরুত্ব উল্লেখ করো। 

পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির চারটি গুরুত্ব হল-

  • এই পদ্ধতি দ্বারা কোনো শিক্ষার্থী কোন্ পরিস্থিতিতে কী ধরনের আচরণ করছে তার নিখুঁত চিত্র পাওয়া যায়।
  • শিক্ষার্থীর পারদর্শিতামূলক দক্ষতা ও সামাজিক উন্নতি পরিমাপের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।
  • পর্যবেক্ষণ কৌশলের সাহায্যে সংগৃহীত তথ্যের সত্যতা ও নির্ভরযোগ্যতা অনেক বেশি।
  • এই কৌশলের সাহায্যে শিক্ষার্থীর কাগজে-কলমে প্রকাশিত ভাবনা ও আচরণকে আরও স্পষ্টরূপে প্রাকৃতিক অবস্থার পরিবেশে পাওয়া যায়।

পর্যবেক্ষণ পদ্ধতিতে তথ্যসংগ্রহের কৌশলগুলি আলোচনা করো।

পর্যবেক্ষণ পদ্ধতিতে তথ্যসংগ্রহের কৌশলগুলি হল-

অতীত সংক্রান্ত তথ্যাবলি (ARC), (CRC), চেকলিস্ট, রেটিং স্কেল, পদ্ধতির তিনটি ভাগ রয়েছে। যথা অভীক্ষা, কিউম্যুলেটিভ রেকর্ড কার্ড সমাজমিতি। এই সমাজমিতি সোসিওগ্রাম, পরিস্থিতিভিত্তিক

একটি আদর্শ পর্যবেক্ষণের চারটি গুণ লেখো।

একটি আদর্শ পর্যবেক্ষণের চারটি গুণ হল-

  • পর্যবেক্ষণ এমন পদ্ধতি বা উপায়ে করতে হবে, যাতে সেটি যথার্থ ও নির্ভরযোগ্য হয়।
  • পর্যবেক্ষককে পরিশ্রমী, উদ্যমী এবং সহনশীল হতে হবে, কারণ পর্যবেক্ষণ কখনো-কখনো শ্রমসাধ্য, ব্যয়সাপেক্ষ ও দীর্ঘমেয়াদী হয়ে থাকে।
  • পর্যবেক্ষককে নিরপেক্ষ থাকতে হবে। ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দকে গুরুত্ব দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা যাবে না। 
  • পর্যবেক্ষক ঘটনাকে তার বর্ণনা ও মতামত থেকে পৃথক করে দেখাবেন। ঘটনার বর্ণনা প্রথমে করবেন এবং পরে মতামত লিপিবদ্ধ করবেন।

পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির দুটি সুবিধা লেখো।

পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির দুটি সুবিধা হল-

  • শিক্ষকগণ পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির সাহায্যে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন আচরণের পরিবর্তন পরিমাপ করতে পারেন।
  • শিশু মনোবিজ্ঞানে ও অস্বাভাবিক মনোবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণের ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির দুটি অসুবিধা উল্লেখ করো।

পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির দুটি অসুবিধা হল-

  • পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির সাহায্যে কেবলমাত্র বাহ্যিক আচরণই বিশ্লেষণ বা পরিমাপ করা সম্ভব।
  • পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির ক্ষেত্রে বিভিন্ন ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে পার্থক্য থাকায় সংগৃহীত তথ্য সামান্যীকরণে বিশেষ অসুবিধা দেখা যায়।

হ্যাঁ-না তালিকা এবং স্কোর বোর্ড কী?

কতকগুলি উপাদান, বৈশিষ্ট্য, আচরণ ও কারণের তালিকা এর মধ্যে থাকে। কোনো ঘটনা, বিষয়বস্তু বা মানুষের মধ্যে এই সবকিছুর উপস্থিতি থাকলে হ্যাঁ-সূচক এবং অনুপস্থিতি থাকলে না-সূচক চিহ্ন দিয়ে তালিকাটি পূরণ করতে হয়। এটিই হল হ্যাঁ-না তালিকা।

স্কোর বোর্ড হল পর্যবেক্ষণ পদ্ধতিতে তথ্যসংগ্রহের একটি উপকরণ, যা তালিকা আকারে থাকে।

স্কেল স্পেশিমেন এবং চেকলিস্ট (Check List) বলতে কী বোঝো?

