বাংলা গানে চারণকবি মুকুন্দদাসের অবদান সম্পর্কে আলোচনা করো

বাংলা গানে চারণকবি মুকুন্দদাসের অবদান সম্পর্কে আলোচনা করো
বাংলা গানে চারণকবি মুকুন্দদাসের অবদান সম্পর্কে আলোচনা করো

বাংলা গানে মুকুন্দ দাসের আবির্ভাব

নজরুলের সংগীত পরাধীন ভারতে যে-বিদ্রোহের আগুন জ্বালিয়েছিল তার সলতেটা পাকিয়েছিলেন নজরুলের জন্মের আগে এমন এক সংগীত ব্যক্তিত্ব, যিনি আপামর জনমানসে ‘চারণকবি’ নামে পরিচিত। তিনি হলেন ‘চারণকবি’ মুকুন্দদাস। বিদ্রোহী কবি নজরুলের উক্তিই মুকুন্দদাসের কবিত্বশক্তির মূল্যায়নের ক্ষেত্রে যথেষ্ট। মুকুন্দদাসের গান শুনে নজরুল তাঁকে সাক্ষাতে বলেছিলেন, ‘যাঁরা গান বা বক্তৃতা দ্বারা দেশের জাগরণ আনতে চেষ্টা করেন তাঁরা সকলেই চারণ। আপনি, আমি, আমরা সবাই চারণ, তবে আপনি আমাদের সম্রাট অর্থাৎ চারণ সম্রাট।’

মুকুন্দদাসের প্রভাব ও জনপ্রিয়তা

বাংলা মায়ের দামাল ছেলে চারণকবি মুকুন্দদাস। বৈষ্ণব পরিবারে জন্মগ্রহণ করার সুবাদে বৈয়বধর্ম ও কীর্তন গানের প্রতি ছোটোবেলা থেকেই তাঁর আকর্ষণ ছিল। তিনি সাধু রামানন্দের কাছে বৈষ্ণবধর্মে দীক্ষা নিয়ে পিতৃদত্ত যজ্ঞেশ্বর নাম থেকে মুকুন্দদাস অর্থাৎ কৃষ্ণের ভক্তে পরিণত হন। বঙ্গভঙ্গ রদ আন্দোলনকালে অশ্বিনীকুমার দত্তের বক্তৃতায় অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি ‘মাতৃপূজা’ নামে যাত্রাপালা লেখেন এবং স্বদেশি যাত্রাদল গড়ে তোলেন। উক্ত যাত্রাপালার ‘ভয় কি মরণে রাখিতে সন্তানে…’ গানটি পরাধীন ভারতীয়দের অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষিত করেছিল। তাঁর ‘মাতৃপূজা’ ব্রিটিশ সরকার বাজেয়াপ্ত করে এবং তাঁকে তিন বছর অন্যায়ভাবে কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে। পরবর্তীতে তাঁর রচিত ‘পল্লিসেবা’, ‘ব্রহ্মচারিণী’, ‘সমাজ ও পথ’ সবকটি পালাই বাজেয়াপ্ত ও নিষিদ্ধ হয়।

গুরুত্ব ও প্রাসঙ্গিকতা

মাটি ও মানুষের সঙ্গে মুকুন্দদাসের সম্পর্ক ছিল নিবিড়। তাঁর গান গণমানুষের অন্তরকে অতি সহজেই অনুরণিত করে তুলত এবং তা মেহনতি গুরুত্ব ও প্রাসঙ্গিকতা মানুষ ও বিপ্লবীদের অনুপ্রেরণা জাগাত। তাঁর ‘ছেড়ে দাও কাচের চুড়ি বঙ্গনারী’, ‘বান এসেছে মরা গাঙে’ গানগুলি আজও জনপ্রিয় এবং প্রাসঙ্গিক থেকে গেছে।

Leave a Comment