বাংলা গানের ধারায় সলিল চৌধুরীর বিশিষ্টতা সম্পর্কে আলোচনা করো

বাংলা গানের ধারায় সলিল চৌধুরীর বিশিষ্টতা সম্পর্কে আলোচনা করো
বাংলা গানের ধারায় সলিল চৌধুরীর বিশিষ্টতা সম্পর্কে আলোচনা করো।

প্রাথমিক পরিচয়

রবীন্দ্র ও নজরুল পরবর্তী বাংলা সংগীত জগতে সলিল চৌধুরীর মতো সংগীতপ্রতিভা সত্যিই বিরল। বাঙালি সহ সমগ্র ভারতবাসীর প্রিয় সলিলদা ছিলেন একাধারে সংগীত পরিচালক, গীতিকার, সুরকার এবং গল্পকার। বাংলা, হিন্দি, মালয়ালম সহ বিভিন্ন চলচ্চিত্রে তিনি সংগীত পরিচালনা করেছেন। তিনি অসম্ভব ভালো বাঁশি, পিয়ানো ও এসরাজ বাজাতে পারতেন। এ ছাড়া তাঁর কবিতা লেখার দক্ষতাও ছিল অসম্ভব নন্দিত ও প্রশংসিত। পিতা জ্ঞানেন্দ্রময় চৌধুরীর কাছে সলিল চৌধুরীর সংগীতের হাতেখড়ি এবং পিতৃব্য নিখিল চৌধুরীর কাছেও তিনি তালিম নেন।

গানের জগতে প্রবেশ ও জনপ্রিয়তা লাভ

১৯৪৪-এ কলকাতায় পড়তে এসে তিনি ভারতীয় গণনাট্য বা আই পি টি এ-তে যোগ দেন এবং গান লেখা ও গানের সুর করা শুরু করেন। এইসময় ‘বিচারপতি’, ‘রানার’, ‘অবাক পৃথিবী’-র মতো তার সার্থক গণসংগীতগুলি এই সংঘের মাধ্যমে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ছড়িয়ে পড়ে। তিনি ১৯৪৯-এ পরিবর্তন’ এবং ৫৩-তে ‘দো বিঘা জমিন’ ছবির সংগীত পরিচালনার মাধ্যমে যথাক্রমে বাংলা ও হিন্দি ছবির জগতে পা রাখেন। তাঁর সংগীতে পশ্চিমি ও ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সংগীতের প্রভাব লক্ষ করা যায়। সলিল চৌধুরীর সুর করা কালজয়ী গানগুলি একসময় হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্র এবং মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে কণ্ঠে ঘুরেছে। পঞ্চাশের দশকে তাঁর হাতেই সৃষ্টি হয় ‘বম্বে ইউথ কয়্যার’ এবং ‘পলিফোনিক কয়্যার’। এ ছাড়া গণসংগীতে কোরাস তাঁরই হাতে তৈরি। ‘ও আলোর পথযাত্রী’ আজও মানুষের কানে বাজে।

স্বাতন্ত্র্য, স্বীকৃতি ও সিদ্ধি

‘সংগীত নাটক অ্যাকাডেমি’ পুরস্কার লাভ করেন। তিনি বহুস্বর পদ্ধতি, পিয়ানোতে হারমোনিক কর্ডের ব্যবহার, ভোকাল হারমোনি কিংবা পাশ্চাত্য ক্রিসক্রস প্যাটার্নের মতো বিভিন্ন অভিনব পদ্ধতির প্রয়োগ ঘটিয়েছিলেন। ভারতীয় সংগীতে সলিল চৌধুরীর মতো সংগীতপ্রতিভা বিরল, আর বাংলা গানেও রবীন্দ্র-নজরুলের পরে এমন অসামান্য সংগীতকার আর জন্মগ্রহণ করেনি।

Leave a Comment