শৈলীবিজ্ঞান কাকে বলে? শৈলীবিজ্ঞান সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো

শৈলীবিজ্ঞান কাকে বলে? শৈলীবিজ্ঞান সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো
শৈলীবিজ্ঞান কাকে বলে? শৈলীবিজ্ঞান সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।
কোনো লেখকের লেখার শৈলীর ভাষাবিজ্ঞানসম্মত বিচারবিশ্লেষণকেই শৈলীবিজ্ঞান বলে। ইংরেজি ‘style’ শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ শৈলী। শৈলী সম্পর্কে যে শাস্ত্রে আলোচনা করা হয় তা হল শৈলীবিজ্ঞান। 
বাংলায় শৈলী সম্পর্কিত আলোচনা মূলত পাশ্চাত্য অনুগামী হলেও আমাদের মনে রাখতে হবে সংস্কৃত অলংকার শাস্ত্রের রীতিবাদের মধ্য দিয়ে আধুনিক শৈলীতত্ত্বের একটা প্রাথমিক ধারণা গড়ে উঠেছিল। পাশ্চাত্যের ‘শৈলী’ সম্পর্কিত আলোচনায় কবির ব্যক্তিত্ব বা স্বভাবধর্মকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বুফোঁ বলেছেন, ‘style is the man himself’ অর্থাৎ শৈলী হবে মানুষের আঙুলের ছাপের মতোই একেবারে নিজস্ব এবং স্বতন্ত্র। ফেদিনাঁ দ্য সোস্যুরের মতে শৈলীর দুটি দিক-সেগুলি হল ‘লাঙ্’ ও ‘পারোল’। ‘লাঙ্’ হল ভাষা ব্যবহারের একটি রূপ বা বিন্যাস, আর ‘পারোল’ হল ভাষা। শিল্পীর মূল ভিত্তি ‘লাঙ্’ হলেও, তার আশ্রয় যে ‘পারোল’ তা অনস্বীকার্য। আলোচনার ভিত্তিতে এ কথা বলা যায় শৈলী হল রচয়িতার সচেতন বা অচেতনভাবে সৃষ্ট এমন এক বিশেষ ভাষাগত উপায়, যার সাহায্যে তিনি পাঠকের অন্তরের সঙ্গে কাম্যসংযোগ যথাযথভাবে স্থাপন করতে পারেন। শৈলী একান্তভাবেই রচয়িতার ব্যক্তিগত বিষয়। ব্যক্তিভেদে চিত্রশিল্পীদের মধ্যে যেমন রঙের ব্যবহারের তারতম্য লক্ষ করা যায়, তেমনি রচয়িতাদের মধ্যেও ভাষা ব্যবহারের তারতম্য লক্ষ করা যায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, ‘কল্লোল’ যুগের লেখকদের রচনাশৈলী আর বঙ্কিমের রীতি যে স্বতন্ত্র হবে সেটা স্বাভাবিক তার কারণ কাল বা সময়ের পার্থক্য। আবার বিষয়ভেদে একই লেখকের শৈলীর পরিবর্তন ঘটে। বঙ্কিমের রোমান্সধর্মী উপন্যাস ‘কপালকুণ্ডলা’-র শৈলী আর ঐতিহাসিক উপন্যাস ‘রাজসিংহ’-এর শৈলী এক হতে পারে না। শৈলী সম্পর্কে এককথায় কিছু বলা না-গেলেও, এটি নির্ধারণে ভাষা, নির্বাচন, আদর্শ গঠন ও বিচ্যুতি, প্রমুখন, সমান্তরালতার মতো দিকগুলিতে নজর দিতে হয়। এ ছাড়া মিখাইল বাখতিনের ‘বহুস্বরিতা’-র তত্ত্বটিও শৈলীবিজ্ঞানের আলোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।

Leave a Comment