স্কেল স্পেশিমেন হল বিজ্ঞান গবেষণাগারে নমুনা হিসেবে ব্যবহৃত একধরনের স্কেল।

কোনো কার্য সম্পাদনের সময় নিশ্চিতভাবে ওই কাজের জিনিসগুলি হাতের কাছে পাওয়ার জন্য কাজ আরম্ভ করার আগে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলির একটা তালিকা প্রস্তুত করা হয়। এই তালিকাকে চেকলিস্ট বলা হয়।

সমাজমিতি পদ্ধতি (Sociometric) এবং মান নির্ধারণ পদ্ধতি বা রেটিং স্কেল (Rating Scale) কী? 

ব্যক্তি ও সমাজের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করার পদ্ধতিকেই সমাজমিতি পদ্ধতি বলে। মোরেনো (Moreno) নামক একজন সমাজবিজ্ঞানী এই পদ্ধতির প্রবর্তক। এই পদ্ধতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব পরিমাপক হল- সোসিওগ্রাম পদ্ধতি এবং পরিস্থিতিভিত্তিক অভীক্ষা।

শিক্ষার্থীর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে পর্যবেক্ষণলব্ধ অভিজ্ঞতাকে সুসংহত এবং নিয়ন্ত্রিতভাবে একটি পরিমাপক স্কেলের মাধ্যমে প্রকাশ করার কৌশলই হল মান নির্ধারণ বা রেটিং স্কেল (Rating Scale) পদ্ধতি।

অতীত সংক্রান্ত তথ্যলিপি বা অ্যানেকডোটাল রেকর্ড কার্ড (ARC) এবং কিউম্যুলেটিভ রেকর্ড কার্ড (CRC) কী?

ব্যক্তিজীবনে এমন অনেক অতীতের ঘটনা থাকে যেগুলি সম্পর্কিত তথ্য যে লিপিতে সংগ্রহ করে রাখা হয়, তাই হল অ্যানেকডোটাল রেকর্ড। এই তথ্যগুলিকে বিশ্লেষণ করলে ব্যক্তি সম্পর্কে অনেক কিছু জানা সম্ভব হয়।

কিউম্যুলেটিভ রেকর্ড কার্ড হল শিক্ষার্থীদের সম্পর্কীয় বিভিন্ন তথ্য, যা থেকে শিক্ষার্থী সম্পর্কে অনেক তথ্য পাওয়া যায়। যেমন- স্কুলের নাম, বাবা-মায়ের নাম, শিক্ষার্থীর বিষয়ের নম্বর, ওজন, উচ্চতা, ব্লাড গ্রুপ, শিক্ষার্থীর কোনো বিশেষ প্রতিবন্ধকতা (যদি থাকে), স্বাস্থ্য সম্পর্কীয় সাধারণ তথ্য ইত্যাদি।

পরিস্থিতিভিত্তিক পদ্ধতি বলতে কী বোঝো?

পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে কোনো ব্যক্তির সামাজিক অবস্থান বোঝানোর জন্য যে পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়, তাকে পরিস্থিতিভিত্তিক পদ্ধতি বলে। যেমন-কোনো বিবাদকালীন অবস্থায় অথবা সুখকর পরিস্থিতিতে কোনো ব্যক্তির অবস্থান জানার জন্য ব্যক্তিকে পর্যবেক্ষণ করে তার সম্বন্ধে তথ্য জানা সম্ভব হয়, তাকে পরিস্থিতিভিত্তিক পদ্ধতি বলে।

Guess Who Technique কী?

