যখন
প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলীর মতে, জার্মানরা যখন লীডার কিংবা ইরানিরা যখন গজল গান একমাত্র তখনই তিনি সেই গানের মধ্যে রবীন্দ্রসংগীত জাতীয় কিঞ্চিৎ রসের সন্ধান পান আর লীডার কিংবা গজলের সঙ্গে তুলনা করতে গেলেই সেইসকল গানকে ছাপিয়ে ধরা পড়ে রবীন্দ্রনাথের গানের অখণ্ড, সম্পূর্ণ রূপ।
প্রসঙ্গ ও কারণ
সৈয়দ মুজতবা আলী তাঁর ‘পঁচিশে বৈশাখ’ রচনায় রবীন্দ্রনাথের গানের ধর্ম সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে আলোচ্য মন্তব্যটি করেছেন।
জার্মান ‘লীডার’ কিংবা ইরানীয় ‘গজল’-এর সঙ্গে রবীন্দ্রসংগীতের তুলনায় ও বিশ্লেষণে লেখক খুঁজে পেয়েছেন রবীন্দ্রনাথের গানের অখণ্ড, সম্পূর্ণ রূপ। যখনই তিনি ‘লীডার’ কিংবা ‘গজল’ শুনেছেন তখন তা তাঁর কাছে অপূর্ব মনে হলেও অন্তরে একটা অতৃপ্তি থেকে গিয়েছে এবং তাঁর মনে হয়েছে এ গান অসম্পূর্ণ-“আরো কিছুকাল ধরে চলতে পারতো।” পক্ষান্তরে, রবীন্দ্রনাথের গান সঞ্জীবনী সুধার মতো লেখকের অন্তরাত্মাকে সর্বদা জাগরূক রেখেছে। যদি কখনও মনে হয়ে থাকে যে, এ গান তাঁকে অতৃপ্ত রেখে গেল তবে তার কারণ অসম্পূর্ণতা নয়- তার কারণ, উচ্চাঙ্গের রসসৃষ্টি। উচ্চাঙ্গ রস যে ব্যঞ্জনা সৃষ্টি করে তা রবীন্দ্রসংগীতকে বারবার উপভোগ করার অনুকূল অবস্থা তৈরি করেছে। এ গান সম্পূর্ণ তৃপ্ত করে এবং ব্যঞ্জনার অতৃপ্তি দিয়ে হৃদয়-মন ভরিয়ে দেয়। তাই রবীন্দ্রনাথের গান কখনোই লেখকের কাছে অসম্পূর্ণরূপে প্রতিভাত হয়নি।