বাংলা গানের ইতিহাসে অতুলপ্রসাদ সেনের অবদান আলোচনা করো

বাংলা গানের ইতিহাসে অতুলপ্রসাদ সেনের অবদান আলোচনা করো
বাংলা গানের ইতিহাসে অতুলপ্রসাদ সেনের অবদান আলোচনা করো।

অতুলপ্রসাদ সেনের আবির্ভাব-বাংলা গানে নবদিগন্ত উন্মোচন

বাংলা মায়ের চিরশ্যামল ক্রোড়ে জন্মগ্রহণ করলেও অতুলপ্রসাদ সেনকে কর্মসূত্রে চলে যেতে হয় উত্তরপ্রদেশের রাগসংগীতের পীঠস্থান লখনউ শহরে। লখনউয়ের সংগীত ঘরানা তাঁর কাছে অনবদ্য সুরের ডালি তুলে ধরেছিল, যা থেকে তিনি রংবেরঙের সুর চয়ন করে বাংলা গানের এক নবদিগন্ত উন্মোচন করেছেন। তাঁর হাত ধরেই বাংলা গানে শাস্ত্রীয় সংগীতের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। ঠুংরি ছাড়াও হোরী, কাজী, শাওন ও গুজরাটি-খাম্বাজ প্রভৃতি সুরের ভাবধারাকে সংযোজিত করে বাংলা গানকে তিনি এক অন্য মাত্রা দিয়েছেন।

বিবিধ গানের পরিচয়

অতুলপ্রসাদের গানগুলিকে আমরা দেবতা, প্রকৃতি, স্বদেশ, মানব ও – বিবিধ এই পাঁচটি পর্যায়ে ভাগ করে নিতে পারি। তিনি দেবতাকে অন্বেষণ করেন হৃদয় ব্যথায় জারিত দুঃখের তীব্র ব্যাকুলতায়। ‘কোথা হে ভবের কান্ডারি!/একা আমি জীবনতরী বাইতে নারি’ গানটি এই পর্যায়ের উল্লেখযোগ্য গান। অনাবিল প্রকৃতির রূপলাবণ্য তাঁর কণ্ঠে ভেসে ওঠে, ‘মেঘেরা দল বেঁধে যায় কোন্ দেশে’ গানটিতে। পরাধীনতার তীব্র জ্বালা বিবিধ গানের পরিচয় তাঁকে কতটা ব্যথিত করেছিল তা ‘হও ধরমেতে বীর’, ‘উঠগো ভারতলক্ষ্মী’, ‘বলো বলো সবে’, ‘মোদের গরব, মোদের আশা’ গানগুলিতেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তাঁর মানব তথা বিবিধ পর্যায়ের গানে বিরহ ব্যথা ঝরে পড়ে, ‘কাঙাল বলিয়া করিয়ো না হেলা’, ‘বঁধু এমন বাদলে তুমি কোথা?’, ‘বঁধুয়া নিদ নাহি আঁখিপাতে’ প্রভৃতি গানগুলি এ প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য।

বৈশিষ্ট্য ও বৈচিত্র্য

এ ছাড়া বাংলা ভাষায় গজল রচনায় তিনিই পথিকৃৎ। আবার বাউল, ভাটিয়ালি, কীর্তন প্রভৃতি দেশজ সুরেও তিনি অনেক গান বেঁধেছিলেন। এককথায় বলতে গেলে ঊনবিংশ শতাব্দীর বাংলা গানে অতুলপ্রসাদ সেন এক অবিস্মরণীয় সাংগীতিক ব্যক্তিত্ব। তাঁর গানকে যাঁরা কণ্ঠে বয়ে বেড়িয়েছেন তাঁরা হলেন রেনুকা দাশগুপ্ত, কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ।

Leave a Comment