সমাজমিতি পদ্ধতির একটি অন্যতম ভাগ হল-কে অনুমান কৌশল বা Guess Who Technique। এই পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির মাধ্যমে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিত্ব সম্বন্ধে অনুমান করা যায়। এক্ষেত্রে শব্দমূলক ছবির সাহায্যে (ব্যক্তিত্ব নির্দেশকারী) বিভিন্ন শিক্ষার্থীর ব্যক্তিত্ব নির্দেশ করে যেসব সহপাঠীদের একই ধরনের ব্যক্তিত্ব তাদের শনাক্ত করা যায়।

নিজস্ব মতামত প্রকাশের পদ্ধতি বলতে কী বোঝো? এই পদ্ধতিতে তথ্যসংগ্রহের কৌশলগুলি কী কী?

যে পদ্ধতিতে ব্যক্তির নিজের মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে তার সম্বন্ধে বিভিন্ন তথ্যসংগ্রহ করে অনুসন্ধান করা সম্ভব হয়। সেই পদ্ধতিকে নিজস্ব মতামত প্রকাশের পদ্ধতি বলে।

নিজস্ব মতামত প্রকাশের পদ্ধতিতে যে যে কৌশলের মাধ্যমে তথ্যসংগ্রহ করা যায়, সেগুলি হল ব্যক্তিগত লিপি, প্রশ্নগুচ্ছ, সাক্ষাৎকার, আত্মজীবনী ইত্যাদি।

সাক্ষাৎকার পদ্ধতিটি সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো।

যে পদ্ধতিতে একজন ব্যক্তি (সাক্ষাৎকারী) কথাবার্তার মাধ্যমে অপর কোনো ব্যক্তি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্যসংগ্রহ করে, তাকে সাক্ষাৎকার বলে। সাক্ষাৎকারের উদ্দেশ্য- চাকুরির জন্য, পরামর্শদানের জন্য ইত্যাদি।

আত্মজীবনী বলতে কী বোঝো?

নিজস্ব মতামতের মাধ্যমে অনুসন্ধানের বিভিন্ন কৌশল বা পদ্ধতি রয়েছে। সেগুলির মধ্যে অন্যতম হল আত্মজীবনী। আত্মজীবনী থেকে ব্যক্তি সম্পর্কে নানা ধরনের তথ্যসংগ্রহ করা যেতে পারে। সাধারণত বিভিন্ন শিক্ষাবিদ, মনীষী, বিজ্ঞানী প্রমুখ ব্যক্তিদের আত্মজীবনী পাওয়া যায়।

প্রশ্নগুচ্ছ এবং ব্যক্তিগত লিপি বলতে কী বোঝো?

বিভিন্ন ধরনের প্রশ্নের মাধ্যমে ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব, অনুরাগ, ব্যক্তিসত্তার বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি জানা সম্ভব হয়। এই কৌশল হল প্রশ্নগুচ্ছ। এটি তথ্য অনুসন্ধানের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল।

ব্যক্তি কর্তৃক লিখিত ডায়েরি বা দিনলিপি থেকে ব্যক্তি সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়।

নিজস্ব মতামত প্রকাশের পদ্ধতির দুটি সুবিধা লেখো।

নিজস্ব মতামত প্রকাশের পদ্ধতির দুটি সুবিধা হল-

ব্যক্তি নিজেই তার সম্বন্ধে মতামত দেয়, ফলে অন্য কোনো ব্যক্তির দ্বারা প্রভাবিত হয় না।

এই পদ্ধতিতে অনেক সহজে ব্যক্তি সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য জানা সম্ভব হয়। এই তথ্যসমূহকে বিশ্লেষণ করে ব্যক্তির বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য জানা যায়।

নিজস্ব মতামত প্রকাশের পদ্ধতির দুটি অসুবিধা বা সীমাবদ্ধতা লেখো।

নিজস্ব মতামত প্রকাশের পদ্ধতির অসুবিধাগুলি হল-

  • ব্যক্তি অনেকসময় অনেক গোপন তথ্য প্রকাশ করতে নাও পারেন।
  • ব্যক্তি নিজের সম্বন্ধে অনেক বেশি বাড়িয়েও বলতে পারেন।

