বাংলা সিনেমায় নিউ থিয়েটার্সের অবদান সম্পর্কে আলোচনা করো

বাংলা সিনেমায় নিউ থিয়েটার্সের অবদান সম্পর্কে আলোচনা করো
বাংলা সিনেমায় নিউ থিয়েটার্সের অবদান সম্পর্কে আলোচনা করো।

নিউ থিয়েটার্স-এর আবির্ভাব

ম্যাডান কোম্পানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ‘টকি’ বা সবাক সিনেমাকে বাঙালির ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছিলেন নিউ থিয়েটার্সের প্রতিষ্ঠাতা বিলেত ফেরত ইঞ্জিনিয়ার বীরেন্দ্রনাথ সরকার। বিদেশ থেকে নানান যন্ত্রপাতি এনে এবং প্রশিক্ষণের বন্দোবস্ত করে তিনি নিউ থিয়েটার্সে স্টুডিয়ো সহ এক উন্নত পরিকাঠামো গড়ে তোলেন। একইসঙ্গে তিনি সেসময়ের সমস্ত দক্ষ পরিচালক, গীতিকার, সুরকার, গায়ক ও অভিনেতাদের নিউ থিয়েটার্সের ছাতার তলায় আনতে সমর্থ হন।

বীরেন সরকারের সাংগঠনিক দক্ষতা ও  নিউ থিয়েটারের সাফল্য

বীরেন সরকারের একক উদ্যোগে দেবকী কুমার বসু ও প্রমথেশ বড়ুয়ার মতো পরিচালক, নীতিন বসু এবং মুকুল বসুর মতো ক্যামেরাম্যান ও শব্দগ্রাহক, রাইচাঁদ বড়াল-কৃষ্ণচন্দ্র দে-পঙ্কজ মল্লিক-শচীন দেববর্মনদের মতো গায়ক ও সুরকার; আর ধীরেন গাঙ্গুলি, প্রমথেশ বড়ুয়া, ছবি বিশ্বাস, পাহাড়ী সান্যাল ও কানন দেবীর মতো অভিনেতাদের সঙ্গে প্রেমেন্দ্র মিত্র, প্রেমাঙ্কুর আতর্থী, অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের মতো উচ্চমানের সাহিত্যিকেরা বাংলা সিনেমার মূলস্রোতে অবতীর্ণ হন।নিউ থিয়েটার্সের প্রথম ছবি শরৎচন্দ্রের ‘দেনাপাওনা’।

ছবিটি ভালো না-চললেও বীরেন সরকার দমে যাননি। ১৯৩২-এ রবীন্দ্রনাথের আমন্ত্রণে তিনি তৈরি করেন নাটক ‘নটীর পূজা’, যদিও সেটি সিনেমা ছিল না। এরপরে নিউ থিয়েটার্স প্রযোজিত ও দেবকী বসু পরিচালিত ‘চন্ডীদাস’ ১৯৩২-এ মুক্তি পেয়ে প্রথম ভারতজোড়া সাফল্য পায়। ক্রমে একে একে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘পুরাণ ভগৎ’ (হিন্দি) এবং ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক সংবলিত ‘বিদ্যাপতি’ মানুষের মনে দারুণ সাড়া ফেলে। এগুলি ছাড়াও প্রমথেশ বড়ুয়ার দ্বিভাষিক ছায়াছবি ‘দেবদাস’ ভারতব্যাপী জনপ্রিয় হয়। 

সুদূরপ্রসারী প্রভাব

এভাবেই ‘মুক্তি’, ‘মঞ্জিল’, ‘রজতজয়ন্তী’, ‘গৃহদাহ’ প্রভৃতি সিনেমাগুলি যথেষ্ট বাণিজ্যসফল হয়েছিল। নিউ থিয়েটার্স থেকেই নীতিন বসু প্রথম প্লেব্যাক ব্যবহার করে ‘ভাগ্যচক্র’ ছবিটি পরিচালনা করেন। নিউ থিয়েটার্সের কৃতিত্বেই বাংলা সিনেমায় বাঙালির নিজস্ব লক্ষণগুলি অস্ফুটভাবে চলচ্চিত্রায়িত হতে শুরু করে, যা ক্রমে বাংলা তথা ভারতীয় ছবির ইতিহাসকে বদলে দেয়।

Leave a Comment