বাংলার পটচিত্রের ইতিহাসে কালীঘাটের পটের ভূমিকা আলোচনা করো

বাংলার পটচিত্রের ইতিহাসে কালীঘাটের পটের ভূমিকা আলোচনা করো
বাংলার পটচিত্রের ইতিহাসে কালীঘাটের পটের ভূমিকা আলোচনা করো।

কালীঘাটের পটের সূচনা

লোকশিল্পের প্রাচীন ও সুপ্রসিদ্ধ মাধ্যমগুলির অন্যতম হল পট শিল্প। বাংলায় কালীঘাট পট-এর সূচনা হয় ১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় কালীঘাট মন্দির প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর। এই মন্দির সংলগ্ন চত্বরকে কেন্দ্র করেই প্রসার লাভ করে কালীঘাট পটশিল্প।

কালীঘাটের পটে প্রকাশিত সমাজ ও সংস্কৃতির রূপ

বিভিন্ন জীবিকার মানুষের তৈরি করা পটে দেশীয় শিল্পরীতির অপূর্ব সংমিশ্রণ ঘটেছিল কালীঘাট পটচিত্রে। মূলত হিন্দু দেবদেবীদের ছবি সরা বা চৌকাকৃতি পটে এঁকে বা পুতুলরূপে কালীঘাট পট তৈরি করা হত। পরবর্তীকালে বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনিও পটচিত্রে স্থান পায়। ধর্মীয় বিষয় ছাড়াও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক বিষয় বিশেষত বাবু সংস্কৃতির ব্যভিচার, সাজসজ্জা প্রভৃতিও ব্যঙ্গাত্মক রূপে কালীঘাট পটচিত্রে ফুটিয়ে তুলেছিলেন তৎকালীন পটশিল্পীরা। সমাজ পরিবর্তনের স্বরূপ নিপুণভাবে ফুটে উঠেছিল এইসব পটচিত্রে। একআনা মূল্যের বিনিময়ে মানুষ পটগুলি কেনার জন্য ভিড় জমাত। কিছু কিছু ক্ষেত্রে জনসচেতনতার প্রসারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল কালীঘাট পটচিত্র। এমনকি সুদূর প্যারিসেও পাড়ি জমিয়েছিল বাংলার এই প্রসিদ্ধ কালীঘাট পটশিল্প।

পটশিল্পের বিখ্যাত চিত্রকরেরা

পটশিল্পের বিখ্যাত চিত্রকরদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন কালীচরণ ঘোষ, নিবারণ ঘোষ, গোপাল দাস, গণেশ চিত্রকর, প্রভাস চিত্রকর প্রমুখ। ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে রজনী চিত্রকর কালীঘাট পটের শেষ জীবিত শিল্পী হিসেবে রাষ্ট্রীয় পুরস্কারে সম্মানিত হন। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিদেশি শিল্পীদের রঙের ঔজ্জ্বল্যের সঙ্গে পাল্লা দিতে না-পেরে, শেষপর্যন্ত ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ এই শিল্পের ক্রম অবলুপ্তি ঘটে।

Leave a Comment