পর্যালোচনামূলক পদ্ধতি বলতে কী বোঝো? এই পদ্ধতিতে তথ্যসংগ্রহের কৌশলগুলি আলোচনা করো।

বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে যেগুলির মাধ্যমে ব্যক্তি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায় এবং প্রাপ্ত তথ্যগুলিকে যথাযথভাবে বিশ্লেষণ করে ব্যক্তির বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে জানা যায়। এই পদ্ধতিগুলিকে বলে পর্যালোচনামূলক পদ্ধতি।

এই পদ্ধতিতে তথ্যসংগ্রহের ক্ষেত্রে যে-সমস্ত কৌশল ব্যবহার করা হয়, সেগুলি হল- পরীক্ষণমূলক পদ্ধতি (Experimentation), কেস স্টাডি (Case Study), সার্ভে পদ্ধতি (Survey Method), সহগতি (Correlation)।

মনোবিজ্ঞানে পরীক্ষা কী?

একজন মনোবিজ্ঞানী বা একজন কাউন্সিলর দ্বারা একজন ব্যক্তির মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা বোঝার জন্য একটি পরীক্ষা বা একটি মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা করা হয়।

যে-কোনো বিষয়ে একটি অজানা প্রভাব বা আইন আবিষ্কার করার জন্য এবং একটি হাইপোথিসিস প্রতিষ্ঠা করার জন্য নিয়ন্ত্রিত অবস্থার অধীনে পরিচালিত একটি পদ্ধতি হল পরীক্ষা বা Experimentation। 

পরীক্ষণমূলক পদ্ধতি বলতে কী বোঝো?

ব্যক্তি, বস্তু বা ঘটনা সম্বন্ধে অনুসন্ধানের জন্য একটি সুপরিকল্পিত পদ্ধতি হল পরীক্ষণ পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে বিভিন্ন প্রশ্নের সঠিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক উত্তর পাওয়া যায়। মানুষের আচরণকে নৈর্ব্যক্তিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক করে তোলার জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।

GW Best এবং FS Chapre-এর মতে, পরীক্ষামূলক পদ্ধতি কী?

GW Best-এর মতে, পরীক্ষামূলক পদ্ধতি হল সতর্কতার সঙ্গে নিয়ন্ত্রিত শর্তাধীনের মধ্যে কোনো ঘটনা বা সমস্যার কী ফল পাওয়া যায় বা কী ঘটতে পারে, তার খুঁটিনাটি ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ।

FS Chapre-এর মতে, পরীক্ষামূলক পদ্ধতি হল নিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতিতে সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ।

পরীক্ষামূলক পদ্ধতির দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।

পরীক্ষামূলক পদ্ধতির দুটি বৈশিষ্ট্য হল-

চলের নিয়ন্ত্রণ: পরীক্ষণ পদ্ধতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল বিভিন্ন চলের নিয়ন্ত্রণ। পরিবেশের উপর পরীক্ষকের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকে বলে পরীক্ষণ পদ্ধতিতে ব্যাপক সুবিধা পাওয়া যায়। পরীক্ষণ পদ্ধতিতে পরীক্ষক উদ্দীপক বা অনির্ভরশীল চল নিয়ন্ত্রণ করেন। যেমন- প্যাভলভের পরীক্ষায় প্যাভলভ খাদ্য উপস্থাপন, ঘণ্টা বাজানো ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করেছেন।

বস্তুনিষ্ঠতা: পরীক্ষণ পদ্ধতি একটি বস্তুনিষ্ঠ পদ্ধতি। এখানে ব্যক্তির পছন্দ-অপছন্দ, ইচ্ছা-অনিচ্ছার স্থান নেই। এই পদ্ধতিতে বস্তুনিষ্ঠভাবে অনুসন্ধানকার্য পরিচালনা করা হয়। পরীক্ষণ পদ্ধতি বস্তুনিষ্ঠ হওয়ায় যে ব্যক্তিই পরীক্ষা করুন না কেন ফলাফল একই পাওয়া যাবে।

মনোবিজ্ঞানে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা কী কী?

