অথবা, রবীন্দ্রসংগীতের সঙ্গে নটরাজের নৃত্যভঙ্গির তুলনা করার কারণ-সহ ব্যাখ্যা দাও।
নটরাজ
হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী ‘নটরাজ’ হলেন দেবাদিদেব মহাদেব তথা শিবের মহাজাগতিক নর্তক রূপ। তাঁর নৃত্যকে তাণ্ডব বলা হয়। শিবকে নটরাজ রূপের মধ্যে দিয়ে নৃত্যের অধিপতি হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। নটরাজ হল ধর্ম ও শিল্পকলার মধ্যে সংযোগের প্রতীক তাই নটরাজের মূর্তিকে পরিপূর্ণতার পূর্ণাঙ্গ রূপ হিসেবে ধরা হয়।
নটরাজের অঙ্গভঙ্গি
নটরাজের নৃত্যের অঙ্গভঙ্গিগুলি মহাদেবের পাঁচটি ক্রিয়াকলাপের প্রতিনিধিত্ব করে-সৃষ্টি (ডান হাতের ডমরু), সুরক্ষা (ডান হাতের অভয়মুদ্রা), ধ্বংস (বাম হাতের আগুন,) বিভ্রম (নটরাজের ডান পা ‘অপস্মর’ পুরুষকে পদদলিত করে), মুক্তি (শিবের সামনের বাম হাত তার উত্থিত বাম পায়ের দিকে ইশারা)।
নটরাজের প্রসঙ্গ উত্থাপনের কারণ
রবীন্দ্রনাথের গানের প্রতিটি শব্দচয়ন, শব্দগুলিকে বিশেষ স্থলে সংস্থাপন, ভাব, অর্থ, মাধুর্যের পরিসমাপ্তি নটরাজের প্রত্যেকটি অঙ্গভঙ্গির মতোই বৈচিত্র্যময়। তাই নটরাজের প্রত্যেকটি অঙ্গভঙ্গির সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের গানের প্রত্যেকটি শব্দের তুলনা প্রসঙ্গে আলোচ্য বিষয়টির অবতারণা।
তুলনার কারণ
নটরাজমূর্তির মধ্যে প্রতীকী হিসেবে দেখা যায় তাণ্ডব এবং লাস্য রূপ। চারটি হাতের অবস্থান বুঝিয়ে দেয় ধ্বংস, অভয়, মধুর এবং আশীর্বাদ। একইভাবে গানের শব্দকেও হতে হয় বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ যেমন- রবীন্দ্রসংগীতের প্রতিটি শব্দ। এ ছাড়াও, প্রাণের বাণী হয়ে উঠতে গেলে শব্দের মধ্যে চাই ভাষার লাবণ্য, গভীর ব্যঞ্জনা, রসের বৈচিত্র্য, তথ্যের সমাবেশ ও তত্ত্বের গভীরতার মতো সংবেদনশীল বিষয়গুলি-আর কবিগুরুর গানের মধ্যে তা স্পষ্টরূপে ধরা পড়ে। নটরাজের মূর্তির মতো তাই রবীন্দ্রনাথের গানকেও যথাযথ, অপরিবর্তনীয় এবং শ্রেষ্ঠ বলে মনে হয়, সেই বিচারে এই তুলনা করেছেন প্রাবন্ধিক।