বাংলার চিকিৎসাবিজ্ঞানে কাদম্বিনী (বসু) গঙ্গোপাধ্যায়ের ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করো

বাংলার চিকিৎসাবিজ্ঞানে কাদম্বিনী (বসু) গঙ্গোপাধ্যায়ের ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করো
বাংলার চিকিৎসাবিজ্ঞানে কাদম্বিনী (বসু) গঙ্গোপাধ্যায়ের ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করো।

প্রারম্ভিক জীবন

বাংলার চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে মহিলা চিকিৎসক হিসেবে কাদম্বিনী দেবী একক ও অনন্য। নারীশিক্ষার নানান প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি এশিয়ায় প্রথম সরকার স্বীকৃত মহিলাদের স্কুল বেথুন বালিকা বিদ্যালয় থেকে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাস করেন। এরপর তিনি এফ এ পাস করেন ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে। কিন্তু কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ডিগ্রি প্রদানে গড়িমসি করায় একদল শুভানুধ্যায়ী শিক্ষকের আন্দোলনে অবশেষে ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে কাদম্বিনী বসু ও চন্দ্রমুখী বসুকে প্রথম মহিলা স্নাতক হিসেবে ঘোষণা করে। 

প্রথম বাঙালি মহিলা চিকিৎসক হওয়ার অনন্য নজির

স্নাতক হওয়ার পর স্বামী দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায় কাদম্বিনী দেবী মেডিকেল কলেজে ডাক্তারি পড়তে শুরু করেন। সেকালের প্রেক্ষিতে এ ছিল প্রায় এক অসম্ভব ঘটনা। ফলে সেখানেও নানা প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে তাঁকে লড়তে হয়েছে; শেষ পরীক্ষায় মেডিসিনের অধ্যাপক রাজেন্দ্রচন্দ্র চন্দ্র তাঁকে প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষায় ১ নম্বর কম দিয়ে ফেল করিয়ে দেন। কিন্তু পরে প্রিন্সিপালের হস্তক্ষেপে কাদম্বিনী ডাক্তার হিসেবে স্বীকৃতি পান। ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে কাদম্বিনী (বসু) গঙ্গোপাধ্যায় লেডি ডাফরিন হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে নিযুক্ত হন।

চিকিৎসাবিজ্ঞানে অবদান

বিলেত ডিগ্রিধারী প্রথম ভারতীয় মহিলা চিকিৎসক হিসেবে কাদম্বিনী দেবী ১৮৯২-তে বিলেতে যান এবং সেখান থেকে এল আর সি পি (LRCP) এডিনবরা, এল আর সি এস (LRCS) গ্লাসগো এবং জি এফ পি এস (GFPS) ডাবলিন উপাধি অর্জন করেন, যা এককথায় অসামান্য। এই মহৎ প্রাণ চিকিৎসক বহু সামাজিক কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি শ্রমিকদের দুর্দশা সরেজমিনে দেখতে বিহার ও ওড়িশা গিয়েছিলেন সরকারি অনুসন্ধান কমিটির সদস্য হিসেবে। ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে কাদম্বিনী দেবী নেপালের রাজমাতার চিকিৎসার্থে সেদেশেও গিয়েছিলেন। নেপালে তাঁর হাত ধরেই আধুনিক জন-চিকিৎসার সূত্রপাত হয়।

Leave a Comment