![]() |
বাংলা লোকসংগীতের ধারার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। |
উদ্ভবের ইতিহাস
বিভিন্নতা ও বৈচিত্র্য
বাংলায় অঞ্চলভেদে লোকগানের বিভিন্নতা আছে। পূর্বপ্রান্তে লোকগানের যে ধারাটি প্রধান, তার নাম ভাটিয়ালি। এই গান ধীর-মন্থর চলনে ব্যক্তিহৃদয়ের উচ্ছ্বাস-অনুভূতি কিংবা তত্ত্বভাবনাকে লিরিকাল মাধুর্যে ফুটিয়ে তোলে। এ ছাড়াও প্রচলিত সারি, জারি, ধামাইল, মুর্শিদি, মারফতি, বিয়ের গান কিংবা পালাগানেও ভাটিয়ালি সুরেরই প্রভাব দেখা যায়। উত্তরবঙ্গে লোকসংগীতের প্রধান রূপটি হল ভাওয়াইয়া। ভাওয়াইয়ার গায়ক বাউদিয়াদের গলায় বাউল, বৈয়ব, ফকির, দরবেশ সকলের সুরের মূর্ছনা প্রকাশ পায়। সেইসঙ্গে চটকা, জাগগান, ক্ষীরোল, মনসার গানের মতো ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানমূলক গানও এ অঞ্চলে প্রচলিত। বাংলার পশ্চিমে লোকগানের মূল ধারাটি হল ঝুমুর। যদিও ঝুমুর গান ছোটনাগপুর মালভূমি অঞ্চল থেকে মধ্য ভারত হয়ে গুজরাট পর্যন্ত ব্যাপ্ত। রাধাকৃষ্ণের বিরহ-মিলন এসব গানের মূল বিষয় হলেও রাজনীতি-সমাজ-ব্যঙ্গ ও বিদ্রুপকে কেন্দ্র করেও ঝুমুর গান বাঁধা হয়। ‘নাচনী’ নামে পরিচিত নৃত্যশিল্পীদের সঙ্গে ঝুমুরের গভীর যোগ রয়েছে। এ ছাড়া ভাদু, টুসু, হাপু গান, কুর্মি গানও এ অঞ্চলের সম্পদ। দক্ষিণবঙ্গে লোকসংগীতের প্রধান রূপটি হল বনবিবির গান। তা ছাড়া দক্ষিণরায়ের গান, অষ্টক গান ইত্যাদিও এসব অঞ্চলে শোনা যায়।
অন্যান্য ধারার কথা
আবহমান বাংলা গানের ধারায় পূর্বে আলোচিত ধারাগুলি ছাড়াও আরও অনেক বৈচিত্র্য আছে। পশ্চিমবঙ্গের মধ্যভাগে যেমন বোলান বা আলকাপ গানের প্রচলন আছে। তেমনি দুই বাংলার সম্পদ হল বাউল সম্প্রদায়ের গান। এই বাউলদের গানে প্রকাশ পেয়েছে মানবতার মর্ম কথা। বৌদ্ধ তন্ত্র, সুফি তন্ত্র, হঠযোগ কিংবা সহজিয়া বৈয়ব-দর্শন মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে এসব গানে। এভাবেই বাংলার • লোকগানের বৈচিত্র্যপূর্ণ বিভিন্ন ধারা যুগ যুগ ধরে বয়ে চলে বাঙালির – সাংগীতিক ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ ও চির-আধুনিক করে চলেছে।