শিক্ষাবিজ্ঞানের পরিধি আলোচনা করো

শিক্ষাবিজ্ঞানের পরিধি আলোচনা করো

শিক্ষাবিজ্ঞানের পরিধি আলোচনা করো

শিক্ষার পরিধির মতোই শিক্ষাবিজ্ঞানের পরিধিও সুবিস্তৃত, দর্শন, সমাজবিজ্ঞান, শারীরবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইতিহাস, মানসিক স্বাস্থ্যবিজ্ঞান, নৃতত্ত্ব, প্রযুক্তি ও পরিসংখ্যান প্রতিটি শাখাই শিক্ষাবিজ্ঞানের সঙ্গে সম্পৃক্ত।

আবার সমাজ ও ব্যক্তির মঙ্গলে মানুষের আচরণধারাকে নিয়ন্ত্রনের জন্য শিক্ষাবিজ্ঞান মনোবিজ্ঞানের সাহায্য নিয়েছে। উক্ত বিষয়গুলি শিক্ষাবিজ্ঞানকে কীভাবে সহায়তা করে থাকে, তা নিম্নে উল্লেখ করা হল-

মনোবিজ্ঞান

মনোবিজ্ঞান বা Psychology শিশুর আচরণের উপর বৈজ্ঞানিক গবেষণাধর্মী যেসকল সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা শিক্ষাক্ষেত্রে শিশুর সৃজনশীলতা, বুদ্ধি, মনোযোগ, ব্যক্তিত্ব, প্রভৃতি ক্ষেত্রে প্রয়োগ করেছে।

ইতিহাস

প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস, বৈদিক যুগ, মধ্যযুগ ও আধুনিক যুগের ইতিহাস শিক্ষাবিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত।

দর্শন

দর্শনের ভাববাদ, প্রয়োগবাদ, বাস্তববাদ, প্রকৃতিবাদ ইত্যাদি শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ণয়ে সাহায্য করে।

সমাজবিজ্ঞান

শিশুকে সমাজের উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে শিক্ষাব্যবস্থায় সমাজবিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্তি অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছে।

মানসিক স্বাস্থ্যবিজ্ঞান

দৈহিক ও মানসিক স্বাস্থ্য (Mental health) পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। মানসিক স্বাস্থ্য যাতে শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যাঘাত না ঘটায়, সেইজন্য একে শিক্ষার অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।

শারীরবিজ্ঞান

শিক্ষাবিজ্ঞানের পরিধিতে শারীরবিজ্ঞান অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। Healthy body makes a healty mind -অ্যারিস্টটলের মতে, শিশুর মনের সঙ্গে শিক্ষা ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

শিক্ষার অর্থনীতি

শিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রের সঙ্গে অর্থনীতির যোগসূত্র রয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে অর্থের প্রয়োজন। বাজেট, অর্থের চাহিদা ইত্যাদি জানতে হলে শিক্ষার অর্থনীতি বিষয়ক জ্ঞান থাকা আবশ্যক।

শিক্ষা প্রযুক্তি

আধুনিক যুগে শিক্ষাপ্রক্রিয়ায় প্রযুক্তির ব্যবহার বহুলপ্রচলিত। যথার্থ শিক্ষা প্রযুক্তির প্রয়োগের মাধ্যমে শিক্ষা পরিচালনা ও শিক্ষাদানের কাজকে অনেক বেশি যথার্থ করে তোলা সম্ভব, তাই শিক্ষা প্রযুক্তি বর্তমানে শিক্ষাবিজ্ঞান আলোচনার পরিধির অন্তর্ভুক্ত।

শিক্ষাদান পদ্ধতি

প্রাচীন কালে শিক্ষা ছিল মূলত শিক্ষককেন্দ্রিক। কিন্তু আধুনিক যুগের শিক্ষা হল শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক অর্থাৎ শিক্ষার্থীর চাহিদা, সামর্থ্য অনুযায়ী শিক্ষাদানের ব্যবস্থা রয়েছে। সেই অনুযায়ী নতুন নতুন শিক্ষাদান পদ্ধতি আবিষ্কৃত হচ্ছে। শিক্ষা বিষয়ে শিক্ষাদান পদ্ধতি সম্বন্ধে জ্ঞান অতি গুরত্বপূর্ণ।

জনসংখ্যা সম্পর্কিত শিক্ষা

আমাদের ভারতবর্ষ এক জনবহুল দেশ। জনসংখ্যাবৃদ্ধি আমাদের দেশের বিভিন্ন সমস্যার কারণ। তাই জনসংখ্যা সম্পর্কিত শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

শিক্ষা প্রশাসন, ব্যবস্থাপনা ও তত্ত্বাবধান

প্রথাগত, প্রথা বহির্ভূত ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির পরিচালনা সংক্রান্ত নীতি, প্রতিষ্ঠানের উন্নতি, প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধান, পরিদর্শন ইত্যাদি জানতে হলে এই বিষয়টিকে জানতে হবে।

পরিবেশ শিক্ষা

শিক্ষাক্ষেত্রে প্রাকৃতিক ও সামজিক উভয় পরিবেশ অতি গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার বিভিন্ন পরিবেশ কীভাবে নষ্ট হচ্ছে এবং পরিবেশকে কীভাবে স্বাভাবিক করা যায় সেই সম্পর্কে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী সকলকেই অবগত হতে হবে।

শিক্ষার মূল্যায়ন

যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বর্তমানে মূল্যায়ন ব্যবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। যেমন- নম্বরদান পদ্ধতির পরিবর্তে গ্রেড ব্যবস্থা চালু হয়েছে। প্রশ্নপত্র প্রস্তুত, যথাযথ মূল্যায়ন ও গ্রেডেশন কীভাবে করা হয়, নম্বরদান পদ্ধতির সংস্কার ইত্যাদি সম্পর্কে জানা যায় শিক্ষার মূল্যায়নের মাধ্যমে।

শিক্ষাক্ষেত্রে রাশিবিজ্ঞানের প্রয়োগ

বর্তমানে শিক্ষাক্ষেত্রে রাশিবিজ্ঞানকে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। বিশেষ করে শিক্ষা সংক্রান্ত গবেষণায় রাশিবিজ্ঞানের সাধারণ জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। কারণ রাশিবিজ্ঞান এখন কেবলমাত্র গণিতের বিষয় নয় শিক্ষাবিজ্ঞানেও একে ব্যবহার করা হচ্ছে।

সুতরাং বলা যায়, শিক্ষাবিজ্ঞানের পরিধিতে একাধিক বিষয় ও বহুমুখী জ্ঞান বর্তমানে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তাই শিক্ষাবিজ্ঞানের পরিধি বিস্তৃত ও পরিবর্তনশীল।

Leave a Comment