![]() |
একটি গাছ একটি প্রাণ রচনা |
ভূমিকা
রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন-“বর্তমানে আমরা সভ্যতার যে প্রবণতা দেখি তাতে বোঝা যায় যে, সে ক্রমশই প্রকৃতির সহজ নিয়ম পেরিয়ে বহুদূরে চলে যাচ্ছে। মানুষের শক্তি জয়ী হচ্ছে প্রকৃতির শক্তির উপরে, তাতে লুটের মাল যা জমে উঠল তা প্রভূত। এই জয়ের ব্যাপারে প্রথম গৌরব পেল মানুষের বুদ্ধিবীর্য, কিন্তু তার পিছন পিছন এল দুর্বাসনা। …..প্রকৃতিকে অতিক্রমণ কিছুদূর পর্যন্ত সয়, তারপরে ফিরে আসে বিনাশের পালা।” সেই বিনাশের পালা শুরু হয়ে গেছে। প্রকৃতিকে যথেচ্ছভাবে ব্যবহারের প্রতিক্রিয়ায় মানুষের জীবন আজ দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। শুধু প্রাকৃতিক দূষণ নয়, প্রাকৃতিক দুর্বিপাকের কাছে মানুষ ক্রমশ অসহায় হয়ে পড়ছে। সেই অসহায়তা থেকে বাঁচতে গেলে প্রথমেই প্রয়োজন গাছ লাগানো। কারণ- ‘একটি গাছ একটি প্রাণ।’
জীবমণ্ডলে উদ্ভিদের গুরুত্ব
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল, অশ্মমণ্ডল ও জলমণ্ডল জুড়ে যেখানে জীবের বসবাস তাকে জীবমণ্ডল বলে। সমুদ্র ট্রেঞ্চের ৬০০০ মিটার গভীরতা থেকে ভূ-পৃষ্ঠের ৬০০০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত এই পরিমণ্ডলের বিস্তৃতি। ভূ-পৃষ্ঠের উপরিভাগে যে জীবমন্ডল বর্তমান, তার বেশিরভাগই স্থলভাগে অবস্থিত। আর এই জীবমণ্ডলে রয়েছে লক্ষ লক্ষ প্রজাতির উদ্ভিদ, প্রাণী ও জীবাণু। এই উদ্ভিদের উপর নির্ভর করেই প্রাণীরা আসা-যাওয়া করেছে- বিভিন্ন যুগে। পৃথিবীর আদিম বাতাসে কোন অক্সিজেন ছিল না। কিন্তু পরে পৃথিবীর আদিম উদ্ভিদগুলিও তাদের সালোকসংশ্লেষ কিয়ার সাহায্যে বাতাসে অক্সিজেনের ভাগ বাড়িয়ে তোলে এবং অন্যান্য উদ্ভিদ ও প্রাণীর আবির্ভাবকে সম্ভব করে তোলে। একটি সদ্যোজাত শিশু বাঁচবার জন্য যেমন তার মায়ের উপর নির্ভরশীল, তেমনি মানুষের জীবনধারণের জন্য উদ্ভিদের উপর আমরা নির্ভরশীল।
গাছ ও অরণ্য রক্ষার গুরুত্ব
সুতরাং উদ্ভিদের উপর আমাদের একান্ত নির্ভরশীলতাই, উদ্ভিদকে বাঁচিয়ে রাখার একমাত্র গুরুত্ব। গাছ যে শুধু আমাদের খাদ্য ও অক্সিজেন যোগায় তাই নয়, তারা খরা, বন্যা ও ভূমিক্ষয় রোধ করে আবহাওয়ার সমতা রক্ষা করে এবং সর্বতোভাবে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে থাকে। সেজন্য সমাজে বাঁচতে গেলে বনভূমি থাকা বাঞ্ছনীয়। উঁচু জমিতে যখন বৃষ্টিপাত হয় তখন যদি সেখানে বনভূমির আচ্ছাদন থাকে তাহলে অধিকাংশ বৃষ্টির জলই বনভূমির বিরাট উদ্ভিদগুলি শিকড়ের সাহায্যে শোষণ করে নেয়, জমির জলধারণের ক্ষমতা বাড়ে এবং গাছের পাতার মধ্যে দিয়ে (প্রস্বেদন • ক্রিয়ায়) ঐ জল আবার জলীয় বাষ্পরূপে বাতাসে ফিরে আসে, আবহাওয়ার শুষ্কতা তাতে দূর হয়। দ্বিতীয়তঃ, বনভূমি থাকার জন্য মাটির নীচে গর্ত করে বহু প্রাণী বাস করে এবং মাটির উপর ঝরা পাতা-লতা ও মৃত প্রাণীর দেহাবশেষ ছড়িয়ে থাকায় মাটির জল ধারণের মোট ক্ষমতা বাড়ে। তার ফলে বৃষ্টির সব জল আর নদীগুলিতে নেমে আসে না, বর্ষায় বন্যা হবার আশঙ্কা দূর হয়। তৃতীয়তঃ, অরণ্য-প্রকৃতির জলচক্র, কার্বনচক্র, অক্সিজেন চক্র, নাইট্রোজেন চক্র প্রভৃতি স্বাভাবিক চক্রগুলিকে সচল ও সক্রিয় রাখে বলেই মানুষের জীবনধারণের উপযোগী উপাদানগুলি পাওয়া যায়।
অরণ্য ধ্বংসের স্বরূপ ও কারণ
বন ও গাছ রক্ষায় করণীয়
উপসংহার
সচেতনতাই পারে যে কোন বিপদ থেকে উদ্ধার করতে। সেই সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং তার জন্য মূল্যায়ন ব্যবস্থা ও সমন্বয়ী চিন্তাধারার প্রয়োজন। গাছ তথা বনের উপযোগিতার ইতিহাস তুলে ধরে আমাদের শপথ নিতে হবে-একটি গাছ একটি প্রাণ, সুতরাং প্রত্যেকে একটি করে গাছ লাগান। কারণ বাঁচতে গেলে খাদ্য চাই, খাদ্যের জন্য কৃষি চাই, কৃষির জন্য চাই বৃষ্টি, বৃষ্টির জন্য চাই মেঘ এবং মেঘের জন্য অবশ্যই চাই গাছ।