![]() |
সোস্যাল মিডিয়াঃ ফেসবুক রচনা |
ভূমিকা
বিশ্বায়নউত্তর কালে প্রযুক্তির অগ্রগতিকে হাতিয়ার করে ফেসবুক আজ যোগাযোগের এক মাধ্যম রূপে বহুসংখ্যক মানুষের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। ফেসবুকের মাধ্যমে বহু মানুষ তাদের আকাঙ্ক্ষিত বিষয় সম্বন্ধে তথ্য আদান প্রদান করে যেমন সমৃদ্ধ হচ্ছে তেমনি এর কুফল ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার দ্বারা মানুষ প্রতারিত হচ্ছে।
ফেসবুক কী
ফেসবুক হল সামাজিক যোগসূত্র রূপ এক প্রক্রিয়া-যার উদ্ভব ৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৪-এ ক্যালিফোর্নিয়ার মেনলো পার্কে (Menlo Park)। এর প্রতিষ্ঠাতারা হলেন- Mark Zuck- erberg, Eduardo Saverin, Andrew Mccollum, Dustin Moskovitz, Chris Hughes। ফেসবুক ব্যবহারকারীর বয়স অন্তত ১৩ বছর হতে হবে, তবে বয়সের প্রমাণপত্রের প্রয়োজন নেই। তাই যে কেউ ইচ্ছা করলেই ফেসবুক গ্রহণ করতে পারে। এ পর্যন্ত ১.২৮ বিলিয়ন মানুষ এই পরিষেবা গ্রহণ করেছে (মার্চ, ২০১৪ পর্যন্ত)।
সুবিধা
বিশ্বায়নের পর শুধু নিজের দেশের কথা বা বিষয় নয়, বিশ্বের নানান বিষয় আজ ফেসবুকের মাধ্যমে আয়ত্তের মধ্যে এসে গিয়েছে। যাঁরা প্রত্যক্ষভাবে মানুষের সঙ্গে মিশতে পারেন না তাঁরা ফেসবুকের মাধ্যমে অপরের সঙ্গে মিশতে পারেন-তাদের সুখ-দুঃখের শরিক হতে পারেন। তাই ফেসবুকের বৈচিত্র্যও যথেষ্ট। গান, খেলাধূলা, রাজনীতি, ধর্মীয় বিষয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সমালোচনা-যে কোনো বিষয়ই ফেসবুকের মাধ্যমে আয়ত্তে আনা সম্ভব। বিশেষ করে পরস্পরের মত বিনিময়ের ক্ষেত্রে ফেসবুক অন্যতম মাধ্যম। এখন তো বন্ধুত্ব, বিবাহ প্রভৃতির সন্ধান ফেসবুকের মাধ্যমেই বহু মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ তাঁদের বক্তব্যকে ভোটারদের কাছে পৌঁছে দিতে ফেসবুককে মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করছেন এবং এ ব্যাপারে তাঁরা সাফল্যও পাচ্ছেন। বেকারদের চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে কিংবা কোনো বিষয়ের খবর জানার প্রয়োজনে কিম্বা তথ্য আদান-প্রদানের জন্য ফেসবুক এক অন্যতম মাধ্যম।
ব্যবহার
বিজ্ঞাপনদাতাদের ক্ষেত্রে ফেসবুক অন্যতম হাতিয়ার। বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছ থেকে প্রচুর রাজস্ব লাভও হয়েছে-যা ২০১০ সালে ১৫৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এশিয়ায় প্রথম হায়দ্রাবাদ শহরে ২০১০ সালে ফেসবুক প্রবর্তিত হয়। জানুয়ারি ২০১৩ পর্যন্ত ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা আমেরিকায় ১৬৮.৮ মিলিয়ন, ব্রাজিল ৬৪.৬ মিলিয়ন, ভারত ৬২.৬ মিলিয়ন, ইন্দোনেশিয়া ৫১.৪ মিলিয়ন, মেক্সিকো ৪০.২ মিলিয়ান। অন্যদিকে চিন, ইরান, পাকিস্তান, সিরিয়া, উজবেকিস্তান, ভিয়েতনাম, কুর্দিস্তানে ফেসবুকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আবার জুলাই, ২০১১-তে জার্মানিতে এক হামবুর্গ মেয়ে তার ১৬ বছরের জন্মদিনে নিমন্ত্রণ এর খবর ফেসবুকে দেওয়ার পর ১৬০০ অতিথি এসেছিলেন-যার জন্য একশ পুলিশ মোতায়েন করতে হয়েছিল। এমনকি ইংল্যান্ডে অফিসে যাঁরা কাজ করেন তাঁদের ৪৩ শতাংশ কর্মচারি ফেসবুক ব্যবহারের ফলে তাঁদের উৎপাদন ক্ষমতা কমিয়ে ফেলেছেন।
সুফল
ফেসবুকের সুফল যথেষ্ট। যাদের বিদেশে বা দূরে প্রিয়জনরা থাকেন তারা ফেসবুকের মাধ্যমে প্রিয়জনের সঙ্গে কথা বলতে, সরাসরি দেখতে এবং মত বা খবর আদান-প্রদান করতে পারেন। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে, বিভিন্ন খবর পাওয়ার ক্ষেত্রে, বন্ধু তৈরি করে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিতে, পরস্পরের মানসিকতা, রুচি, চাহিদা জানতে বা আদান-প্রদান করতে ফেসবুকের জুড়ি মেলা ভার। বিশেষ করে যেখানে ফেসবুকের মাধ্যমে পরস্পরের যোগাযোগ করা বেশ সুবিধাজনক হয়ে উঠেছে।
কুফল
ফেসবুকের অসুবিধা ও কুফলের দিকটিও নজরে আসছে। যেমন, ফেসবুক আজকাল নকল বেরুচ্ছে এবং একে মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করে কিছু সমাজবিরোধী কিম্বা দুষ্টচক্র বহু মানুষকে প্রতারিত করছে। এমনকি আলাপ জমিয়ে আলাপকারীর ফটো নিয়ে তা অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার খবরও পাওয়া যাচ্ছে। তাছাড়া মানুষ ক্রমশ যান্ত্রিক হয়ে পড়ছে এবং বাস্তব থেকে সরে গিয়ে নিজস্ব এক ভ্রান্ত জগৎ নির্মাণ করে আত্মসুখ পেতে চাইছে-যা একদিন অনেকের কাছে অভিশাপ হয়ে দাঁড়াবে। সেইসঙ্গে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের কেউ কেউ অত্যধিক ফেসবুক নির্ভর হয়ে ক্লান্তি, হতাশা ও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে।