![]() |
দেশ ভ্রমণের প্রয়োজনীয়তা রচনা
|
ভূমিকা
বিচিত্র বৃক্ষের শব্দে স্নিগ্ধ এক দেশ/এ পৃথিবী’ (পৃথিবীলোক: জীবনানন্দ দাশ), যাকে ঘিরে কোথাও রয়েছে রূপ-রস-গন্ধের মায়াময় জগৎ, কোথাও বা রয়েছে অস্কার ওয়াইল্ড বর্ণিত- ‘suffocating sensuousness’-এর স্বপ্নরাজ্য কিংবা ওয়ার্ডসওয়ার্থের বলা colour and form’-এর জগৎও। এসব বৈচিত্র্য ছাড়াও এই পৃথিবীর নানান স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসবাস করে নানান ভাষা-নানান পরিধানে বৈচিত্র্যময় মানুষজন। সুদূরের পিয়াসী মানুষজন দেশভ্রমণের মাধ্যমে পৃথিবীর সেসব সৌন্দর্যকে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার ভিতর দিয়ে উপলব্ধি করতে চায়, জানতে চায় নানান মানুষকেও। যেন মুখর হয়ে বলতে চায়- “থাকব নাক’ বন্ধ ঘরে দেখব এবার জগৎটাকে।”
দেশভ্রমণ কী
ঘুরে বেড়াবার নেশা যেন মিশে রয়েছে মানুষের রক্তপ্রবাহের মধ্যেই। নিজের দেশের নানান জায়গা অর্থাৎ এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত কিংবা অন্য দেশের পাহাড়-পর্বত, নদনদী, মরুভূমি, শহর প্রভৃতি জায়গায় অজানাকে জানা, অচেনাকে চেনা বা আদেখাকে দেখার জন্যে মানুষের সেই ঘুরে বেড়ানো বা ভ্রমণই হল দেশভ্রমণ।
দেশভ্রমণের প্রয়োজনীয়তা
দেশভ্রমণকারীদের মধ্যে নানান ইতিবাচক ফল দেখা দেয়। দেশভ্রমণের সেই ইতিবাচক ফলগুলো হল-
কৌতূহল নিবারণ : নিজের দেশ থেকে সারা বিশ্বেই প্রকৃতি সাজিয়ে রেখেছে তার অপার উপকরণের ডালি পাহাড়-পর্বত-নদনদী-মরুভূমি-শহর-গ্রাম প্রভৃতি থেকে নানান জায়গায় নানান মানুষকে দেখার কৌতূহল অনেকের মধ্যেই থাকে। পড়াশোনার গন্ডী পেরিয়ে প্রত্যক্ষভাবে সেসব কৌতূহল মেটাতে চায় মানুষ। দেশভ্রমণের মাধ্যমে সেই কৌতূহল
মেটানো সম্ভব হয়।
জানার ইচ্ছাপূরণ : মানুষের জানার কোনো শেষ নেই, শেষ নেই জানার ইচ্ছা এবং বোঝার ইচ্ছারও। কেননা তারা জানে এই পৃথিবীর অনেক কিছুই অনেকেরই এখনও অজানা থেকে গিয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাই নির্দ্বিধায় স্বীকার করেছেন-
সেই অজানাকে জানা, অচেনাকে চেনার ইচ্ছা পূরণ করে দেশভ্রমণ।
সাময়িক মুক্তির আনন্দ : সংসার এক অতলান্ত সমুদ্র, যেন বা নিরন্তর সংগ্রামের ক্ষেত্রভূমিও। সেই সংসারের বাঁধনে এবং কর্মের চাপে আটকে পড়ে একটা সময় হাঁপিয়ে পড়ে মানুষজন। সেকারণে সংসারজীবন থেকে এবং কর্মজীবন থেকে সাময়িক মুক্তি চায় তারা। তাদের মন তখন ছুটে চলে প্রকৃতির সৌন্দর্যের কোলে, হয়তো বা সেখানে, যেখানে-
হয়তো বা আরও অন্য কোথাও। দেশভ্রমণই এনে দিতে পারে সাময়িক সেই মুক্তির স্বাদ।
জ্ঞানের পিপাসা মেটানো : পুথিগত বিদ্যাই সব নয়। তার বাইরেও প্রকৃতি, ইতিহাস, বিজ্ঞান ও ভূগোলের অনেক কিছু থাকে, সেসবের জ্ঞান অর্জন করতে হলে দেশভ্রমণ এক অপরিহার্য মাধ্যম। সেদিক দিয়ে তা ছাত্রছাত্রীদের কাছে শিক্ষার অঙ্গও।
মনের সংকীর্ণতা দূরীকরণ : রবীন্দ্রনাথ একবার বলেছিলেন, ‘এ গৃহ রুদ্ধ রাখিও না, দ্বার খুলিয়া দাও।’ তাঁর এই উপদেশ অমূলক কিছু নয়। বস্তুত কূপমণ্ডুকতা মানুষের মনে সংকীর্ণতা আনে। দেশভ্রমণে নানান জাতির মানুষের সঙ্গে। পরিচিত হবার সুযোগ মেলে বলে সেই সংকীর্ণতা কেটে গিয়ে মনে আসে উদারতা।
উপসংহার
কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ‘এই জীবন’ নামক কবিতায় লিখেছিলেন-‘বাঁচতে হবে বাঁচার মতন’, সেভাবে বাঁচার মতন বাঁচতে গেলে এই পৃথিবীর সৌন্দর্য উপভোগ করা একান্তভাবেই জরুরি। সেই জরুরি প্রয়োজন মেটাতে পারে দেশভ্রমণ। সার্বিক বিচারে দেশভ্রমণের প্রয়োজনীয়তা তাই অস্বীকার্য।