“রবীন্দ্রনাথ এসব উত্তীর্ণ হয়ে অজরামর রইবেন তাঁর গানের জন্য”-‘এসব’ বলতে প্রাবন্ধিক এখানে কী বুঝিয়েছেন? কী কারণে রবীন্দ্রনাথ ‘অজরামর’ হয়ে থাকবেন

প্রাবন্ধিক যা বুঝিয়েছেন

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। সাহিত্যের এমন কোনো দিক নেই যেখানে তাঁর ‘দানের মাটি ‘সোনার ফসল’ ফলায়নি। তিনি যেমন উত্তম উপন্যাস লিখেছেন তেমনই তাঁর ছোটোগল্পগুলিও বিশ্বসাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। ছোটোগল্পে তিনি মপাসা চেখফকে ছাড়িয়ে গিয়েছেন। নাটকে যেমন তিনি যে-কোনো মিস্টিকের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন তেমনই কবিরূপেও তিনি বিশ্বজনের প্রশংসা অর্জন করেছেন। শব্দতত্ত্ব সম্বন্ধে তাঁর গবেষণার গভীরতা পণ্ডিতদের যেমন নির্বাক করে দিয়েছে তেমনই সত্যদ্রষ্টা হিসেবে তাঁর ব্যাখ্যান ভক্তজনের হৃদয় জয় করেছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রাজনৈতিক দূরদর্শিতা যুগ যুগ ধরে ভারতবাসীকে নবনব শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করবে বলেই প্রাবন্ধিকের বিশ্বাস। আবার, গুরুরূপে তিনি শান্তিনিকেতনে যে বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ করে গিয়েছেন, তার স্নিগ্ধ ছায়ায় বিশ্বজন একদিন সুখময় নীড় লাভ করবে, সে বিষয়েও কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। প্রাবন্ধিকের বিশ্বাস, রবীন্দ্রনাথ ‘এসব’ উত্তীর্ণ হয়েই অজরামর হয়ে রইবেন তাঁর সৃষ্ট গানের জন্য।

অজরামর হওয়ার কারণ

বিস্ময়কর প্রতিভার অধিকারী রবীন্দ্রনাথ। তাঁর কবিপ্রকৃতি সীমার সঙ্গে অসীমের, খণ্ডের সঙ্গে পূর্ণের, ব্যক্তিজীবনের সঙ্গে বিশ্বজীবনের চিরন্তন প্রবাহের মধ্যে প্রাবন্ধিক আকণ্ঠ ডুব দিয়েছেন এবং সেই অভিজ্ঞতাকে ব্যক্ত করেছেন। রবীন্দ্রনাথ উপন্যাস সাহিত্যে দেশ ও কাল, সময় ও সমাজ এবং ব্যক্তিমানস সম্পর্কিত হাজার জটিল সূত্রের উন্মোচন ঘটিয়েছেন। আমাদের জগৎ ও জীবনের নানা সমস্যা, অনুভূতি ও উপলব্ধি নিয়ে ছোটোগল্পের জগৎকে স্বতন্ত্ররূপে প্রতিষ্ঠা দিয়ে বাংলা গল্পের জনক হয়ে রয়েছেন। বাংলা নাটকের ক্ষেত্রে “যে-কোনো মিস্টিকের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন” তিনি। এইসব কিছুর ঊর্ধ্বে রবীন্দ্রনাথ বিরাজ করেন গানের জগতে।

সৈয়দ মুজতবা আলীর প্রশ্নোদৃত মন্তব্যটি শুনে ধারণা করা যায়, তিনি ইঙ্গিত করতে চেয়েছেন-বিশ্বকবি যদি সাহিত্যের অন্য কোনো শাখাতে কলম না চালাতেন তাহলেও তিনি সংগীতের শ্রেষ্ঠত্ব দিয়ে সাহিত্যজগতে নিজের আসনটি অটুট রাখতে পারতেন। রবীন্দ্রসৃষ্টির অনবদ্য মহার্ঘ হল সংগীত। বিশেষ করে রবীন্দ্রসংগীতের বাণীর মধ্যে রবীন্দ্রনাথের জীবন ও দর্শন, তাঁর সংগীতে সুরের মাদকতা, গীতিরসের মূর্ছনা ও শব্দচয়নে অখণ্ডতার প্রকাশ ঘটেছে-তাই কবি অজরামর।

Leave a Comment