![]() |
‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতাটির নামকরণের সার্থকতা আলোচনা করো। |
ভূমিকা
সাহিত্যের নামকরণ সর্বদা তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলতে চান সাহিত্যিক। পাঠকের সঙ্গে বিষয়ের সম্পর্ক স্থাপনের আগেই নামকরণে ব্যবহৃত শব্দ বা শব্দগুচ্ছের সাহায্যে সাহিত্যিক বিষয়কে ইঙ্গিতপূর্ণ করে তোলার সুযোগ পান। তাই সাহিত্য পাঠের আগে পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা তিনি সেরে ফেলেন নামকরণের মাধ্যমে। বিষয়ভিত্তিক, চরিত্রকেন্দ্রিক, ব্যঞ্জনাধর্মী প্রভৃতি নামকরণ করা হয় সাহিত্যের। কবি মৃদুল দাশগুপ্তের ‘ধানক্ষেত থেকে’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতাটির নামকরণ বিষয়কেন্দ্রিক।
সার্থকতা বিচার
দেশের সংকটময় পরিস্থিতিতে কবির তার পাশে থাকার অঙ্গীকার আলোচ্য কবিতার উপজীব্য। যেসময় রাজনৈতিক হানাহানিতে সমাজে নেমে এসেছে গভীর অবক্ষয়, শাসকের রাজনৈতিক চোখরাঙানিতে মানুষের মধ্যে থেকে মুছে গেছে ভালোবাসা-সহানুভূতি- সম্প্রীতিবোধ, যেসময় রাজনীতি পরিণত হয়েছে রণনীতিতে, প্রতিদিন রক্তাক্ত হয়েছে সমাজের প্রতিটি কোণ-সেই ২০০৬-২০০৭ সালের অবক্ষয়িত সমাজ-রাজনৈতিক পরিবেশে কবি অনুভব করেছেন জননী-জন্মভূমির কান্না। অগণিত ব্যক্তিমানবীর বেদনা দেশজননীর হৃদয়কেই ভারাক্রান্ত করে তুলেছিল। কবি দেখেছিলেন মানুষ হারিয়ে ফেলেছে প্রতিবাদের ভাষা। কবি বুঝেছিলেন ভাগ্যের হাতে ভবিষ্যতের ভার দিয়ে অসহায় বাংলার মানুষ বেঁচে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে কবি অনুভব করেছিলেন তাঁর কলম থেকে সূচনা হতে পারে বিপ্লবের। তাই তিনি তাঁর কবিতায় শব্দের শক্তি দিয়ে মানুষের মনে বিস্ফোরণ ঘটাতে চেয়েছেন। তাঁর সজাগ বিবেক ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতাটির মধ্য দিয়ে সম্পূর্ণভাবে জননী জন্মভূমির পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছে। আর এই সূত্রে কবিতাটির নামকরণ সার্থক হয়ে উঠেছে।