![]() |
ফলিত ভাষাবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখাগুলির উল্লেখ যে-কোনো একটি শাখার আলোচনা করো। |
ভাষাবিজ্ঞানের মূল আলোচনার বিষয় হল মানুষের ভাষা এবং সেই ভাষার সঙ্গে মানবজীবনের বিভিন্ন দিকের পারস্পরিক সম্পর্ক। এই ভাষাবিজ্ঞানের প্রধান দুই শাখা হল- (১) প্রধান ভাষাবিজ্ঞান এবং (২) ফলিত ভাষাবিজ্ঞান।
ভাষার সঙ্গে সমাজের সম্পর্ক এবং ভাষার সঙ্গে অন্যান্য বিদ্যার সম্পর্ক ভাষাবিজ্ঞানের যে-শাখায় বিচারবিশ্লেষণ করা হয়, তাই হল ফলিত ভাষাবিজ্ঞান। ফলিত ভাষাবিজ্ঞানের ৬টি শাখা, যথা- (২.১) সমাজভাষাবিজ্ঞান, (২.২) মনোভাষাবিজ্ঞান, (২.৩) স্নায়ুভাষাবিজ্ঞান, (২.৪) নৃভাষাবিজ্ঞান, (২.৫) শৈলীবিজ্ঞান ও (২.৬) অভিধান বিজ্ঞান।
সমাজভাষাবিজ্ঞান
একই অঞ্চলের মধ্যে বসবাসকারী একই ভাষাগোষ্ঠীর লোকেদের মধ্যে সামাজিক অবস্থানভেদে কথার যে তারতম্য লক্ষ করা যায়, তাকেই সমাজভাষা হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। যে শাস্ত্র এই সমাজভাষা নিয়ে আলোচনা করে তাই হল সমাজভাষাবিজ্ঞান। বর্তমানে ভাষাবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখারূপে চিহ্নিত হয়েছে ‘সমাজভাষাবিজ্ঞান’। যদিও এই শাখাটি এখনও বিকাশের স্তরে আছে। একই সমাজের অন্তর্গত ভাষাগত বৈচিত্র্যই সমাজভাষাবিজ্ঞানের প্রধান বিষয়বস্তু হলেও, এই শাস্ত্রে একটি ভিন্ন ভাষা ও ভাষাগোষ্ঠী সম্পর্কে একটি নির্দিষ্ট সমাজভুক্ত মানুষের মনোভাবও বিশ্লেষণ করা হয়। ভাষাতাত্ত্বিক ফিশম্যান সমাজভাষাবিজ্ঞানের তিনটি ক্ষেত্র নির্দেশ করেছেন। সেগুলি হল- (১) বর্ণনামূলক, (২) প্রয়োগমূলক ও (৩) পরিবর্তনমান। বর্ণনামূলক সমাজভাষাবিজ্ঞানের মধ্যে বক্তা, শ্রোতা ও উপলক্ষ্যের দিকটি প্রধানত আলোচনা করা হয়। পরিবর্তমান সমাজভাষাবিজ্ঞানে ইতিহাসের দিক থেকে সমাজভাষার উদ্ভব, বিবর্তন এবং ব্যবহারের দিকটি আলোচিত হয়। আর প্রয়োগমূলক সমাজভাষাবিজ্ঞানে সামাজিক কল্যাণসাধনের লক্ষ্যকে সামনে রেখে সমাজভাষার ব্যবহারের দিকটি বিশ্লেষিত হয়। এখানে মাতৃভাষার প্রয়োজনীয়তা, তা শেখানোর জন্য উন্নততর পদ্ধতি, অন্যান্য ভাষাশিক্ষার আবশ্যিকতা, অনুবাদ নীতি-নির্ধারণ, বহুভাষী রাষ্ট্রে সংযোগকারী ভাষা নির্ধারণ প্রভৃতি দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়।