মনোবৈজ্ঞানিক বা মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা বিভিন্ন প্রকার-

পরীক্ষাগার পরীক্ষা (Laboratory Experiment), ক্ষেত্র পরীক্ষা (Field Experiment), আধা পরীক্ষা (Quasi Experiment), প্রাকৃতিক পরীক্ষা (Natural Experiment), পারস্পরিক পরীক্ষা (Correlational Experiment) I

চারটি পরীক্ষামূলক পদ্ধতি কী কী?

চারটি পরীক্ষামূলক পদ্ধতি হল- স্বাধীন পরিমাপ, বারবার পরিমাপ, মিলিত জোড়া ও আধা পরীক্ষামূলক নকশা।

পরীক্ষামূলক মনোবিজ্ঞানের পদ্ধতিগুলি কী কী?

পরীক্ষামূলক মনোবিজ্ঞানীরা বিভিন্ন পরীক্ষামূলক গবেষণা পদ্ধতি ও কার্যসম্পাদন বা টুল্স (Tools) ব্যবহার করে থাকেন। মানুষের আচরণ বোঝার জন্য পরীক্ষামূলক মনোবিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত বিভাগগুলি হল-

পরীক্ষানিরীক্ষা (Experiment), কেস স্টাডি (Case Study), প্রাকৃতিক পর্যবেক্ষণ (Naturalistic Observation), পারস্পরিক সম্পর্ক গবেষণা (Correlational Research)।

পুনরাবৃত্তি বলতে কী বোঝায়?

পুনরাবৃত্তি বলতে বোঝায়, পরীক্ষক অর্থাৎ যিনি পরীক্ষা করছেন তিনি অবস্থা, পরিস্থিতি, বিষয় ইত্যাদি পুনরাবৃত্তি করে একটি সাধারণ সত্যে উপস্থিত হন। এর ফলে গবেষণাটি সর্বজনীন হয়। যেমন- প্যাভলভের কুকুরের পরীক্ষায় ঘন্টাধ্বনির সঙ্গে খাবার দেওয়া পুনরাবৃত্তি করার ফলে ঘন্টাধ্বনি ও লালাক্ষরণের অনুবর্তন ঘটে। তাই প্যাভলভের অনুবর্তনটি সর্বজনীন। একে প্রয়োগ করে শিশুদের অভ্যাস শিখন, গাণিতিক প্রক্রিয়া শিখন ইত্যাদি সহজতর হয়। এগুলির ক্ষেত্রে পুনরাবৃত্তি গুরুত্বপূর্ণ।

পরীক্ষণ নকশা বলতে কী বোঝো? পরীক্ষণমূলক পদ্ধতির স্তরগুলি কী কী?

পরীক্ষণ পদ্ধতিতে পরীক্ষণের জন্য কয়েকটি স্তর রয়েছে। এই পদ্ধতিতে যে ধারাবাহিক স্তর ব্যবহার করা হয়, তাকে বলা হয় পরীক্ষণ নকশা।

পরীক্ষণমূলক পদ্ধতির স্তরগুলি হল- সমস্যা নির্বাচন, চলক নির্বাচন, প্রকল্প গঠন, পরীক্ষামূলক নকশা, তথ্যসংগ্রহ, তথ্যসংগ্রহের কৌশলের নির্ভরযোগ্য, সিদ্ধান্তগ্রহণ।

শিক্ষাবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে কী কী পরীক্ষামূলক নকশা হতে পারে? নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষা কী?

শিক্ষাবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে যে যে পরীক্ষামূলক নকশা হতে পারে, সেগুলি হল- পরীক্ষাগারের মধ্যে পরীক্ষা, পরীক্ষাগারের বাইরে পরীক্ষা।

একটি নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষা হল, একটি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা যা নিয়ন্ত্রিত অবস্থার অধীনে করা হয়। যার অর্থ হল একটি সময়ে শুধুমাত্র একটি বা কয়েকটি কারণ পরিবর্তন করা হয়, অন্য সবগুলি স্থির রাখা হয়।

আরও পড়ুন – সরকারের বিভিন্ন রূপ প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment