বাংলা চলচ্চিত্রের ধারায় পরিচালক মৃণাল সেনের অবদান আলোচনা করো

বাংলা চলচ্চিত্রের ধারায় পরিচালক মৃণাল সেনের অবদান আলোচনা করো
বাংলা চলচ্চিত্রের ধারায় পরিচালক মৃণাল সেনের অবদান আলোচনা করো।

পরিচালক মৃণাল সেনের আত্মপ্রকাশ ও স্বাতন্ত্র্য

পাঁচের দশকে বাংলা সিনেমা সাবালকত্ব অর্জন করে যাঁদের মুনশিয়ানায়, তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন মৃণাল সেন। তাঁর প্রথম ছবি ‘রাতভোর’ (১৯৫৬), যদিও ছবিটি খুব একটা প্রচার পায়নি। এর তিন বছর পর মুক্তিপ্রাপ্ত ‘নীল আকাশের নীচে’ (১৯৫৯) সিনেমাটি তাঁকে প্রথম পরিচিতি দেয়। কর্মজীবনে বহু চড়াই- উতরাই পথ পেরিয়ে ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে ‘বাইশে শ্রাবণ’ সিনেমার মধ্য দিয়ে সিনেমায় তাঁর প্রকৃত আত্মপ্রকাশ। এর পরের বছর তিনি তৈরি করেন ‘আকাশ কুসুম’। তবে ‘বাইশে শ্রাবণ’ ছবিতে জ্ঞানেশ মুখোপাধ্যায়ের অসাধারণ অভিনয় তাঁকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি দেয়। এই সিনেমা দুটি দর্শকমনে তেমন সাড়া ফেলতে না-পারলেও, তিনি কখনোই ব্যর্থতার কাঁটার মুকুটকে পরাজয়ের ফলক বলে মনে করেননি; বরং তা থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেকে ভেঙেচুরে নতুনভাবে তৈরি করেছেন। সেইজন্য তাঁর কাছ থেকে পঞ্চাশের বেশি বিভিন্ন ধরনের সিনেমা উপহার পেয়েছে বাঙালি দর্শক।

‘ভুবন সোম’ ও ভারতীয় সিনেমায় নব তরঙ্গ

মৃণাল সেনের কর্মজীবনের অন্যতম সেরা কাজটি ভারতীয় দর্শককে উপহার দেন ১৯৬৯-এ ‘ভুবন সোম’ নামক হিন্দি ছবিটির মাধ্যমে। গুজরাটে বসবাসকারী এক কড়া নিয়মনিষ্ঠ বুরোক্র্যাটের সঙ্গে এক গ্রাম্য বালিকার সম্পর্ক নিয়ে তৈরি এ ছবির গল্প বলার ভঙ্গি, চিত্রভাষা ও উৎপল দত্তের অভিনয় তৎকালীন হিন্দি সিনেমাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। ফলে এই সিনেমার হাত ধরে ভারতীয় সিনেমায় ‘New wave cinema’-র (নব তরঙ্গ) জন্ম হয়। পরবর্তীতে শ্যাম বেনেগাল, গোবিন্দ নিহালিনী, আজিজ মির্জার মতো পরিচালকেরা মৃণাল সেনের ‘ভুবন সোম’-এর দ্বারা প্রভাবিত হয়েই চলচ্চিত্রের নতুন ভাষানির্মাণে ব্রতী হন।

বিশেষত্ব এবং অবদান

এরপর একে একে সাতের দশকের কলকাতায় পরিস্থিতি নিয়ে মৃণাল সেনের তৈরি ‘কলকাতা’, ‘পদাতিক’ ও ‘কোরাস’ রীতিমতো সাড়া ফেলে। এ ছাড়া তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য ছবিগুলি হল- ‘মৃগয়া’, ‘একদিন প্রতিদিন’, খারিজ’, ‘আকালের সন্ধানে’, ‘খণ্ডহর’ প্রভৃতি। তাঁর এই সমস্ত ছবিতে তিনি মানবিক ও সামাজিক সম্পর্কগুলিকে সমালোচকের দৃষ্টিভঙ্গিতে বিশ্লেষণ করতে চেয়েছেন। পুরোনোকে ভেঙে নতুনকে গড়ে তোলার জিজ্ঞাসা ও আর্তিকেই মৃণাল সেন রূপ দিয়েছেন তাঁর ছবিতে।

Leave a Comment